ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

খনির গ্যাস শেষ হচ্ছে ’৪১ সালে, নতুন অনুসন্ধানে গতি নেই

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৩ জুলাই ২০১৮

খনির গ্যাস শেষ হচ্ছে ’৪১ সালে, নতুন অনুসন্ধানে গতি নেই

রশিদ মামুন ॥ বিদ্যমান খনির গ্যাস শেষ হচ্ছে, নতুন অনুসন্ধান-উত্তোলনের উদ্যোগ ও চলছে খুঁড়িয়ে। গত কয়েক বছরে স্থলভাগ কিংবা সাগর কোথাও গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের বড় সুখবর দিতে পারেনি পেট্রোবাংলা। প্রতিষ্ঠানটি অবাস্তব পরিকল্পনা ধরে কাজ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ব্যর্থতা ঢাকতে এখন আমদানিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে সরকারী রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। পেট্রোবাংলা সম্প্রতি ’৪০ সাল মেয়াদী গ্যাসের চাহিদা এবং প্রাপ্তির যে হিসেব দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে ’৪১ সালে বিদ্যমান সব খনির গ্যাস ফুরিয়ে যাবে। আর ২০২৪-২৫ অর্থ বছর থেকে বিদ্যমান খনির গ্যাস উত্তোলনের পরিমাণ কমতে শুরু করবে। কূপ খনন না করা পর্যন্ত গ্যাস প্রাপ্তির ঘোষণা দেয়া সম্ভব না হওয়াতে ভবিষ্যতে আরও গ্যাস পাওয়া যাবে বলাও এখন কঠিন। পেট্রোবাংলা বলছে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিদ্যামন খনি থেকে গ্যাস উত্তোলন বৃদ্ধি করা যাবে। এরপর থেকে ২০২৪-২০২৫ পর্যন্ত অনেকটা স্থিতিশীল থাকবে। এর পর থেকেই কমতে শুরু করবে। পেট্রোবাংলার হিসেবে ২০২৪-২৫ এ দেশের গ্যাসের চাহিদা তৈরি হবে চার হাজার ৭৭০ মিলিয়ন ঘনফুট, বিপরীতে দেশের বিদ্যমান খনির উৎপাদন হবে ২ হাজার ১৯৬ ঘনফুট। অর্থাৎ বিদ্যমান খনির তুলনায় ঘাটতি দাঁড়াবে ২ হাজার ৫৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট। পরের অর্থবছরে ২০২৬-২৭ এ চার হাজার ৯১০ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যমান খনির উৎপাদন হবে মাত্র এক হাজার ৭০২ মিলিয়ন ঘনফুট। অর্থাৎ ঘাটতি বেড়ে দাঁড়াবে তিন হাজার ২১৪ মিলিয়ন ঘনফুট। একই ভাবে ২০২৮-২৯ এ চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ৫ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট আর উৎপাদন কমে দাঁড়াবে এক হাজার ৫৪ মিলিয়ন ঘনফুট। আর ওই বছর ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে চার হাজার ১৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট। বিদ্যমান খনির গ্যাসের উৎপাদন কমে আশঙ্কাজনক ২০৩০-৩১ এ দাঁড়াবে ৬৬৬ মিলিয়ন ঘনফুটে। পরের পাঁচ বছর বিদ্যমান খনির উৎপাদন কমে মাত্র ১০৮ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়াবে। আর ’৩৬ এর পর থেকে ’৪০ পর্যন্ত সময়ে খনি থেকে কোন গ্যাস পাওয়া যাবে না। বাপেক্স সূত্র বলছে ২০২১ সাল মেয়াদী পরিকল্পনায় বাপেক্স ৫৩ অনুসন্ধান কূপ খননের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে যে অনুসন্ধান কূপ খনন করা হবে তার একটি তালিকা তৈরি করেছে বাপেক্স। সেখানে দেখা গেছে মোবারকপুর এবং শ্রিকাইলে একটি করে অনুসন্ধান কূপ করা হবে। ইতোমধ্যে শ্রিকাইলে গ্যাস পাওয়া গেছে। আর মোবারকপুরে এক দফা কূপ খননের পর গ্যাসের পরিপূর্ণ চাপ পাওয়া যায়নি। আর শ্রিকাইলে এ ছাড়া সিলেট, জকিগঞ্জ এবং গোলাপগঞ্জে একটি করে তিনটি এ ছাড়া জামালপুরের মাদারগঞ্জে এবং খাগড়াছড়ির সেমুতাং এ একটি করে কূপ খনন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এর আগেও কয়েকটি কূপ খনন করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে অন্তত ৪০ কূপ খনন করা সম্ভব কী না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে পরিকল্পনাটি বাস্তবসম্মত হয়নি। যেনতেন প্রকারে কূপ খনন করে অর্থের অপচয় হবে বলে মনে করছেন তারা। ২০১০ থেকে ’১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে সরকার নানাভাবে নির্দেশনা দিলেও পেট্রোবাংলা বহুজাতিক কোম্পানিকে সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে আকৃষ্ট করতে পারেনি। গত দুই বছরে সেই প্রক্রিয়া আরও ঝিমিয়ে পড়েছে। সাগরের বিশাল অংশ বিজয়ের পরও ২৬ ব্লকের মাত্র চারটিতে কাজ শুরু করা হয়েছে। বাকি বাইশটিই পড়ে রয়েছে। ভূ-তাত্ত্বিক বদরুল ইমাম এ প্রসঙ্গে বলেন বাপেক্স সৃষ্টির পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি বছর একটি করে কূপ খনন করা হয়েছে। তেল গ্যাস অনুসন্ধানের ইতিহাসের এটি একটি বাজে অভিজ্ঞতা। সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানেও যথেষ্ট কাজ হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন। অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, মিয়ানমার বা ভারত যে গতিতে কাজ করছে একই গতিতে আমরা কাজ করতে পারছি না। সাগরে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে জরিপ কার্যক্রমও দুই বছর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। উন্নয়ন কর্মসূচীতে ব্যয় বৃদ্ধি তো দূরের কথা খরচ করতে না পারার ব্যর্থতায় এবার জ্বালানি বিভাগে বরাদ্দই কমিয়ে দেয়া হয়েছে। দলগত কাজের ব্যর্থতা, প্রকল্প পরিচালকদের অদক্ষতা আর কাজে অনীহায় মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের জ্বালানিখাত। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোঃ ফায়জুল্লা এনডিসি অবশ্য বলেন তিনি আশাবাদি দেশে নতুন গ্যাস মিলবে। পেট্রোবাংলা নতুন নতুন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সাগরে এখনও জরিপ শুরু করা সম্ভব না হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, আগের জ্বালানি সচিব হয়তো একটু অন্য চিন্তাভাবনার মধ্যে ছিলেন। এখন জ্বালানি বিভাগ প্রকল্পটি অনুমোদন দেবে বলে আশা করেন তিনি। তবে বাপেক্সের ৫৩ টি অনুসন্ধান কূপ খননের প্রকল্পটি বাস্তবসম্মত দাবি করে তিনি বলেন, বিজ্ঞানীরা বলছেন এটা সম্ভব। বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা উদ্যোগ নিয়েও কেবলমাত্র কর্মকর্তাদের অদক্ষতা এবং ব্যর্থতার কারণে অনেক কাজ করতে পারেনি। তবে বিদ্যুতে এর বিপরীত চিত্র বলে মনে করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন বিদ্যুতে একটি চমৎকার দলগত কাজের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু জ্বালানি পিছিয়ে থাকলে বিদ্যুত পিছিয়ে যাবে এটা স্বাভাবিক।
×