ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ৮৩০০, সর্বোচ্চ ১১২০০ টাকা

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৩ জুলাই ২০১৮

রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ৮৩০০, সর্বোচ্চ ১১২০০ টাকা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প-প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। সর্বনিম্ন ৮ হাজার ৩০০ ও সর্বোচ্চ ১১ হাজার ২০০ টাকা করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন করা হয়। এছাড়া বিদ্যুত ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য বিদ্যমান একটি আইনের মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়িয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘বিদ্যুত ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন, ২০১৮’ এর খসড়ার চূড়ন্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে সভাপতিত্বে করেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প-প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। সর্বনিম্ন ৮ হাজার ৩০০ ও সর্বোচ্চ ১১ হাজার ২০০ টাকা করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মূল বেতন ২০১৫ সালের ১ জুলাই এবং ভাতা ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। মন্ত্রিসভা বৈঠকে জাতীয় মজুরি ও উৎপাদনশীলতা কমিশন-২০১৫ এর সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প-প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের মজুরি-স্কেল ও ভাতা অনুমোদন এবং ‘পণ্য উৎপাদনশীল রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প-প্রতিষ্ঠান শ্রমিক (চাকরির শর্তাবলী) আইন, ২০১৮’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সময়ে সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত শ্রমিকদের বেতন কাঠামো তৈরির জন্য মজুরি কমিশন গঠন করা হয় এবং কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে তাদের স্কেল নির্ধারণ করা হয়। এবারও তাই করা হয়েছে। ২০১০ সালের শ্রমিকদের জন্য স্কেল পরিবর্তন করার জন্য কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন তাদের প্রতিবেদন দাখিল করে এবং এর ভিত্তিতে সরকারী কর্মচারীদের ২০১৫ সালের বেতন স্কেলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৫ সালের মজুরি স্কেল প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি এবং বার্ষিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। ২০১০ সালে ১ নম্বর স্কেলে ৪ হাজার ১৫০ টাকা থেকে বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে ৮ হাজার ৩০০ টাকা, ২ নম্বর স্কেলে ৪ হাজার ২০০ টাকা থেকে দ্বিগুণ করে ৮ হাজার ৪০০ টাকা, ৩ নম্বর স্কেলে ৪ হাজার ২৭৫ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৮ হাজার ৫৫০ টাকা, ৪ নম্বর স্কেলে ৪ হাজার ৩৫০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৮ হাজার ৭০০ টাকা, ৫ নম্বর স্কেলে ৪ হাজার। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে মজুরি বোর্ডের স্থায়ী চার সদস্যের সঙ্গে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং শ্রমিক সংগঠনের একজন করে প্রতিনিধিকে যুক্ত করে মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু তখন বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই কমিটি পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন কাঠামো যাচাই-বাছাই করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেবে। এরপর সরকার পোশাক শ্রমিকদের নতুন বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করবে। ঠিক তার ছয় মাসের মাথায় এসে মন্ত্রিসভা তা অনুমোদন করেছে। এর আগে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর। তিন হাজার টাকা মূল বেতন ধরে ৫ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি ঠিক করা হয়েছিল তখন। নতুন কাঠামোয় ওই বেতন তারা পাচ্ছেন ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে। গত কয়েক বছরের মূল্যস্ফীতিতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। তাদের দাবি, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন হতে হবে ১৬ হাজার টাকা। প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলারের এই শিল্পে ৪০ লাখের মতো শ্রমিক জড়িত, যাদের অধিকাংশই নারী। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ হলেও মজুরি কাঠামো সব কারখানায় ঠিকমতো অনুসরণ করা হয় না বলেও অভিযোগ উঠেছে কখনও কখনও। ২০১২ ও ২০১৩ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন এবং সাভারে রানা প্লাজা ধসের প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের স্বল্প মজুরির বিষয়টি নতুন করে সামনে চলে আসে। পরে বিদেশী ক্রেতাদের চাপে বেশকিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়। পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে স্থায়ী মজুরি বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এবং জাতীয় শ্রমিক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও পোশাক খাতের উদ্যোক্তা এ কে আজাদ তখন বলেন, আমরা খুব ক্রিটিক্যাল সময় পার করছি। আমাদের ১৪ শতাংশ গ্রোথ হওয়ার কথা থাকলেও ৬ শতাংশ হয়েছে। অন্য দেশের গ্রোথ আমাদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে, কারণ আমাদের বেসিক ম্যাটেরিয়াল নেই, গভীর সমুদ্রবন্দর নেই। শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিলে আরও পিছিয়ে পড়ব। কিছু কিছু শ্রমিক সংগঠন শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরির চেষ্টা করছে অভিযোগ করে আজাদ বলেন, নতুন মজুরি বোর্ড ঘোষণার মধ্য দিয়ে আগামী দিনের সমস্যার সমাধান হবে, শ্রমিকদের অভুক্ত রেখে কারখানা চালাতে চাই না। তারা ভাল থাকলে উৎপাদন বাড়বে। বিদ্যুত ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য বিদ্যমান একটি আইনের মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়িয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘বিদ্যুত ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন, ২০১৮’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, মূল আইন ২০১০ সালে জারি করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, সময়ে সময়ে আইনের সময় বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০১০ থেকে ৮ বছর বাড়ানো হয়, যা আগামী ১১ অক্টোবর শেষ হয়ে যাবে। আরও তিন বছর বাড়ানোর জন্য সংশোধন করা হয়েছে। অর্থাৎ ২০২১ এর অক্টোবরে গিয়ে শেষ হবে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২৫ আগস্ট আইনের মেয়াদ তিন বছর বাড়ানো হয়েছিল।
×