ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুদের হার এক অঙ্কে

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৪ জুলাই ২০১৮

সুদের হার এক অঙ্কে

ঋণ আমানতে সুদের হার এক অঙ্কে নেমে এসেছে। নতুন অর্থবছরের শুরুতে এই হার কার্যকর করা শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে। দীর্ঘদিন ধরে শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা ঋণের সুদহার এক অঙ্ক নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছেন। সরকার তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার জন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেছে। গত ২০ জুন সর্বশেষ বৈঠক থেকে ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় বেসরকারী ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস। একই দিন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সরকারী ব্যাংকগুলোর এক বৈঠকেও একই রকম সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে ব্যাংকগুলো শুধু শিল্প ঋণে নয় শতাংশ সুদ নেবে। আর তিন মাস মেয়াদী আমানতে সুদ দেবে সর্বোচ্চ ছয় শতাংশ। পর্যায়ক্রমে অন্যসব ক্ষেত্রে সুদহার কমানো হবে। বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংকগুলো সুদহার কমাতে আগ্রহী হবার কারণে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে এখনই সব ঋণের সুদহার কমানো হবে কিনাÑ সে বিষয়ে বলা হয়েছে, তা করা হবে না। আবার শুধু তিন মাস মেয়াদী নয়, সব ধরনের আমানতে সর্বোচ্চ ছয় শতাংশ সুদ নির্ধারণ না করলে আমানত সংগ্রহে অসম প্রতিযোগিতা দেখা দিলে মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে না। তবে এসব সিদ্ধান্ত হবে ব্যাংকগুলোর নিজ পরিষদে। ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ আমানতে কী রকম সুদ ঘোষণা করছে, তা স্পষ্ট হবে। কম সুদে আমানত পেলে পর্যায়ক্রমে অন্য ক্ষেত্রেও সুদহার কমে আসবে। সব ঋণে সুদ একক অঙ্কে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে সময় নেবে। গত এক বছর ধরে যে সব ব্যাংক এগারো শতাংশেরও বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ করেছে সেই সব ব্যাংক ইচ্ছে করলেও একক অঙ্কে ঋণ দিতে পারবে না বলে কতিপয় ব্যাংকার যে মন্তব্য করেছেন, তা আরও পর্যালোচনার দাবি রাখে। ঋণের সুদহার বিষয়ে ইতোমধ্যে কয়েকটি বেসরকারী ব্যাংক বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণাও শুরু করেছে। পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপন দিয়ে এই প্রচারণা করে তারা। তবে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবে কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ যে করছেন না, তা নয়। এছাড়া ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য ব্যাংকগুলো সরকারী ব্যাংকের অলস অর্থ সহজ শর্তে চাইছে। এজন্য তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দাবিও জানিয়ে এসেছে। ব্যাংকগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও ঋণের সুদ একক অঙ্কে আনার ঘোষণা চাইছে। সব মিলিয়ে ঋণের সুদহার কমানোর বিপরীতে বেসরকারী ব্যাংকগুলো বেশকিছু সুযোগ চাইছে। এমনটাও ধারণা করা হচ্ছে, যা সঙ্গত নয় যে, বেসরকারী ব্যাংকগুলো এসব সুবিধা না পেলে ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে আনবে না। যা সরকারী সিদ্ধান্ত এবং শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের দাবিকে উপেক্ষার নামান্তর। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এক গবর্নরের মতে, সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার উদ্দেশ্য সৎ হলেও সময় বেঁধে ঘোষণা দেয়া ঠিক নয়। হঠাৎ করে এক অঙ্কে সুদের হার নামিয়ে আনা সম্ভব নয়। দুই একটি ব্যাংক কমাতে পারলেও পুরো ব্যাংকিং খাতের জন্য এটি বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। অবশ্য তিনি এটাও বলেছেন, সুদহার কমলে বিনিয়োগ বেড়ে যাবে। নতুন করে উদ্যোক্তারা ঋণ চাইবে। তবে ঋণের সুস্থ ব্যবস্থাপনা করা না গেলে পুরো খাতে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এটা তো বাস্তব যে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিনিয়োগ চাঙ্গা রাখতে অবশ্যই দশ শতাংশের নিচে ঋণের সুদহার থাকা ভাল। কোন সংস্থা ইচ্ছেমতো সুদহার নির্ধারণ করলে তা ব্যাংকিংখাতে সুফল আনবে না। বরং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। ব্যাংকগুলোকে ঋণদানের ক্ষেত্রে যেমন সতর্ক হতে হবে, তেমনি ঋণ আদায়েও হতে হবে সক্রিয়। এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তা সাফল্য লাভ করবে এমনও আশাবাদ রয়েছে।
×