ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে সাংবাদিক কন্যা মৃত্যুর ঘটনায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৩ জুলাই ২০১৮

চট্টগ্রামে সাংবাদিক কন্যা মৃত্যুর ঘটনায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় সাংবাদিকের একমাত্র শিশুকন্যা মৃত্যুর ঘটনাকে স্বাভাবিক দাবি করে এবার আন্দোলনে নেমেছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রামের সদস্য ও অনুসারীরা। সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় অবরোধ কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের সহায়তায় এ কর্মসূচী পালন করেছে চিকিৎসকের মুখোশে থাকা স্বার্থপর সমাজের এসব কলঙ্ক। এদিকে, এ সময় চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও প্রতিনিধিরা চরম ভোগান্তিতে পড়ে। এসব চিকিৎসকের রোষানলে চরম হয়রানি থেকে রক্ষা পায়নি মরদেহ থেকে শুরু করে মুমূর্ষু রোগীও। চরম যানজট ও ভোগান্তির মুখেপড়াদের দুই ঘণ্টারও বেশি সময় পুলিশের কয়েক কর্মকর্তার গাড়ির চাকা যখন থেমে যায় তখনই পুলিশী হস্তক্ষেপে বিএমএর কর্মসূচী প- হয়। প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে, সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত চমেক হাসপাতালের গেট থেকে চকবাজার মোড় ও প্রবর্তক পর্যন্ত গাফড় চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয় ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর পক্ষের ডাক্তাররা। এতে প্রবর্তক, চকবাজার, মেহেদিবাগ, গোলপাহাড় এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। এতে সেবাদানকারীদের তোপের মুখে পড়ে রোগীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ, যারা চিকিৎসা নিতে চমেকে এসেছিলেন। অপরদিকে রাস্তায় চলাচলরত বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রী, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষকেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের সবচেয়ে বড় ও প্রায় সাড়ে তেরো শ’ শয্যার এই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার। এক হাজারেরও বেশি ডাক্তার থাকলেও চিকিৎসা পাচ্ছে না রোগীরা। ওয়ার্ডবয় আর আয়া-নার্সদের দিয়ে চলছে রোগীদের সেবার নামে অর্থবাণিজ্য। ট্রলি, হুইল চেয়ার থেকে শুরু করে রোগীর বেড স্থানান্তরেও টাকা ছাড়া এক কদমও নড়তে পারে না রোগীরা। দুই ঘণ্টা চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখে সাংবাদিকের একমাত্র মেয়ে মেরে ফেলার বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলে চাপিয়ে দিতে চায় আইনের কাছে। সরকার ও জনগণ বিরোধী চিকিৎসকদের এমন কর্মকা-ে পুলিশ কোন পদক্ষেপ নেয়নি দীর্ঘ দুই ঘণ্টায়ও। এদিকে, সোমবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচী ও সমাবেশ করেছেন সাংবাদিকরা। সমাবেশে সঠিক ও যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আহবান জানানো হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। কারণ, চিকিৎসকরা আইনের উর্ধে নন। অভিযোগ রয়েছে, ম্যাক্স হাসপাতালের লাইসেন্স সঠিক নয়। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিএমডিসির কোন অনুমোদন ছাড়াই হাসপাতাল জামায়াত-বিএনপির আশীর্বাদপুষ্টরাই এই হাসপাতাল চালাচ্ছে। বিএমএ নেতা ডাক্তার ফয়সাল ইকবালের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এদিকে, ফেসবুকে দৈনিক সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার বাবর লিখেছেন, বাবার হাতে সন্তানের লাশ। সামান্য গলা ব্যথার চিকিৎসার জন্য একমাত্র মেয়ে রাইফা খানের জীবনটা দিতে হলো চিকিৎসকের হাতে। নিষ্পাপ মেয়েটি ভুল চিকিৎসা আর অবহেলার শিকার হয়েছে। সাংবাদিকরা অভিযুক্ত ডাক্তার দেবাশীষসহ তিনজনকে শুক্রবার গভীর রাতে আইনের হাতে সোপর্দ করলেও বিএমএ নেতা ডাক্তার ফয়সল ইকবাল ও দলবলের তোপের মুখে মামলা নেয়নি পুলিশ। ঘটনার প্রতিবাদ জানালে চট্টগ্রামের হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয় সেবার পোশাকে থাকা এসব নেতা। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে কমিটি গঠন হলেও সঠিক তদন্ত নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, ডাক্তাররূপী কসাইরা নিজেদের দোষ স্বীকার করছে না। ভুল চিকিৎসায় পৃথিবীর মায়া আর মা-বাবার কোল ছেড়ে বিদায় নিতে বাধ্য হলো রাইফাকে। গত রবিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন, শেখ মোঃ মনজুরুর রহমান ও মাকসুদুল রহমান এ বিষয়ে তদন্ত করতে চট্টগ্রাম আসেন। রাত ৯টার দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ম্যাক্স হাসপাতালের সভাকক্ষে কর্তৃপক্ষ ও সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তদন্তে আসারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সাংবাদিক নেতাদের অভিযোগ শুনে সিদ্ধান্ত দেয়ার আগেই বিএমএ নেতা মনোয়ারুল হক শামিম ক্ষেপে যান। এ সময় সাংবাদিকরা মিটিং বয়কট করে হাসপাতালের সামনে আধ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন। এ সময় চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল, সাবেক সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ, সিইউজের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×