ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খেলাপী ঋণ সমস্যা সমাধানে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব এফবিসিসিআইর

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৩ জুলাই ২০১৮

খেলাপী ঋণ সমস্যা সমাধানে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব এফবিসিসিআইর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঋণের সুদ এক অঙ্কে নামানোর প্রধান বাধা নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) বা খেলাপী ঋণ। এ সমস্যা সমাধানে ব্যাংকিং খাতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সোমবার মতিঝিল ফেডারেশন ভবনে ব্যাংকের সুদের হার সম্পর্কিত বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। বর্তমানে ব্যাংক ঋণের গড় সুদের হার চীনে ৪.৩ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ৫.৩ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৬.২৫ শতাংশ, পাকিস্তানে ৮.২ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৭.০ শতাংশ, নেপালে ৭.০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৪.৫ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ৪.৮ শতাংশ। আর বাংলাদেশে এটা এতদিন দুই অঙ্কের কোটায় থাকলেও থেকে তা এক অঙ্কে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই প্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণ একটি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দীর্ঘদিন এ দুর্বিসহ বোঝা সুদের হার এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ এবং বিনিয়োগবান্ধব করতে এই খেলাপী ঋণ না কমানোর কোন বিকল্প নেই। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, গত ৯ জুন ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর এফবিসিসিআই আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের স্বার্থে ব্যাংকের সুদের হার একক অঙ্কে নামিয়ে আনার বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য এফবিসিসিআই থেকে মতামত ব্যক্ত করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ ব্যাংকের সুদের হার একক অঙ্কে নামিয়ে আনে, যা জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। তবে যেসব ব্যাংক তাদের সুদের হার এখনও একক অঙ্কে নামিয়ে আনতে পারেনি তাদের অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী একক অঙ্কে নামিয়ে আনার জন্য এফবিসিসিআই আহ্বান জানান। এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাকে আরও জোরদার করা প্রয়োজন। বিশেষ করে বড় অঙ্কের ঋণগুলো কমিয়ে আনার বিষয়ে কাঠামোবদ্ধ ব্যবস্থা নেয়া একান্ত জরুরী। এ সময় খেলাপী সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি। যে টাস্কফোর্স নন-পারফর্মিং লোনজনিত সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত করে তা সমাধানে সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন প্রণয়ন করবে। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থে এ সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শফিউল ইসলাম আরও বলেন, ঋণ খেলাপী দুই ধরনের হয়ে থাকে। এর মধ্যে কেউ ব্যবসায় মন্দার কারণে খেলাপী হয়। তাদের সহযোগিতা করতে হবে। আবার অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপী হয়। এই দুষ্টচক্রের কারণে ব্যাংকিং খাতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এ চক্রকে আমরা নৈতিকভাবে বয়কট করি। তাদের চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে একটি ‘স্বাধীন ব্যাংক কমিশন’ গঠনের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়াধীন। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা অর্থমন্ত্রী অতি দ্রুত একটি স্বাধীন ব্যাংক কমিশন গঠন করবেন। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের একটি বক্তব্য উল্লেখ করে শফিউল ইসলাম বলেন, বিশ্বব্যাংকে ট্রিলিয়নস মার্কিন ডলার বিনিয়োগের অপেক্ষায় পড়ে আছে। এ অর্থ বিনিয়োগের জন্য বিশ্ব ব্যাংক বিভিন্ন দেশে সুযোগ খুঁজছে। স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে দর কষাকষির মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থায়ন গ্রহণের ব্যবস্থা নেয়া হলে তা দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যবহার করা সম্ভব। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বেসরকারী খাতও এ অর্থ ব্যবহার করার সুযোগ পেলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে এফবিসিসিআই মনে করে। একক অঙ্কে ঋণের সুদহার ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় যেমন কমায়, তেমনি পার্শ্ববর্তী প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সহায়তা করে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের আর্থসামাজিক উন্নয়ন কর্মকা- আন্তর্জাতিক মহলে দারুণভাবে প্রসংশিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হবে। উন্নয়নশীল দেশ ও মধ্যম আয়ের মর্যাদা পাওয়ার ক্ষেত্রে দেশের বেসরকারী খাত সরকারের পাশাপাশি একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান।
×