ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দ্রুততম সময়ে এরা ফিরতে পারবেন

মালয়েশিয়ার ক্যাম্পে দেশে ফেরার অপেক্ষায় ২৩৭ বাংলাদেশী

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৩ জুলাই ২০১৮

মালয়েশিয়ার ক্যাম্পে দেশে ফেরার অপেক্ষায় ২৩৭ বাংলাদেশী

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়ার পিকেনানাস ক্যাম্পে দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন ২৩৭ বাংলাদেশী কর্মী। দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ তাদের গত ৩০ জুন বৈধ কাগজপত্র না থাকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করেছে। রবিবার মালয়েশিয়ায় নিয়োজিত বাংলাদেশের হাইকমিশনার জহুরবারুতে অবস্থিত ওই ক্যাম্পটি পরিদর্শন করেন। হাইকমিশনার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছেন, তারা যাতে দেশে ফিরে যেতে পারেন সে জন্য অস্থায়ী ট্রাভেল পাস ইস্যু করার কথা বলেছেন। এক্ষেত্রে বিমান ভাড়া নিজেদের বহন করতে হবে। যাদের বিমান ভাড়া দেয়ার মতো অবস্থা নেই সেক্ষেত্রে হাইকমিশন তাদের খরচ বহন করবে। হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, ভিসা-সংক্রান্ত অপরাধ ছাড়া এদের আর কোন অপরাধ নেই। তাই তাদের দেশে ফিরতে বেশি সময় লাগবে না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তারা দেশে ফিরতে পারবেন। যাদের পাসপোর্ট নেই তাদের ট্রাভেল পারমিট হাইকমিশন থেকে দেয়া হচ্ছে। এমনকি অনেককে টিকেটও দেয়া হচ্ছে। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন বিভাগকে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে আটকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। ইমিগ্রেশন বিভাগ হাইকমিশনের অনুরোধে আটকদের দেশে ফেরার বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ট্রাভেল পাস ইস্যু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আটকদের সোজা এয়ারপোর্টে নিয়ে যাওয়া হবে। বিমানে তুলে দেয়ার বিষয়টি ইমিগ্রেশন বিভাগ নিশ্চিত করবে। দেশটির ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে মালয়েশিয়ান আইন-অনুযায়ী পাসপোর্ট ও ভিসা না থাকা, পাসপোর্ট ও ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া এবং সাগর বা স্থলপথে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের পুলিশ গ্রেফতার করে বিচার ও জেল শেষে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য রাখা হয় পিকেনানাস ক্যাম্পে। পিকেনানাস ক্যাম্পে ২৩৭ জন বাংলাদেশী দেশে ফেরতের অপেক্ষায় আছেন। তাদের জাতীয়তা নিরূপণ করে ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে শ্রম কাউন্সিলার মোঃ সায়েদুল ইসলাম। বাংলাদেশ হাইকমিশন এ বিষয়ে কি পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চাইলে শ্রম কাউন্সিলর মোঃ সায়েদুল ইসলাম জানান, বন্দী শিবিরে যারা আটক আছেন তাদের দ্রুত দেশে পাঠানোর সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যাদের কেউ নেই অথবা টিকেটের ব্যবস্থা হচ্ছে না তাদের দূতাবাসের পাশাপাশি জনহিতৈষী কাজে নিয়োজিতদের সহযোগিতায় বিমান টিকেট দিয়ে তাদের দেশে পাঠানো হবে। এদিকে, অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণের প্রক্রিয়া ৩০ জুন শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে দেশটিতে আটক অভিযান শুরু হয়েছে। গত তিন দিনে বাংলাদেশের প্রায় ২ হাজার কর্মীকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ। ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চালু হওয়া দীর্ঘমেয়াদী এ বৈধকরণ প্রকল্পে যেসব অভিবাসী কর্মী ও নিয়োগকর্তারা নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের আর সময় দেবে না কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের কঠোর অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাইকমিশন আটক কর্মীদের বিষয়ে কোন আলোচনায়ই যাচ্ছে না। তারা পররাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে বিষয়টি জানিয়েছে। দুই মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। এখন পর্যন্ত এই দুই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হাইকমিশনকে কোন নির্দেশ দেয়নি। এরপরও হাইকমিশন নিজ উদ্যোগে তারা আটক কর্মীদের বিষয়ে খোঁজ খবর রাখছেন। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারান ঘোষণা করেছেন, একটি চক্র মালয়েশিয়ার বিগত সরকারের শীর্ষ মহলের যোগসাজশে বাংলাদেশে এজেন্ট অনুমোদন দিয়ে একচেটিয়াভাবে মানবসম্পদ নিয়েছে। এ চক্রের নেতৃত্বে প্রবাসী দাতু আমিনের নাম উঠে এসেছে। দাতু আমিনকে খোঁজা হচ্ছে। তাকে পেলে মালয়েশিয়ায় মানবসম্পদ নিয়োগের অনিয়মের সব বিষয় পাওয়া যাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ১০টি এজেন্সির সম্পর্কেও খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। তারা কিভাবে কর্মী পাঠিয়েছে। সব কিছুর তদন্ত শেষ হওয়ার পরই বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হবে। এখনই কোন প্রকার আলোচনা হচ্ছে না। দেশটির বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে কর্মীদের কাছ থেকে দুই বছরে অন্তত ৩০০ কোটি রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত এক লাখের বেশি বাংলাদেশী কর্মী মালয়েশিয়ায় নিয়োগ পেয়েছেন। অপেক্ষায় রয়েছে আরও প্রায় ৪ লাখ। এই সিন্ডিকেটের মালয়েশিয়া পার্টের নেতৃত্ব দিয়েছেন দাতু আমিন নামের এক বাংলাদেশী ব্যক্তি। সরকার বদলের পরই তিনি কানাডায় চলে গেছেন। বাংলাদেশ পার্টে ছিলেন বায়রার সাধারণ সম্পাদক। তিনিও এখন কানাডায় অবস্থান করছেন। সূত্র জানিয়েছে, দেশটির অভিবাসন বিভাগ এক জুলাই থেকে পর্যবেক্ষণ করবে অবৈধরা স্বেচ্ছায় দেশ ত্যাগ করছে কিনা। এর মধ্যে কেউ গ্রেফতার হলে দেশটির অভিবাসন আইন অনুযায়ী ইমিগ্রেশন এ্যাক্ট ১৯৫৯/৬৩-এর ধারা ৫৫-বি-এর অধীনে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার রিঙ্গিত জরিমানা বা ১২ মাস পর্যন্ত জেল অথবা উভয় দ- দেয়ার বিধান রয়েছে।
×