ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ প্রচারে এগিয়ে, অনেকটা পিছিয়ে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৪ জুলাই ২০১৮

আওয়ামী লীগ প্রচারে এগিয়ে, অনেকটা পিছিয়ে বিএনপি

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ দল কিংবা জোট থেকে কোন বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকায় আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বরিশালে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ১৪ দলীয় জোটের একমাত্র প্রার্থী। ইতোমধ্যে ১৪ দলের পক্ষ থেকে সভা করে সাদিক আব্দুল্লাহকে সমর্থন দেয়া হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু না হলেও ১৪ দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা নৌকা মার্কার শতভাগ বিজয় নিশ্চিতের জন্য কৌশলে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। নগরী সংলগ্ন বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুরে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের আয়োজনে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত ২ জুলাই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মূলত ওই সভা ছিল সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে নেতাকর্মীদের একযোগে কাজ করার দিকনির্দেশনা। পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী) আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাবেক সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম, সহ-সভাপতি সাহান আরা বেগম, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস এমপি, পঙ্কজ নাথ এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর, সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পৌর মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপন প্রমুখ। সভার প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, খুলনা ও গাজীপুরের মতো বরিশালের ভোটারদের মন জয় করে নৌকার বিজয় আনতে হবে। নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। অন্যদিকে প্রচারে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। এক ধরনের অস্বস্তির মধ্যে থাকা সরোয়ারপন্থী বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিজ দলের স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের তিন নেতা এখনও তার (সরোয়ার) সঙ্গে ‘হাত মেলাননি’। ওই তিন নেতা নির্বাচনেও প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়া থেকে শুরু করে যাচাই-বাছাই পর্যন্ত ওই তিন নেতার কাউকে সরোয়ারের পক্ষে দেখা যায়নি। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিলেও জোটের আরেক দল খেলাফত মজলিশ তাদের প্রার্থী দিয়ে রেখেছে। তাই সব দিক ঠিক করে এখনও সরোয়ারের পক্ষে পুরোদমে প্রচার মাঠে নামা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে গত ২৯ জুন জেলা ও মহানগর ১৪ দলের এক সভায় নৌকার মাঝি সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৪ দলের নেতাকর্মীরা সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে প্রচার শুরু করেন। গত ৩০ জুন সাদিকের পক্ষে বৈঠক করেন তার মা কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগ নেতা সাহান আরা বেগম। জেলা ও মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীদের নিয়ে তিনি বৈঠকটি করেন। সেখানে সবাই সাদিক আব্দুল্লাহকে মেয়র নির্বাচিত করতে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। এরপর তার পক্ষে কৌশলে বিভিন্ন ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতারা ঘরোয়া বৈঠক করে প্রচারে নেমেছেন। গত ১ জুলাই প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় নেতাকর্মীদের নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে হাজির হন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহ। এরপর তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তবে বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যাননি। মহানগর এলাকায় কিছু নেতাকর্মী নিয়ে দু-একটি সভা করতে দেখা গেছে সরোয়ারকে। তিনি বাইরেও খুব একটা বের হন না। তবে বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিএনপির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতার সঙ্গে আলোচনা চলছে। তারা সবাই সরোয়ারের পক্ষে মাঠে নামলেই নির্বাচনী কার্যক্রম প্রাণ ফিরে পাবে। ওই তিন নেতা হলেন বর্তমান মেয়র আহসান হাবীব কামাল, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন। এর বাইরে জামায়াতে ইসলামী সরোয়ারের পক্ষে রয়েছে। আর খেলাফত মজলিশ মনোনীত প্রার্থী তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহীন বলেন, নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ না হওয়ায় তারা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারে না নামলেও কৌশলে তাদের প্রচার অব্যাহত রয়েছে। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতারা বলেন, ২০০৮ সালে সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত শওকত হোসেন হিরণ মেয়র নির্বাচিত হয়ে বরিশাল মহানগরীতে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে হিরণ পরাজিত হলেও পাঁচ বছর আগের নির্বাচনে তিনি যত ভোট পেয়েছিলেন, হেরে গেলেও তার চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছিলেন। সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, ২০১৩ সালে বিজয়ী বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের মেয়র হিসেবে ভূমিকা খুব একটা সুখকর নয়। বিএনপির নেতাকর্মীরাই মনে করছেন, কামাল মেয়র হিসেবে সফল ছিলেন না। ২০১৪ সালে হিরণের মৃত্যুর পর মহানগর আওয়ামী লীগের হাল ধরেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির জেষ্ঠ পুত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। বেশ অল্প সময়ে দলমত নির্বিশেষে তিনি (সাদিক) বরিশাল নগরবাসীর আস্থা অর্জনে সক্ষম হন। ফলে মেয়র পদ পুনরুদ্ধারে তার ওপরই ভরসা রেখেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিএনপিও সাদিক আব্দুল্লাহকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে ধরে নিয়েছেন। ফলে বর্তমান মেয়র বা অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মনোনয়ন দিলে নগর পিতার আসনটি ধরে রাখা যাবে কি না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল বিএনপিতে। তাই দলের পরীক্ষিত নেতা মজিবর রহমান সরোয়ারের হাতেই তুলে দেয়া হয়েছে ধানের শীষ প্রতীক। বিএনপির প্রার্থীর মতবিনিময় ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করা দেশের মানুষ আজ হিরক রাজার দেশে বাস করছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে গণতন্ত্র, প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে গণতন্ত্রের চেতনা থেকে সরে আসছে। মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার আগামী ৩০ জুলাই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ মুক্তির আন্দোলনে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান করেন। চমক দেখাতে চায় ইসলামী আন্দোলন ॥ সম্প্রতি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলাফলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পরই চলে এসেছে ৩১ বছর বয়সী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নাম। এই দলটি সিটি কর্পোরেশন ও স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটে চমক সৃষ্টি করেছে। সদ্য শেষ হওয়া গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ফলাফলে দলটির অবস্থান তৃতীয়। দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাই প্রক্রিয়া শেষে মনোনয়ন জমা দেয়া ১১৪ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ঋণ খেলাপির দায়ে মাত্র দুইজনের মনোনয়নপত্র প্রাথমিকভাবে বাতিল করা হয়েছে। ইসি সচিবের মতবিনিময় ॥ আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রে দল নিরপেক্ষ ও দক্ষ ব্যক্তিদের প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
×