ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ৩ জুলাই ২০১৮

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা

স্বপ্ন দেখা আর স্বপ্ন ছোয়া মানুষগুলোর মাঝে যে ছোট একটা দেয়াল থাকে সেটা খুব কম মানুষই অনুধাবন করতে পারেন। যে মানুষটা সেই ছোট দেয়ালটাকে অতিক্রম করার সাহস রাখেন দিন শেষে তিনিই সাফল্যের গর্বিত হাসির একচ্ছত্র অধিপতি। সাফল্যের পর কেউ বা হারিয়ে যান, আবার কেউ বা সাফল্যের গল্পে তারুণ্যকে অনুপ্রেরণা যোগান। তেমনি একজন মানুষ মোঃ নজরুল ইসলাম। জীবনযুদ্ধে হার না মানা এই মানুষটার জীবনের গল্প নিয়েই আজকের আয়োজন। লিখেছেন- মাহির দীপন ছয় ভাই-বোনের সবার ছোট তিনি। ছোট বেলাতেই মাকে হারান। এরপর নিজের জগৎ-এ নিজের মতো করেই বেড়ে উঠতে থাকেন। লেখাপড়াতে ছিলেন অসম্ভব মেধাবী। কথা কম বলা সদা হাস্যোজ্জ্বল এই মানুষটির জীবনে সবচেয়ে বড় শিক্ষক ছিল তার চারপাশের পরিবেশ- প্রকৃতি। নিজের ইচ্ছে আর মানসিক শক্তির জোরে তিনি মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের গ-ি পেরিয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবড়মৎধঢ়যু ধহফ ঊহারৎড়হসবহঃ বিভাগে পড়ার সুযোগ তৈরি করে নেন। শিক্ষা জীবনে সফল এই মানুষটা কর্মজীবনেও বেশ সফল। নিজের অবস্থান থেকে করতে চেয়েছেন দেশের জন্য কিছু। স্বপ্ন ছিল বিসিএস। ২২তম বিসিএস-এ শিক্ষা ক্যাডারে ডাক আসে। এর পরেই ২০০৩ সালের নবেম্বরে ডাক আসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি তিনি। দেশের সেবা করার সুযোগটার জন্য বেছে নিলেন দেশের সর্বোচ্চ ব্যাংককেই। বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক হিসেবে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। পাশাপাশি অধ্যয়ন করছেন জার্মানির ফ্রাঙ্কফুট স্কুল অব ফাইন্যান্সের সার্টিফাইড এক্সপার্ট ইন রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত স্কলারশিপের আওতায় থাইল্যান্ডের এআইটিতে যান এবং সফলতার সঙ্গে এক বছর মেয়াদী প্রফেশনাল মাস্টার্স ইন ব্যাংকিং এ্যান্ড ফাইন্যান্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। সেখানে তাকে প্রচুর সহায়তা করেন শ্রীলঙ্কান সেন্ট্রাল ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর ডব্লিউ এ ভিজেবর্ধন। সেই সময়ে অনেকটা বদলে যায় তার চিন্তার ভুবন। মনের ভেতরের আরও অনেক কিছুই প্রকাশিত হয় সেই সময়টিতে। অনুভব করেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করার উপযুক্ত সময় এটাই। বেছে নেন তরুণদের। তাদের কথা মাথায় রেখেই ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘নজরুল’স ইনটিউশন’। সেখান থেকেই তিনি তরুণদের ট্রেনিং, ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং, স্টার্টাপ আইডিয়া শেয়ারিং, প্রতিযোগিতা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য দেশজুড়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এখান থেকেই তৈরি হচ্ছে আগামী দিনের ব্যাংকিং সেক্টরের নতুন কারিগর, নতুন কোন উদ্যোক্তা যারা এক সময় নিজের দেশকে সফলতার সঙ্গে উপস্থাপন করবেন বিশ্বের দরবারে। জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আসা এই মানুষটা বিশ্বাস করেন ব্যর্থতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার হাতিয়ার হলো নিজের ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম। এই দুইটি জিনিসের সমন্বয়ই পারে যে কোন বাধাকে দুমড়ে-মুচড়ে ছুড়ে ফেলতে। তরুণদের সঙ্গে বিভিন্ন সেমিনারে প্রতিটি সেশনেই তাদের নতুন কিছু ভাবতে শিখান তিনি। স্বপ্ন দেখান চেনা গ-ির বাইরে থেকে বের হয়ে ভিন্ন কিছু করতে। তার হাত ধরেই অনেক তরুণ আজ নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল। নিজের হাতে তৈরি করা এই তরুণদের সাফল্যের গল্পটাই তার সামনের দিকে ছুটে চলার গতিকে আরও আরও বাড়িয়ে দেয়। পড়ন্ত বিকেলে, নিজের জীবনের গল্পটা বলতে বলতেই হারিয়ে গিয়েছিলেন শৈশবে। নিজের জন্মস্থান ঝিনাইদহের সেই গ্রামে নিজের শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে করতেই মুখে ফুটে উঠল সেই পরিচিত হাসি, যে হাসি নতুন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায়। যে বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, ‘জ্বলে পুড়ে মরে ছাড়খার/তবু মাথা নোয়াবার নয়।’
×