ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও সক্রিয় গোদাগাড়ির মাদক কারবারি কামরু

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৩ জুলাই ২০১৮

এখনও সক্রিয় গোদাগাড়ির মাদক কারবারি কামরু

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ গোদাগাড়ির মাদকরাজ্যে এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে উপজেলার কৃঞ্চবাটি কালিদীঘি গ্রামের চিহ্নিত মাদক কারবারি কামরুজ্জামান কামরু। তার হয়রানিতে এখন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে এলাকার মানুষ। মাদক ও হত্যাসহ ১৭ মামলার আসামি হলেও চলমান অভিযানের মধ্যেও কামরু রমরমা মাদক কারবার করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কামরুর হয়রানিতে অতিষ্ঠ গোদাগাড়ির কৃঞ্চবাটি কালিদীঘিসহ ৫ গ্রামের মানুষ এবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাকে গ্রেফতারের দাবিতে মাদক নিয়ন্ত্রণ দফতরের উর্ধতন কর্মকর্তা ছাড়াও রাজশাহীর সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিয়েছেন। গত সোমবার এলাকাবাসীর দেয়া লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, কামরুর স্ত্রী রোজিনাকে গত ২৬ জুন গোদাগাড়ি থানার পুলিশ ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেফতার করেছে। তবে কামরু এখনও প্রকাশ্যে ঘুরছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কালিদীঘি কৃঞ্চবাটি গ্রামের জকিমুদ্দিন ম-লের ছেলে কামরুজ্জামান কামরু (৪৩) দীর্ঘ ২০ বছর ধরে হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকের ব্যবসা করে এখন কোটিপতি। এ পর্যন্ত পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মাদকসহ মোট ৭ বার গ্রেফতার হয়েছে কামরু। গোদাগাড়ি এবং রাজশাহী নগরীর রাজপাড়াসহ দেশের বিভিন্ন থানায় কামরুর নামে ১৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হত্যাসহ ১০টি মামলা চলমান রয়েছে বলে গোদাগাড়ি থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে কামরুর স্ত্রী রোজিনার বিরুদ্ধেও ৫টির বেশি মামলা চলমান রয়েছে। এলাকার জনপ্রতিনিধি ও সচেতন লোকজন লিখিত অভিযোগে আরও জানান, কামরু একজন বড় মাপের হেরোইন চোরাকারবারি। কয়েক বছর আগে এলাকার মানুষ তাকে মাদক ব্যবসা পরিত্যাগের জন্য চাপ দিলে সহযোগী সন্ত্রাসীদের দিয়ে এলাকার নিরীহ লোকজনের ওপর হামলা করে। পরে এলাকাবাসী একজোট হয়ে কামরুর মাদক ব্যবসা প্রতিরোধ করলে সে নিজ গ্রাম কৃঞ্চবাটি কালিদীঘি ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে রাজশাহী নগরীর মোল্লাপাড়া এলাকায় বসবাস শুরু করে। সেই থেকে এলাকার মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে কামরু। এদিকে ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ সর্বশেষ ২০০ গ্রাম হেরোইনসহ র‌্যাবের হাতে আটক হয় কামরু। তবে বিপুল টাকা ব্যয় করে সে কয়েক মাস পর জামিনে বেরিয়ে আসেন। সেই থেকে আবারও মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ কামরু ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিকে সর্বশেষ গত ২৬ জুন গোদাগাড়ি থানা পুলিশ কামরুর স্ত্রীকে ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেফতার করেন। এলাকাবাসী জানায়, এলাকা ছাড়ার পর ২০১৫ সালে কামরু তার নিজের প্রতিবন্ধী বোনকে হত্যা করে এলাকাবাসীকে আসামি করে মামলা করেন। পরে পুলিশী তদন্তে জানা যায়, কামরু নিজেই তার বোনকে হত্যা করেছে। জানা গেছে, কামরুর সঙ্গে রাজশাহীর মাদক নিয়ন্ত্রণ দফতরের কয়েকজনের সঙ্গে রয়েছে গভীর সখ্যতা। এদের ব্যবহার করে এলাকাবাসীর বাড়িতে নকল মাদক ফেলে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগে আরও জানা গেছে, গত ২১ জুন মাদক নিয়ন্ত্রণ দফতরের কর্মকর্তারা কৃঞ্চবাটি কালিদীঘি গ্রামের মনিরুল ইসলাম মুকুলের বাড়িতে যায়। তারা বাড়ির বাইরের একটি খড়ের গাদা থেকে ২০০ গ্রাম সাদা পাউডার উদ্ধার দেখিয়ে মুকুলের স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে গ্রেফতার করে। মাদক নিয়ন্ত্রণ দফতরের কর্মকর্তারা পরে বাড়ির ভেতর থেকে হেরোইন উদ্ধার দেখিয়ে মামলা করেন। এলাকাবাসী জানায়, রোকেয়া বেগম কামরুর আত্মীয়। পারিবারিক কারণে তাদের বিরোধ রয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য শামীম ইকবাল খঞ্জন বলেন, কামরুর হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। মাটিকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী আজম তৌহিদ জানান, মাদক সিন্ডিকেটের লোকেরাই মাদক নিয়ন্ত্রণ দফতরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এলাকার নিরীহ মানুষকে মাদকের মামলায় ফাঁসাচ্ছে। এ নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কের মাঝে দিন কাটাচ্ছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই ফোন কেটে দেন কামরু। পরে আর ফোন রিসিভ করেননি। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ দফতরের উপপরিচালক লুৎফর রহমান বলেন, এলাকাবাসীর দেয়া একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগগুলো গুরুতর। তদন্ত করে দেখা হবে। প্রসঙ্গত, সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলেও মাদকরাজ্য হিসেবে পরিচিত গোদাগাড়ির শীর্ষ মাদক কারবারিরা এখনও রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযান শুরুর পর অনেকে আত্মগোপনে ও অনেকে সীমান্ত এলাকায় গা ঢাকা দেয়ায় তাদের ধরা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
×