ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বরিশাল সিটি নির্বাচন

সম্পদে এগিয়ে সরোয়ার পিছিয়ে সাদিক আবদুল্লাহ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৩ জুলাই ২০১৮

সম্পদে এগিয়ে সরোয়ার পিছিয়ে সাদিক আবদুল্লাহ

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিল করার পর যাচাই-বাছাইয়ে বাদপড়া দুইজন ব্যতীত বাকি ছয় প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে ধনী প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপি মনোনীত এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট এবং নগদ অর্থসহ বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক তিনি। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর তেমন কিছু নেই বললেই চলে। এ ছয় প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র বাসদ মনোনীত প্রার্থী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী। মেয়র হওয়ার লড়াইয়ে নামা ছয় প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, পেশাদার আইনজীবী। শিক্ষকতা পেশায় থাকা একমাত্র প্রার্থী তার পড়াশোনা শেষ করেছেন মাদ্রাসা শিক্ষায়। সূত্র মতে, আসন্ন ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। দলের যুগ্ম মহাসচিব এবং বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি সরোয়ার বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র। এছাড়া তিনি টানা পাঁচবার এমপি, জাতীয় সংসদের হুইপ এবং জেলা মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। এবার মেয়র পদে মনোনয়ন দাখিল করা সরোয়ারের হলফনামায় নিজের সম্পদের বর্ণনাসহ নানা তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থসম্পদ প্রশ্নে সরোয়ারের বার্ষিক আয় ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৯৮৮ টাকা। এছাড়া নগদ অর্থ রয়েছে ১০ লাখ। শেয়ার-বন্ডসহ এসব খাতে তার জমা টাকার পরিমাণ ৮৫ লাখ টাকা। দুটি প্রাইভেটকার এবং একটি জিপসহ তিনটি গাড়ি রয়েছে তার। হলফনামায় দেয়া তথ্যানুযায়ী এসব গাড়ির দাম ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া ৫০ তোলা সোনা এবং প্রায় ১৪ লাখ টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে এই বিএনপি নেতার। এগুলো হচ্ছে-৩২ বোর রিভলবার একটি, ৭ এমএম রাইফেল একটি এবং ২২ বোর রাইফেল একটি। মোট ৪.৬৩ একর জমি রয়েছে সাবেক এই মেয়রের। এর দাম ১৬ লাখ ৯ হাজার ৪২৬ টাকা। এছাড়া তিনটি ফ্ল্যাট ও একটি টিনশেড ঘরের মালিক তিনি। এসবের মূল্য তিন কোটি ১৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা। কোথাও কোন দায় দেনা কিংবা ঋণ নেই মজিবর রহমান সরোয়ারের। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ পেশায় একজন ব্যবসায়ী। বাড়ি ভাড়া, ব্যবসা এবং বেতন বাবদ বছরে তার মোট আয় ছয় লাখ ১৫ হাজার ৪০০ টাকা। নগদ জমার পরিমাণ ছয় লাখ ৮১ হাজার। এছাড়া সঞ্চয়পত্র আছে দুই লাখ টাকার। রি-কন্ডিশন্ড একটি মাইক্রোবাস আছে সাদিক আব্দুল্লাহর। সম্পদ বলতে রয়েছে রাজউকের পূর্বাঞ্চলে একটি আবাসিক প্লট এবং ঢাকার নিকেতনে একটি ফ্ল্যাট। দায়দেনা কিংবা কোন প্রকার ঋণ নেই বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের। এছাড়া নেই কোন আগ্নেয়াস্ত্র। চরমোনাই পীরের সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব। মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করা মাহবুবের বার্ষিক আয় দুই লাখ ১৬ হাজার ৬০০ টাকা। একটি যানবাহন ও আট তোলা স্বর্ণ, দুটি ফ্রিজ এবং একটি বন্দুক রয়েছে তার। ছয় শতক অকৃষি জমিসহ টিনশেড একটি ঘর রয়েছে এ মেয়র প্রার্থীর। কোন দায়দেনা বা ঋণ নেই। সিপিবির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন পেশায় আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ। আইন পেশায় বছরে তার আয় দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা। নগদ জমা রয়েছে ১১ লাখ ২০ হাজার। সাত ভরি স্বর্ণ থাকলেও কোন দায়দেনা ঋণ কিংবা জমিজমা নেই। খেলাফত মজলিশের মনোনীত প্রার্থী একেএম মাহবুব আলমের বার্ষিক আয় চার লাখ ৪৩ হাজার ৭৫০ টাকা। নগদ জমা অর্থের পরিমাণ ছয় লাখ ৩৪ হাজার ৭৫০ টাকা। তার আট ভরি স্বর্ণালঙ্কার, একটি ল্যাপটপ, ১.৩৮ একর জমির মালিক ও একটি আধাপাকা টিনশেড ঘর রয়েছে। তবে কোন দায়দেনা কিংবা ব্যাংক ঋণ নেই। সিটি নির্বাচনে সবচেয়ে দরিদ্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন বাসদ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী। এমবিবিএস পাস করা মনীষা পেশায় একজন চিকিৎসক। