ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হো ইফান-ফরিদা এদো

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৩ জুলাই ২০১৮

হো ইফান-ফরিদা এদো

হো ইফান দাবা খেলতে গিয়ে হো ইফানের কাছে রানীর চেয়ে বোড়ের গুরুত্ব বেশি। তার ভাষায়, বোড়ে যখন শেষ প্রান্তে পৌঁছায় তখন সে রাজা ছাড়া যে কোন কিছু হতে পারে। হো ইফানÑ দাবার জগতে মাত্র ১৪ বছর বয়সে কনিষ্ঠতম নারী গ্র্যান্ড মাস্টার। ১৬তে পা দিয়ে জিতে নেন নারী বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ। হো’র মতে, ‘আপনি যদি লক্ষ্য স্থির করে লেগে থাকতে পারেন, আপনি নিজেকেই অন্যরূপে আবিষ্কার করবেন।’ ২৪ বছর বয়সী হো-কে বলা হচ্ছে নারীদের মধ্যে দাবার জগতে সবচেয়ে বড় নাম। স্কুল পর্ব পেরনোর আগেই জিতে নিয়েছেন কয়েকটি বিশ্ব শিরোপা। অসাধারণ মেধাবী হো, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী নিয়েছেন বেইজিং-এর পেকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে রোডস স্কলার হিসেবে অধ্যয়নরত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। একজন ‘চাইল্ড প্রোডিগি’ হিসেবে তিনি যে কোন পেশা বেছে নিতে পারতেন, তবে সেক্ষেত্রে বঞ্চিত হতো দাবাবিশ্ব ও দাবা প্রেমীরা। হো কিন্তু সব সময় নিজের পথ নিজেই বেছে নিয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে আলোচনায় আসেন জিব্রালটারে এক দাবা প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের ম্যাচ বয়কট করে। তার অভিযোগ ছিল ছেলেদের পরিবর্তে তাকে মেয়েদের সঙ্গে অনেক বেশি ম্যাচ খেলতে হচ্ছে। অনেকের মতই তার ধারণা-এর কারণ লিঙ্গ বৈষম্য। তার সরল স্বীকারোক্তি, ‘প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বিষয়টি হয়ত আমার প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য সম্মানজনক ছিল না, কিন্তু ঐ মুহূর্তে এই বৈষম্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সেটাই ছিল একমাত্র উপায়।’ হো’র বিশ্বাস বড় কোন পরিবর্তনের জন্য আগে আত্মোন্নয়ন জরুরী। অনেকটা বোড়ের মতো। আপনাকে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে, মনে রাখবেনÑ আপনি একজন নায়ক। ফরিদা এদো তাকে বলা হচ্ছে উত্তর নাইজেরিয়ার ছোট্ট শহর কানোর জেন অস্টিন। যে শহরের জীবনে আসছে বড় ধরনের পরিবর্তন। বৈশ্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার রক্ষণশীল ইসলামিক সমাজে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। বোকো হারমের মতো জঙ্গী সংগঠনগুলোর আতঙ্কের থাবার নিচ থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে মানুষ। পরিবর্তনশীল সময়কে ধারণ করে মানুষ ঝুঁকে পড়ছে রোমান্টিক নভেল বা, ‘বুক অব লাভ’ এর দিকে। সস্তা, স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত এই পেপারব্যাকগুলো পাওয়া যায় কানোর যে কোন দোকানে, এমনকি হকাররাও বিক্রি করেন ফেরি করে। আর এই বইগুলো হয়ে উঠেছে কানোর সব শ্রেণী পেশার নারীদের জীবনযাপনের সঙ্গী। পরিবর্তনের এই ধারায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন হাউসা ভাষার লেখিকা, ৩২ বছর বয়সীÑ ফরিদা এদো। ইতোমধ্যে তার প্রকাশিত ছয়টি উপন্যাসের বিষয়বস্তু প্রেম, বহুগামিতা, প্রজন্মের ব্যবধান। তার উপন্যাসের বিষয়বস্তু সামাজিক বাস্তবতা থেকে ওঠে আসা। তিনি এমন এক সমাজে বাস করেন কুসংস্কারের শেকড় যেখানে বিস্তৃত মাটির অনেক গভীরে। বলা যায় অনিয়মই সেখানে নিয়ম। ফরিদা বলেন, ‘নারীরা এখন রোমান্টিক উপন্যাসের দিকে ঝুঁকে পড়েছে কারণ এর মাঝেই তারা খুঁজে ফিরছেন তাদের নিজের জীবনের পথ, মুক্তির পথ। তার এবং তার সমসাময়িকীদের লেখায় প্রতিফলিত কী করে পিতার বহুবিবাহ এবং অসংখ্য সন্তানের মাঝে টিকে থাকতে হয়, পরিবারে আগত নতুন বধূটির সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে। ব্যক্তি স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা সত্ত্বেও কী করে পারিবারিক বন্ধন বজায় রাখতে হয়। অত্যাচারী, অবিশ্বস্ত স্বামীর সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে। ‘প্রতিটি উপন্যাসের আছে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য। তুলে ধরা হয়েছে কিছু সমস্যার সমাধান। পাঠক এখান থেকে ইতিবাচক যা কিছু শিখবেন তার শুভ প্রভাব আমরা সমাজে দেখব’Ñ এভাবেই ফরিদা জানালেন তার মতামত। তার সাম্প্রতিক রচনা ‘দ্য বুক অব এ্যাশেস’ লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তার এক প্রতিবেশীকে দেখে। যে নারী তার বৈবাহিক জীবনের সমস্যা সমাধানে গিয়েছিল এক জুজু প্রিস্টের কাছে। তার বিশ্বাস ছিল, জুজু প্রিস্ট কালো জাদুর মাধ্যমে তার সমস্যার সমাধান করে দিতে পারবেন। সেই নারীকে আরও অনেকের মতই পরতে হয়েছে বিপর্যয়ের মুখে। ফরিদা তার লেখায়, চলমান সময়ের সামাজিক বাস্তবতার কথা বলেন। তিনি খুব ভাল করেই জানেন এই জুজু কবিরাজেরা আজ গোটা সমাজের জন্যেই হুমকিস্বরূপ। এদোর বইগুলো স্থানীয়ভাবে সস্তা কাগজে ছাপা। অদূর ভবিষ্যতে যে সেগুলো ইংরেজীতে অনূদিত হবে এমন কোন সম্ভাবনাও নেই। কিন্তু একথাও সত্যি হাউসা ভাষাভাষী ৩ কোটি নাইজেরিয়ানকে বলার মতো অনেক গল্পই এখনও বাকি আছে তারÑযে গল্পগুলো বদলে দেবে তাদের জীবন।
×