ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শীঘ্র ব্যাংকে সুদের হার এক ডিজিটে নেমে আসবে

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৪ জুলাই ২০১৮

শীঘ্র ব্যাংকে সুদের হার এক ডিজিটে নেমে আসবে

সংসদ রিপোর্টার ॥ সরকার থেকে ব্যাংক ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করা হয় না। তবে ব্যাংক মালিকদের সঙ্গে মাঝে মাঝে আলাপ আলোচনা করি। কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকি। তবে ব্যাংক ভেন্ডর বা মালিকরা সুদের হার এক ডিজিটে আনার তারিখ দিয়েছেন। সেটা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি, কিছুটা হয়েছে। তবে সত্বরই সেটা পুরোপুরি কার্যকর হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর গাজীর স¤ úূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আরও জানান, ব্যাংকগুলো নিজেরাই ঠিক করেছেন ঋণের সুদের হার এক ডিজিটে নিয়ে আসবেন। এখন পর্যন্ত পুরোপুরি কার্যকর হয়নি, কিন্তু কিছুটা হয়েছে। এমপিওভুক্তিতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রসঙ্গে একাধিক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্তকরণ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, এমপিওভুক্তির মতো একটি খারাপ কার্যক্রম আমরা এক সময় গ্রহণ করেছিলাম, এখনও তা চালিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষার মানোন্নয়নে এটি মোটেও একটি ভাল কার্যক্রম নয়। বরং এমপিওভুক্তির পরিবর্তে শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম করতে পারলে তা অধিক ভাল হবে। তবে বাজেটে এমপিভুক্তির জন্য বাজেট দেয়া আছে, অনেকেই পাবেন। ব্যাংকের সুদের হার এক ডিজিটে নামিয়ে আনার প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আরও জানান, ব্যাংকগুলো কিছু দাবি দাওয়া দিয়েছে তাদের টাকা পয়সা ডিপোজিট দেয়ার জন্য। এরই মধ্যে কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছি। এখন বেসরকারী ব্যাংকে যথেষ্ট টাকা পয়সা জমা দিতে পারেন। সরকারী ব্যাংকগুলোকে বলেছি তারাও যেন সুদের হার একটু কমাতে পারে। আমরা যতটুকু করতে পারছি তা করছি। আশা করছি ব্যাংকগুলো যেটা অঙ্গীকার করেছে সেটা সত্বরই পুরো কার্যকর হবে। অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার মানুষের মধ্যে কর ভীতি কমাতে সক্ষম হয়েছে। এতে করদাতার সংখ্যা এখন ৩৩ লাখে উন্নীত হয়েছে, এটা আমাদের একটা বড় অর্জন। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে দেশের নতুন প্রজন্ম যাদের বয়স ৪০ বছরের নিচে তাদের কর প্রদানের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সরকার কর আদায় বৃদ্ধিতে প্রতি উপজেলাতে একটি করে কর অফিস স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে। গভীর রাতে লেনদেন কঠোর নজরদারিতে ॥ রাত ১২টার মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (বিকাশ, রকেট ইত্যাদি) এর মাধ্যমে লেনদেন বন্ধ রাখার কোন পরিকল্পনা নেই। তবে গভীর রাতে যে সকল এজেন্ট বা গ্রাহকের মোবাইল হিসেবের মাধ্যমে লেনদেন হয় সে সকল হিসাব কঠোর নজরদারির অধীনে রয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ প্রবাহ কমছে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এ কে এম রহমততুল্লাহর অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা সত্য নয়। মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারী খাতের ঋণপ্রবাহ কমে যাচ্ছে না, বরং বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময়ই অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান-সহায়ক এবং বিনিয়োগবান্ধব মুদ্রানীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে। বেসরকারী খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৩ সালের জুন থেকে বেসরকারী খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেসরকারী খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ২০১৩ অর্থবছরে শতকরা ১০ দশমিক ৮৫ ভাগ হতে পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে চলতি অর্থবছরের এপ্রিল শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৬৫ ভাগ। বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে অর্থবছর ২০১৭ এর জিডিপির উচ্চ প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। তিনি জানান, ওই অর্থবছরের মোট বিনিয়োগের শতকরা ৭৫ দশমিক ৭ ভাগই বেসরকারী বিনিয়োগ। জিডিপির মোট বিনিয়োগ ২০১৬ অর্থবছরে শতকরা ২৯ দশমিক ৭ ভাগ হতে বৃদ্ধি পেয়ে অর্থবছর ২০১৭ এ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৫ ভাগ। একই সঙ্গে সরকারী বিনিয়োগও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৩ এর শতকরা ৬ দশমিক ৬ ভাগ হতে ২০১৭ এ জিডিপির ৭ দশমিক ৪ ভাগে দাঁড়িয়েছে। কাজেই মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারী খাতে ঋণের প্রবাহ কমে বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে না। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের আওতায় সরকার প্রায় ৩৬৭ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করেছে। এর আগের অর্থবছরে এর আয় ছিল প্রায় ২৩৪ কোটি টাকা। অপর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। উক্ত লক্ষ্যমাত্রায় আদায় হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা।
×