ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বুড়িগঙ্গার ডোবায় নিখোঁজ শিশু ইমনের লাশ ২৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ৩ জুলাই ২০১৮

বুড়িগঙ্গার ডোবায় নিখোঁজ শিশু ইমনের লাশ ২৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর বেড়িবাঁধের পাশে বুড়িগঙ্গার একটি শাখায় পড়ে নিখোঁজ শিশু ইমনের লাশ উদ্ধার হয়েছে প্রায় ২৬ ঘণ্টা পর। সোমবার তিনটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের অভিজ্ঞ ডুবুরী আবুল খায়েরের নেতৃত্বে একটি দল ইমনের লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই ইমনের বাড়িতে শুরু হয় মাতম। ইমনের লাশ উদ্ধারের পর শত শত মানুষ ভিড় করে ইমনদের বাড়িতে। নিজের জীবন দিয়ে বন্ধুর জীবন রক্ষার চেষ্টার জন্য ইমনের নাম এখন কামরাঙ্গীরচরে মানুষের মুখে মুখে। কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি শাহীন ফকির জনকণ্ঠকে জানান, নিহত ইমনের পিতা মরহুম রজ্জব আলী। বাড়িতে সবাই তাকে রাজ্জাক নামে চিনতেন। পেশায় রিক্সাচালক ছিলেন। চার বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। ইমনের মা কুলসুম বেগম গৃহপরিচারিকা। ইমনরা দুই ভাই। ইমন ছোট। বড় ভাইয়ের নাম ইব্রাহিম। তাদের বাড়ি রংপুর জেলা সদরের গঙ্গাচড়ায়। পরিবারটি কামরাঙ্গীচরের পূর্ব রসুলপুরের ২ নম্বর গলিতে ভাড়ায় বসবাস করে। সোমবার বিকেলে পরিবারের কোন অভিযোগ না থাকায় ইমনের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোমবার রাতের মধ্যেই লাশ আজিমপুর কবরস্থানে দাফনের কথা রয়েছে। রবিবার দুপুর একটার দিকে কামরাঙ্গীরচর এলাকার নবাবগঞ্জ বড় মসজিদের কাছে বেড়িবাঁধের সামনের ডোবায় খেলতে গিয়ে পড়ে যায় হৃদয় নামে এক শিশু। স্থানীয়রা জানান, বেড়িবাঁধের পাশে ইমন ও তার বন্ধু ইমন খেলছিল। খেলার সময় হৃদয় ময়লা ডোবার পানির ওপর ভেসে থাকা শক্ত ময়লার স্তূপ ভেবে তাতে পা দেয়। পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদয় ডুবে যেতে থাকে। হৃদয়ের চিৎকারে তার বন্ধু ইমন তাকে বাঁচাতে যায়। সেও একই ভাবে ডুবে যেতে থাকে। স্থানীয়রা শিশুদের চিৎকারে সেখানে গিয়ে হৃদয়কে কোনমতে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। কিন্তু ততক্ষণে ইমন পুরোপুরি ডোবার ময়লার স্তূপের নিচে তলিয়ে যায়। হৃদয় (৬) কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুর মুকুলের বাড়ির ভাড়াটিয়া রজব আলীর ছেলে। ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ডুবুরী আবুল খায়ের তার দলবল নিয়ে অভিযান শুরু করেন। অতিরিক্ত ময়লা আর্বজনা ও রাত হওয়ায় উদ্ধার অভিযান বারবার ব্যাহত হয়েছে। কিন্তু আবুল খায়ের ক্ষান্ত হননি। তিনি উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে গেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার দুপুর তিনটার দিকে পূর্ব রসুলপুরের এক নম্বর গলির কাছ থেকে পানির তলদেশ থেকে ইমনের লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয় আবুল খায়ের ও তার দলবল। স্থানীয়রা জানান, শিশু দুটি যেখানে পড়ে গিয়েছিল, সেটি মূলত বুড়িগঙ্গা নদীর পশ্চিমের শাখা নদী। দখল হতে হতে সেটি আজ ডোবায় পরিণত হয়েছে। ইতোপূর্বে ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকার শাহজাহানপুরে ওয়াসার পানির পাইপে পড়ে শিশু জিহাদ, ২০১৫ সালে রাজধানীর কদমতলীতে স্যুয়ারেজের পাইপের ভেতরে পড়ে পাঁচ বছরের শিশু নীরব, ২০১৬ সালে ঢাকার মহাখালীর খালের ময়লার স্তূপে পড়ে ছয় বছরের কন্যা শিশু সানজিদা আক্তারের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
×