ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৪৭ বছরেও শহীদ সদানন্দের পরিবার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৩ জুলাই ২০১৮

৪৭ বছরেও শহীদ সদানন্দের পরিবার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ২ জুলাই ॥ স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও বিচার হয়নি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী নওয়াব সরকারী মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ শিক্ষক সদানন্দ দেবনাথের। স্বীকৃতিও পাননি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে। ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার এবং শান্তি কমিটির লোকেরা ধনবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে আরফান আলীর চায়ের দোকান থেকে তাকে ধরে নিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন করে নৃশংসভাবে হত্যা করে তার লাশ মধুপুর বংশাই নদীতে ফেলে দেয়। সেই থেকেই শহীদ শিক্ষক সদানন্দের পরিবারের সকল সদস্যই মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এই পরিবারটি ৪৭ বছর ধরে কাঁদছে। কিন্তু আজও বিচার পায়নি শহীদ শিক্ষকের স্বজনরা। এই কান্না বুকের ভেতর চেপে রেখেই চলছে ওদের দুর্বিষহ জীবন। একদিকে প্রিয় মানুষটি হারানোর বেদনা আর অন্যদিকে জীবন যাপনের যন্ত্রণা এ নিয়ে করুণ কষ্টে পার করছে দীর্ঘ ৪৭টি বছর। শহীদ শিক্ষক সদানন্দ দেবনাথের স্ত্রী খুকী বালা দেবনাথও অনেক কষ্ট ভোগ করে গত ২০১৫ সালে ৭ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। ধনবাড়ী উপজেলার ধোপাখালি ইউনিয়নের দয়ারামবাড়ী গ্রামের মৃত দীনবন্ধু দেবনাথের ছেলে শহীদ শিক্ষক সদানন্দ দেবনাথ। মাতা মৃত ভুবনবালা দেবনাথ। জন্ম ১৯২০ সালে। শহীদ শিক্ষক সদানন্দ দেবনাথের পরিবারের সদস্যরা হলেন- ৩ ছেলে অমল দেবনাথ, কমল দেবনাথ ও দিগেন দেবনাথ এবং মেয়ে পলানী রানী দেবনাথ। অমল দেবনাথ প্রতিবন্ধী। কমল দেবনাথের স্ত্রী শিখা রানী দেবনাথ। তাদের ১ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তান রয়েছে। শিখা রানী দেবনাথ প্রতিবন্ধী অমল দেবনাথ আর ২ সন্তান নিয়ে অতি কষ্টে শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করছেন। এলাকাবাসী ও তার স্বজনরা জানান, ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই শহীদ শিক্ষক সদানন্দ দেবনাথ তার বেতনের জন্য ধনবাড়ী পোস্ট অফিসে আসেন। যদিও তৎকালীন পোস্ট অফিসের পিয়ন তারাপদ তার মাসিক বেতন বাড়িতেই দিয়ে আসত। ছোট বেলা থেকেই ধনবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী সূর্য্যকান্তর মিষ্টি তার খুবই প্রিয় ছিল। চায়েও ছিল তার দারুণ নেশা। বেতন উঠিয়ে সুর্য্যকান্তের মিষ্টি খেয়ে ধনবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে চা পান করার জন্য আরফান আলীর চায়ের দোকানে আসেন। আর বসা মাত্রই তাকে ধরে নিয়ে যায় পাক হানাদার বাহিনী, রাজাকার ও শান্তি কমিটির লোকেরা। শহীদ শিক্ষক সদানন্দ দেবনাথ শুধু একজন শিক্ষকই ছিলেন না। এলাকায় ডাক্তার হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল। তিনি একজন সমাজহিতৈষী ও দেশপ্রেমিক ছিলেন। তার ছাত্রদের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং সাবেক খাদ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি, সাবেক সচিব মরহুম শেখ নিয়ামত আলী, বাংলাদেশ টাইমস-এর সাবেক সম্পাদক ও বর্তমানে কর্মরত ডেইলি নিউ নেশনের উপদেষ্টা আবু মোঃ মোফাজ্জল, ঢাকা চেম্বার এ্যান্ড কমার্সের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু মোবাশ্বরসহ তার অনেক ছাত্রই দেশ-বিদেশের উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং আছেন। শহীদ শিক্ষক সদানন্দ দেবনাথের হত্যাকারী রাজাকার ও শান্তি কমিটির লোকেরা এখনও এলাকায় বীরদর্পে চলাফেরা করে।
×