ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টাইব্রেকারে ১ (৪-৩) ১ স্পেনকে হারিয়ে প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে

রাশিয়ার ঐতিহাসিক জয়

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২ জুলাই ২০১৮

রাশিয়ার ঐতিহাসিক জয়

মিথুন আশরাফ ॥ স্পেনকে ‘শেষ ষোলো’তে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেছে রাশিয়া। রবিবার মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে স্পেনকে টাইব্রেকারে হারিয়ে শেষ আটে খেলা নিশ্চিত করে নেয় রাশিয়া। ঐতিহাসিক জয় তুলে নেয় রাশিয়া। ম্যাচের ১২ মিনিটে আত্মঘাতী গোলে ১-০ তে এগিয়ে যায় স্পেন। ৪১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যাচে ১-১ সমতা ফেরান রাশিয়ার আর্তেম জিউবা। খেলার নির্ধারিত সময় ১-১ সমতায় থাকে। অতিরিক্ত সময়েও কোন গোল হয়নি। শ্বাসরুদ্ধকর একটি ম্যাচেরই দেখা মিলে। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে জিতে যায় রাশিয়া। স্পেনকে বিদায় করে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে তারা। ইতিহাস গড়ে রাশিয়া। প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে রাশিয়া। রাশিয়ার রক্ষণদুর্গে পাঁচ ফুটবলার রাখা হয়। বোঝাই যাচ্ছিল, ম্যাচটি আগে ড্র করে নিতে চায় রাশিয়া। এরপর খেলাটি কোনভাবে টাইব্রেকারে নিয়ে যেতে চায়। সেখানে যা হওয়ার হবে। কিন্তু শুরুতে গোল খেয়ে বসে রাশিয়া। শুরুতেই আক্রমণ চালাতে থাকে স্পেন। ফাউল থেকে ১১ মিনিটে একটি ফ্রি কিক মিলে। সেই ফ্রি-কিকটা খুব চমৎকারভাবে নিলেন স্পেনের ফরোয়ার্ড ফুটবলার ইসকো। ইগনাশেভিশ রাগবি স্টাইলে ট্যাকল করে রামোসকে ফেলে দিতে চাইলেন। বলটাকে সামলাতে গিয়ে ১২ মিনিটে সেটি ঢুকিয়ে দিলেন নিজেদেরই জালে। স্পেন ১-০ গোলে এগিয়ে যায়। এবারের বিশ্বকাপে এটি রেকর্ড দশম আত্মঘাতী গোল। সবচেয়ে বয়সী (৩৮ বছর ৩৫২ দিন) ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে আত্মঘাতী গোল করেন ইগনাশেভিশ। চলতে থাকে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। বল দখলে স্পেনেরই থাকে জয়জয়কার। কিন্তু ৪১ মিনিটে গোল খেয়ে বসে স্পেন। ১-১ সমতা আসে। মাঝমাঠ থেকে আসা বলটি রক্ষণদুর্গে হেড করতে লাফিয়ে ওঠেন জেরার্ড পিকে। পিকের উঁচিয়ে থাকা হাতে পেছন থেকে জিউবার হেড করা বলটি লাগলে পেনাল্টির নির্দেশ দিয়েছিলেন রেফারি। ঠা া মাথায় ডান দিক দিয়ে বল জালে জড়ান জিউবা। ‘শেষ ষোলো’তে রাশিয়ার প্রথম ফুটবলার হিসেবে গোল করলেন জিউবা। প্রথমার্ধ এই সমতাতেই শেষ হয়। দ্বিতীয়ার্ধে স্পেন চরম চাপে থাকে। কোনভাবেই গোল আদায় করে নিতে পারছিল না। ৭৬ ভাগ বল স্পেনের পায়েই থাকে। কিন্তু কাজ হয় না। রাশিয়া যে প্রথমবার ‘শেষ ষোলো’তে খেলে স্পেনের মতো শক্তিশালী দলকে আটকে রাখতে পেরেছে, তাতেই যেন রাশিয়ার জয়জয়কার হয়ে যায়। অসাধারণ খেলে রাশিয়া। ৮৫ মিনিটে অবশ্য গোল করার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে স্পেন। বদলি ফুটবলার ইনিয়েস্তা ডিবক্সের একটু বাইরে থেকে পোস্টে দুর্দান্ত শট নেন। রাশিয়ার গোলরক্ষক আকিনফিভ বলটি রুখে দেন। কিন্তু তালুবন্দী করতে