ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাসিক নির্বাচন

নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ নেতাকর্মীরা ॥ সোচ্চার শরিকরাও

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৩ জুলাই ২০১৮

নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ নেতাকর্মীরা ॥ সোচ্চার শরিকরাও

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ আগে থেকেই মাঠ সাজিয়ে দৃঢ় পরিকল্পনায় অগ্রসর হওয়ায় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে এবার অনেকটায় সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তার প্লাসপয়েন্ট হিসেবে বিগত সময়ের প্রমাণিত উন্নয়ন কর্মকা- প্রভাব ফেলেছে এবারের নির্বাচনে। এছাড়া দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সব নেতাকর্মী এবার শুরু থেকেই নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় ভোটের মাঠে তুলনামূলক সুবিধায় রয়েছেন লিটন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের সব নেতাকর্মী ও জোটের শরিক দলগুলোও লিটনের পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন। আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু না হলেও বিভিন্নভাবে মানুষের কাছে যাচ্ছেন তারা। শুরু থেকেই এবার রাজশাহীর ভোটের মাঠে লিটনের পক্ষে আওয়াজ উঠেছে। লিটনকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোটের মাঠ এখন প্রস্তুত ১৪ দলের। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলে বিরোধ থাকলেও উল্টো চিত্র এবার রাজশাহীতে। লিটনকে প্রার্থী মেনেই কাজ করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। তারপরেও দলে কোন পর্যায়ে যেন মান অভিমান না থাকে, সে জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন লিটন। এজন্য একাধিক উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলে কোন সমন্বয়হীনতা আছে কি না, বা কাউকে নিয়ে আপত্তি আছে কি না, থাকলে কেন, কীভাবে তা মেটানো যায়, তা নিয়েই কাজ করছে এসব কমিটি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলের কোন্দল বা বিরোধ মেটানোয় এই চেষ্টাকে আদর্শও বলছে। এ কারণে তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই মাঠে সক্রিয় থাকায় লিটনের ভোটের মাঠ এখন অনেকটায় সাজানো। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত রাজশাহী শহরের চেহারা পাল্টে দিলেও পাঁচ বছর আগে সিটি নির্বাচনে বড় ব্যবধানে হেরে যান আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সেবার মেয়র হন বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। কিন্তু তারপরও লিটনের বিকল্প কেউ এ মহানগরে নেই বলেই ভাবছে ক্ষমতাসীন দল। রাজশাহী শহর তুলনামূলক আওয়ামী লীগের দুর্বল এলাকা বলে পরিচিতি। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের মন্ত্রী এএইচএম কামারুজ্জামানের নিজের এলাকা হলেও ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই মহানগরে বারবার আওয়ামী লীগ বিরোধী শক্তি জিতেছে। এমনকি ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তৃতীয় হয় আওয়ামী লীগ। তবে এরপর থেকে রাজশাহী আওয়ামী লীগের হাল ধরেন লিটন, আর ধীরে ধীরে দলকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে আসেন তিনি। ২০০৮ সালের মেয়র নির্বাচনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জিতেন লিটন। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মীর ইকবাল বলেন, খায়রুজ্জামান লিটনের মতো নেতা যেমন রাজশাহীতে নেই, তেমনি তার মতো সেবকও নেই। ফলে তার কোন বিকল্প রাজশাহীতে নেই। জেলা আওয়ামী লীগের নেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে সবার লক্ষ্য, শুধু লিটনকেই মেয়র নির্বাচিত করা। মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মীর ইকবাল বলেন, গতবার (২০১৩) ‘পরাজয়ের কারণ ছিল নিজেদেরই। বড় দলে অনেক সময় অনেক মান-অভিমান থাকে। নির্বাচন এলে সেগুলো মাথাচাড়া দেয়। ভোটের আগে নেতাকর্মীদের সে মান ভাঙ্গানো যায়নি। ফলে সমন্বয়হীনতার সৃষ্টি হয়েছিল। আর এ কারণেই ব্যাপক উন্নয়ন করা সত্ত্বেও হেরে যান লিটন। তবে এবার নিজেদের সমস্যাগুলো মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ১৪ দলের শরিকরাও মাঠে রয়েছেন লিটনের পক্ষেই। তিনি জানান, এবার ভোটের আগে নেতাকর্মীদের মান-অভিমান বা বিভেদ দূর করতে পুরো শহরে কাজ করছে ১১টি উপ-কমিটি। এক একটি কমিটির আওতায় কাজ করছে চারটি করে উপ-কমিটি। এসব উপ-কমিটির বিস্তার পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়। উপ-কমিটিতে রাখা হয়েছে সর্বনিম্ন ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ১০১ সদস্য। নির্বাচনের প্রস্তুতি বাস্তবায়নের কাজ করছে পুরো শহরের ওই ১১ কমিটি। তারা উপ-কমিটির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে চলেছেন। এই উপকমিটিগুলোতে যে শুধু আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির পদধারী