ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে ১০টি বৃহৎ উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৪ জুলাই ২০১৮

দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে ১০টি বৃহৎ উদ্যোগ

(শেষাংশ) গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচী মজুরির বিপরীতে খাদ্য প্রদানের মাধ্যমে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এই কর্মসূচী চালু করেছিল। গ্রামের দরিদ্র লোকজন অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ যেমন- গ্রামের রাস্তা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, খাল ও পুকুর খনন ও পুনঃখনন অথবা নদী/বাঁধ অথবা সেচ নালা অথবা আবদ্ধ পানি অপসারণের জন্য নালা সংস্কার এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ ভরাট এই কর্মসূচীর আওতায় বাস্তবায়ন করে। এই কর্মসূচীর মূল লক্ষ্য হচ্ছে গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত খাপ খাওয়ানো, সামাজিক ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহায়তা করা (ক) গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি (খ) গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের আয় বৃদ্ধি (গ) দেশের সর্বত্র খাদ্য সরবরাহের ভারসাম্য আনয়ন (ঘ) দারিদ্র্য বিমোচনে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি এবং (ঙ) নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে জৈব জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা কমানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামগ্রিক জীবনমানের উন্নয়ন। গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষাণাবেক্ষণ কর্মসূচী টিআর কর্মসূচী হিসেবে বহুল পরিচিত কর্মসূচীর লক্ষ্য হচ্ছে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচীর অধীন পল্লী অঞ্চলের বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা। ক্ষুদ্র প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামোসহ সড়ক, ধর্মীয়, সামাজিক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেরামত ও সংরক্ষণ এবং জনগণের প্রয়োজনীয় অন্যান্য গ্রামীণ কার্যক্রম পরিচালনা এই কর্মসূচীর বিশেষ লক্ষ্য। এই কর্মসূচী গ্রামীণ ও অনগ্রসর এলাকার দরিদ্র জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। গ্রামীণ বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রতিবছর সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রাণালয়ের মাধ্যমে এই কর্মসূচীতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়। এই প্রকল্পে দিন মজুরের মোট কাজের ভিত্তিতে গম/চাল বরাদ্দ প্রস্তুত ও নির্ধারিত হয়। নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রয়াস কর্মসূচী “জয়িতা” নারীমুক্তির একটি মহৎ স্বপ্নের নাম। শেখ হাসিনার অনবদ্য সৃষ্টি। জয়িতা উদ্যোগের প্রণেতাগণ বিশেষ করে ব্যবসা ক্ষেত্রে নারীর বিজয়ের স্বপ্ন দেখেন। ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে সরকারের অর্থায়নে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ‘‘জয়িতা’’ শীর্ষক একটি কর্মসূচি পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন শুরু করে। কর্মসূচীটির মেয়াদ ছিল তিন বছর। কর্মসূচী শুরুর অব্যবহিত পরেই ‘জয়িতা’ কেন্দ্রীক নারীমুক্তির স্বপ্নটিকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর “জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ” নামে একটি অভিনব কার্যক্রমের সূচনা করে। জয়িতা ফাউন্ডেশন নিজে ব্যবসা করে না, নারী উদ্যোক্তাগণ এখানে জয়িতা-র প্লাটফর্মে প্রত্যক্ষভাবে ব্যবসা করেন। জয়িতা ফাউন্ডেশন পরিকাঠামোগত সুবিধাদিসহ নারী উদ্যোক্তাদেরকে ব্যবসা পরিচালনায় ও পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় জ্ঞান-দক্ষতা প্রদান করে। ক্ষেত্রবিশেষে পুঁজি যোগানের ক্ষেত্রে ঋণ সহায়তা প্রদান করে। ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অনুসারে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। বর্তমান সরকারের জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপগুলোর অন্যতম এই ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী । ২০১০ সালে ৬ মার্চ এ কর্মসূচী কুড়িগ্রাম থেকে শুরু হয়েছিল। এ কর্মসূচীর আওতায় ১৮ থেকে ৩৫ বয়স বয়সী বেকার নারী ও পুরুষদের তিনমাসব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, এ সময় তাদের প্রতিদিন ১০০ টাকা করে ভাতা দেয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের ২ বছরের জন্য বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অস্থায়ী ভিত্তিতে দৈনিক ২০০ টাকা ভাতায় নিয়োগ দেয়া হয়। বেকারত্ব নিরসনকল্পে সরকার গৃহীত এই ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি বর্তমানে দেশের ৩৭টি জেলার ১২৮টি উপজেলায় সম্প্রসারিত হয়েছে। কর্মসূচীর আওতায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৯৬ জন বেকার যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণ এবং ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৬১ জনকে অস্থায়ী ভিত্তিতে কর্মে নিয়োজিত করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি এবং বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকার সময়োপযোগী ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচী চালু করা হয়েছিল। এছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশরূপে গড়ে তোলার যে প্রত্যাশা আছে সরকারের তা এ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে অনেকটাই এগিয়ে যাচ্ছে। বিকশিত শিশু ॥ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ কর্মসূচী সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর আওতায় দেশের ভবিষ্যৎ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির অন্যতম পন্থা হল শিশুদের ওপর কাঙ্খিত মাত্রায় সরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করা। ভবিষ্যতে একটি দক্ষ শ্রমশক্তি সৃষ্টি এবং নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য এ বিনিয়োগ পর্যায়ক্রমে আরো বৃদ্ধি করতে হবে। বাল্যবিবাহ, কিশোরী গর্ভধারণ, শিশুদের ওপর বর্ধিত বিনিয়োগ এসব সমস্যার সমাধানসহ শিশুর দারিদ্র্য বিমোচন, শিশুশ্রমের অবসান, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, উন্নত মানের স্বাস্থ্যসেবার যোগান, অপুষ্টি দূরীকরণ, মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া রোধ সহিংসতা ও নির্যাতনসহ বিভিন্ন ঝুঁকির মধ্যে থাকা শিশুদের উদ্ধার ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহনের জন্য বিকশিত শিশু: সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ শীর্ষক বাজেট প্রতিবেদনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫ টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে ৬৫হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে শিশু বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে শিশু উন্নয়নকে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাজেটের মূলধারায় আনয়ন করা হয়েছে। যা বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। প্রাচীনকাল থেকেই সমাজের দরিদ্র ও দুঃস্থ মানুষ ক্ষুধা, বেকারত্ব, নিরক্ষরতা ও রোগ-শোকের শিকার হয়ে এসেছে। একসময় তারা জীবনের এসব দুর্ভোগ ও বঞ্চনাকে ভাগ্যের লিখন বলে ধরে নিয়েছিল। ২য় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপে উদ্ভব হয়েছিল কল্যাণময়ী রাষ্ট্রের। সমাজে বেকারদের জন্য বেকারভাতা ও বৃদ্ধদের জন্য অবসর ভাতা চালু করা হয়েছিল। স্বাস্থ্য সেবা দেয়া শুরু হয়েছিল নামমাত্র মূল্যে। শিক্ষা ব্যবস্থাও পরিচালিত হয় রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির সাহায্যে। বদলে যেতে শুরু করে ধ্যান-ধারনা। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বাংলাদেশে ২৯টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৪৫টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী পৃথক পৃথকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। শেখ হাসিনার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর অংশ হিসেবে দারিদ্র্য বিমোচন এখন উন্নয়ন কর্মকা-ের কেন্দ্রে স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের এই সকল জনহিতকর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচী কল্পনাতীত বলে মন্তব্য করেছে বিদেশী গণমাধ্যম। ফলশ্রুতিতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পণ করেছে এবং আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর নির্বাচনী ইশতেহারে ক্ষুধা দারিদ্র্য দূরকরে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলা হয়েছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে পথেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। যার ফলে সরকারের আশা ২০৩০ সালের মধ্যেই দেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হবে। লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক Email: [email protected]
×