পারেননি। বলটি গোলরক্ষকের ডান পাশে এসপাস পান। কিন্তু গোল করার সুযোগ হাতছাড়া করেন। গোল করতে ব্যর্থ হন। সমতায় থেকেই খেলার দ্বিতীয়ার্ধও শেষ হয়। এবার বিশ্বকাপে প্রথম কোন ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে যায়। স্পেনের ওপর যেন চাপ বাড়তেই থাকে। রাশিয়া যে দুর্দান্ত খেলা দেখায়, তাতে সমর্থকরাও মহাখুশি হন। অতিরিক্ত সময়ে রাশিয়া পুরোদমে রক্ষণাত্মক খেলতে থাকে। সব ফুটবলার রক্ষণদুর্গে থাকে। বোঝাই যায়, একই পরিকল্পনায় এগিয়ে যায়। গোল হতে না দেওয়া। ড্র করে ম্যাচ টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়া। কোনভাবেই রাশিয়ার রক্ষণদুর্গ ভাংতে পারছিল না স্পেন। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধও সমতায় শেষ হয়। দ্বিতীয়ার্ধের চতুর্থ মিনিটে রডরিগো গোল করার সুযোগ পান। কিন্তু রাশিয়া গোলরক্ষক বরাবরের মতো প্রতিহত করে দেন। দ্বিতীয়ার্ধও খেলায় সমতা থাকে। ১২০ মিনিট খেলায় ১-১ সমতা থাকায় টাইব্রেকার হয়। রাশিয়া চায় টাইব্রেকারে নিয়ে যেতে খেলা। তাই হয়। টাইব্রেকারে শুরুতে স্পেনের ইনিয়েস্তা গোল করেন (১-০)। রাশিয়ার এসমোলোভো গোল করেন (১-১)। এবার পিকে পা থেকে গোল আসে (২-১)। ইগনাসেভিচও গোল করেন (২-২)। কোকের শট ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক আকিনফিভ (২-২)। গোলোভিন এবার গোল করে রাশিয়াকে এগিয়ে দেন (২-৩)। রামোসও গোল করেন (৩-৩)। রাশিয়ার চেরিসেভও (৩-৪) গোল করে বসেন। এসপাসও (৩-৪) মিস করেন। গোলরক্ষক পায়ে টান দিয়ে গোল রক্ষা করেন। দুটি মিস করায় স্পেনের বিদায় ঘটে। রাশিয়া কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায়। এবার রাশিয়া বিশ্বকাপের ফেবারিট দলগুলোর মধ্যে আছে স্পেনও। গ্রুপ পর্বে ‘বি’ গ্রুপে থাকে দলটি। গ্রুপ সেরা হয়েই ‘শেষ ষোলো’তে খেলে। গ্রুপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। তবে গ্রুপ পর্বে বিশেষ ছন্দ ধরা পড়েনি স্পেনের। ‘শেষ ষোলো’তে ২০১০ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা হেরে যায়। রাশিয়া এবার বিশ্বকাপে স্বাগতিক। স্বাভাবিকভাবেই তাদের নিয়ে অনেক উত্তেজনা। রাশিয়া গ্রুপ পর্বে সেই উত্তেজনা ছড়িয়েছেও। দেখিয়েছে নিজেদের শক্তিমত্তাও। গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের গন্ডি অতিক্রম করা রাশিয়া এবার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। স্পেনের সঙ্গে সবসময়ই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে রাশিয়া। গতবছর সেন্ট পিটার্সবার্গেই দুই দলের মধ্যকার সর্বশেষ লড়াই হয়। সেই ফ্রেন্ডলি ম্যাচে হারেনি রাশিয়া। ম্যাচে গোল হয়েছে ৬টি। ৩-৩ গোলে ম্যাচ ড্র হয়েছে। এর আগে ২০০৬ সালে স্পেনে দুই দলের মধ্যকার ফ্রেন্ডলি ম্যাচটিও গোলশূন্য ড্র হয়েছে। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, শেষ দুটি ম্যাচে রাশিয়া দুর্দান্তই খেলেছিল। কিন্তু বিশ্বকাপে এর আগে দুই দল একবারও লড়াই করেনি। এবার প্রথমবার লড়াই হলো। প্রথম লড়াইয়ে জয় তুলে নিল রাশিয়া। জিতে স্পেনকে বিদায় করে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে রাশিয়া।
×