ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো প্রয়োজন ॥ তোফায়েল

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৪ জুলাই ২০১৮

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো প্রয়োজন ॥ তোফায়েল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রফতানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেছেন, দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীন সহযোগিতা করছে। তবে দেশটির সহযোগিতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। বাণিজ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূর ঝাং জু বলেছেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বেশকিছু বাধা রয়েছে। এসব বাধা দূর করা গেলে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ আরও বাড়বে। এছাড়া বাংলাদেশী পণ্যেরও বড় বাজার হতে পারে চীন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ওয়ার্ল্ড এনার্জি কাউন্সিল বাংলাদেশ চ্যাপ্টার আয়োজিত বাংলাদেশ-চায়না বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও চ্যালেঞ্জসমূহ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনটির চেয়ারম্যান রিক হক শিকদারের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর রন হক শিকদার, বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, হাসান মাহমুদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চীনা রাষ্ট্রদূর ঝাং জু। তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাস্তবমুখী পদক্ষেপে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। স্বল্প আয়ের দেশ থেকে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ বিলিয়ন ডলার। এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অন্যান্য দেশের সঙ্গে চীনের সহযোগিতা বড় প্রয়োজন। তিনি বলেন, দেশটি বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশের সড়ক, ব্রিজ, রেলওয়ে, বিদ্যুত ও জ্বালানি ও সেবাখাতে দেশটি বিনিয়োগ করেছে। চীনা সরকারের পাশাপাশি দেশটির বেসরকারী খাতের বিনিয়োগও প্রয়োজন। চীনা রাষ্ট্রদূত ঝাং জু বলেন, বাংলাদেশ সরকার বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগকারীদের আরও অনুকূল পরিবেশ ও সুযোগ দেয়ার চেষ্টা করছে। সরকার আশা করে, চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াবেন। বাংলাদেশ একটি বড় বাজার। বাংলাদেশ আশা করে, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের এই বড় বাজারের সুপ্তশক্তি কাজে লাগাবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি দেশটির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। আগামী বছর থেকে বাংলাদেশী রফতানি পণ্যের ওপর কর বসানো হতে পারে। শুধু তাই নয়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিনিয়োগে শুল্ক ও অশুল্কজনিত যেসব সমস্যা ও বাধা রয়েছে তাও দূর করা প্রয়োজন। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি দূর করতে হলে বাংলাদেশের রফতানি বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত উচ্চপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করা। পণ্যমানকে সবসময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। স্থানীয়দের সঙ্গে আত্মার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে এবং এ সম্পর্ক হতে হবে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে। এভাবে বিদেশে বিনিয়োগের সাফল্য অর্জিত হতে পারে। প্রসঙ্গত বাংলাদেশে চীনের বিভিন্ন আকারের বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও, অনেক সরকারী মাঝারি ও বৃহৎ উদ্যোগ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এসব কোম্পানির মাধ্যমে চীনা প্রযুক্তিও এদেশে এসেছে। নসরুল হামিদ বিপু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুত। এজন্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। দেশের প্রতিটি মানুষ যাতে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আসে সেজন্য কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে এখন আর লোডশেডিং নেই। তবে অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগের জন্য আমাদের আরও বিদ্যুত প্রয়োজন। ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যুত খাতে চীনের বিনিয়োগ রয়েছে। তবে দেশটি এখাতে আরও বিনিয়োগ বাড়াতে পারে। হাসান মাহমুদ বলেন, পরিবেশবান্ধব বিদ্যুত উৎপাদন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে সৌরবিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ হতে পারে। বর্তমান সরকার এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে কাজ করছে। রিক হক শিকদার বলেন, বাংলাদেশ-চীনের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে উভয় দেশ লাভবান হতে পারে। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে ইতোমধ্যে দেশে চীনের বিনিয়োগ আসা শুরু হয়েছে। বিদ্যুত জ্বালানিসহ অবকাঠামো খাতে চীনের বড় অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন।
×