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে চাকরি করলেও সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে তিনি প্রায় দুই মাস আগে সেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। মনীষার বার্ষিক কোন আয় নেই। নগদ জমা আছে দেড় লাখ টাকা। ব্যক্তিগতভাবে ব্যাংকে জমা ২৭ হাজার ৫০০ টাকার মালিক মনীষার পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে। কোন জমি কিংবা ব্যাংক ঋণ ও দায়দেনা নেই। পারিবারিকভাবে থাকা পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রের একজন অংশীদার তিনি। এছাড়া অর্ধেক ভাগে দুই লাখ ৬৭ হাজার ৯০০ টাকার আরও একটি সঞ্চয়পত্র রয়েছে তার। নির্বাচনী খরচ জোগাতে মাটির ব্যাংক নিয়ে পথে নেমেছিলেন মনীষা। গত সপ্তাহে দেয়া হিসাব অনুযায়ী, সেই ব্যাংকে জমা টাকার পরিমাণ ছিল প্রায় লক্ষাধিক টাকা। তার নির্বাচনী ব্যয় নগরবাসী বহন করবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেছিলেন ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী। সাদিককে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন নগরবাসী ॥ চতুর্থ পরিষদের সিটি নির্বাচনকে ঘিরে নগরীর সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের এতটা আত্মবিশ্বাসী কখনও দেখা যায়নি। বিগত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে এভাবে ঐক্যবদ্ধ হতেও দেখেননি কেউ। নৌকার মাঝি সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে নিয়ে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বরিশাল নগরীর সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। সাদিক আব্দুল্লাহর হাত ধরে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ‘বিসিসি জয়’ এখন ক্রমশই বরিশালের আকাশে দৃশ্যমান হচ্ছে। বিগত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যে গৃহ বিবাদ ছিল এবার এর ছিটেফোটাও নেই। প্রবীণ থেকে তরুণ, কেন্দ্র থেকে জেলা, মহানগর, উপজেলা সবখানে এখন সাদিক আব্দুল্লাহকে নিয়ে স্বপ্ন রচনা শুরু হয়েছে। সে স্বপ্নের সূতিকাগার বরিশাল আওয়ামী লীগের তৃণমূল। বহু বিভক্ত তৃণমূলের নেতাকর্মীদের স্বপ্নের কা-ারি এখন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। নগরীর তরুণ ভোটার তানভির আহম্মেদ অভি কিংবা ফরহাদ সরদার সবার চোখেমুখে এখন তরুণ মেয়র প্রার্থী সাদিক আব্দুল্লাহকে নিয়ে স্বপ্ন। এবার সাদিকের হাত ধরেই নগর পিতার আসন পুনরুদ্ধার হবে আওয়ামী লীগের। ভোটের সময় কদর বাড়ে গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের ॥ সিটি নির্বাচন আসলেই কদর বাড়ে বরিশাল সিটির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গুচ্ছগ্রামের ৫০ হাজার বাসিন্দার। গুচ্ছগ্রামবাসীর জীবন-যাত্রার উন্নয়নে নানান অঙ্গীকার করে ভোট আদায় করলেও বাসিন্দাদের জীবন-যাত্রার মানের কোন উন্নয়ন আর হয় না। বিসিসির মেয়র প্রার্থীদের এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের টার্গেট থাকে বৃহৎ এ গুচ্ছগ্রামের দিকে। বিগত নির্বাচনের মতো এবারও ঘনবসতি পূর্ণ এ গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের মন জয় করতে প্রার্থীরা নানা প্রলোভন নিয়ে মাঠে নেমেছেন। ‘খুলনা ও গাজীপুরের মতো ভোটারদের মন জয় করতে হবে’ ॥ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান এমপি বলেছেন, খুলনা ও গাজীপুরের মতো ভোটারদের মন জয় করে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোটগ্রহণের মাধ্যমে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রতীক নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ নেতাকর্মীদের ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা প্রচারের মাধ্যমে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আজ থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী মাঠে নেমে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। আগামী ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরিশালবাসী নৌকা উপহার দেবেন বলেও আমি শতভাগ বিশ্বাস করছি। আওয়ামী লীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের আয়োজনে সোমবার সকালে নগরী সংলগ্ন বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুরে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বিএনপি কোন উন্নয়ন করতে পারেনি। যেখানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় সেখানে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী করলে বরিশালে উন্নয়ন হবে।
×