নেতারাই রয়েছেন, তা নয়। আছেন এলাকার বিশিষ্টজনসহ নানা শ্রেণীপেশার মানুষ। এবাবেই এবার আগে থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করছেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, এবারের সিটি কর্পোরেশন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ। আগে থেকেই মাঠ সাজানো হয়েছে। রাজশাহীর সব শ্রেণীপেশার মানুষও এবার উন্নয়নের পক্ষে রয়েছেন। ডাবলু সরকার বলেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগ যে উন্নয়ন করেছে তাতে রাজশাহীর মানুষ নৌকার পক্ষেই থাকবে। রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমার সময়ে (২০০৮-২০১৩) রাজশাহীর যে উন্নয়ন হয়েছে, তা এখনও মানুষ মনে রেখেছে। এই উন্নয়ন গত ৫ বছরে থমকে গেছে। এখন জনগণ সেটা উপলব্ধি করছে। ফলে আবারও উন্নয়নের জন্যই জনগণ আমাকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাইছেন। এবার রাজশাহী নগরবাসী আর কোন ভুল করতে চাইবে না। এদিকে আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু না হলেও আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এখন ভোটের মাঠে রয়েছেন লিটনের পক্ষে। কাউন্সিলর পদে বৈধ প্রার্থী ২১৯ ॥ রাসিক নির্বাচনে অংশ নেয়া দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং অফিসার। এরা হলেন, নগরীর ১৮ নং ওয়ার্ডের জিল্লুর রহমান ও ৩০ নং ওয়ার্ডের আছিব হাসান। এছাড়া সাধারণ ওয়ার্ডে ১৬৭ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে অংশ নেয়া ৫২ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সহকার্র রিটার্নিং অফিসার আতিয়ার রহমান জানান, রাজশাহীতে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছায়ের দ্বিতীয় দিন সোমবার ১৫টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। এতে সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদার হওয়ায় ২ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে ১৬৯ জনের মধ্যে ১৬৭ জন সাধারণ কাউন্সিলের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৫২ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করে। যাচাই-বাছাই শেষে সবার প্রার্থীতা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আতিয়ার রহমান বলেন, এর আগে রবিবার মেয়র প্রার্থী ও ১৫ সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে ভুয়া সমর্থকের স্বাক্ষর দেয়ার দায়ে স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী মুরাদ মোর্শেদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে অপর পাঁচ মেয়রপ্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৯ জুলাই প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। প্রতীক বরাদ্দ হবে আগামী ১০ জুলাই। আর ভোটগ্রহণ আগামী ৩০ জুলাই। রাসিক নির্বাচন নেতাকর্মীদের জন্য অগ্নিপরীক্ষাÑ নানক ॥ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নেতাকর্মীদের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। কেন্দ্রগুলোতে ভোট কম-বেশি হলে আপনাদের জবাব দিতে হবে। বেশি হলে পুরস্কার আর কম হলে তিরস্কার রয়েছে। সোমবার দুপুরে আওয়ামী লীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, গত নির্বাচনে লিটন জয়ী হবে বলে নেতাকর্মীরা গা ছাড়া দিয়েছিল। তাদের মধ্যে অলসতা কাজ করেছিল। বর্তমান সময়ে তার কিছুই নেই। নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। রাজশাহীর উন্নয়নে জন্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে ভোট দিতে হবে। তিনি বলেন, গতবার বিএনপির-জামায়াতের অপপ্রচার ছিল। সব অপপ্রচারের জবাব দিয় এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী লিটনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাসিক নির্বাচনে ২১ জন কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে ভোট করছে। মেয়র বাদ দিয়ে কাউন্সিলরের জন্য কাজ করবেন তা হবে না। আগে মেয়র পরে কাউন্সিলর। প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কমিটি করতে হবে। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের বোঝাতে হবে লিটনের বিষয়ে। লিটনের উন্নয়নের কথা তাদের কাছে বলতে হবে। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী এমপির সভাপতিত্বে আলোচনা সভা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপিস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাসিকের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা এসএম কামাল হোসেন, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার প্রমুখ। সভায় রাজশাহী পুঠিয়া-দুর্গাপুরের সাংসদ আাবদুল ওয়াদুদ দারা, বাগমারার সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, সাংসদ বেগম আকতার জাহান, রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার, কাটাখালী পৌর মেয়র আব্বাস আলীসহ নগর ও জেলা আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
×