ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুন সিনেমা হল মালিককে দ্রুত ৯৯ কোটি দিতে ফের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২ জুলাই ২০১৮

 মুন সিনেমা হল মালিককে  দ্রুত ৯৯ কোটি দিতে ফের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর মুন সিনেমা হলের মালিককে দ্রুত ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধের আবারও নির্দেশ দিয়েছেন আপীল বিভাগ। ইতালিয়ান মার্বেল ওয়ার্ক লিমিটেডকে ওই অর্থ পরিশোধ করতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রতি এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এ বিষয়ে আগামী ১২ জুলাই পরবর্তী দিন ঠিক করেছেন আপীল বিভাগ। আদেশ থাকা সত্ত্বেও অর্থ পরিশোধ না করায় আদালত অবমাননার অভিযোগে এক আবেদনের শুনানি নিয়ে রবিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপীল বেঞ্চ মৌখিকভাবে এ আদেশ দেয়। আদালত বলেছে, অর্থ পরিশোধ না করলে সংশ্লিষ্ট সকলকে তলব করা হবে। এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি আপীল বিভাগ একবার আদেশ দিয়েছিলেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মুন সিনেমা হলের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। পরে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ওই অর্থ পরিশোধ করতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট সমর্থ নয় এটি আজ আদালতকে জানালে আদালত এ আদেশ দেয়। পরবর্তী শুনানি অন্তে আদেশের জন্য ১২ জুলাই দিন ঠিক করে দেয়। এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি মুন সিনেমা হলের মালিককে তিন কিস্তিতে ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগ। কিস্তির ওই অর্থ প্রথম দুই মাসের মধ্যে ২৫ কোটি, দ্বিতীয় দুই মাসের মধ্যে বাকি ২৫ কোটি ও চলতি বছরের ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে বাকি অর্থ পরিশোধ করতে বলেছিল আদালত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করায় আদালতে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। এর প্রেক্ষিতে আপীল আদালত দ্রুত ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধ করতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে নির্দেশ দেয়। মামলার বিবরণে জানা যায়, পুরান ঢাকার ওয়াইজ ঘাটে এক সময়ে মুন সিনেমা হলের মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। ইটালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম এই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করেন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ঘোষিত এক সামরিক ফরমানে সরকার কোন সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না বলা হয়। ইটালিয়ান মার্বেল ২০০০ সালে হাইকোর্টে ওই ফরমানসহ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করেন। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেয়। মোশতাক, সায়েম ও জিয়ার ক্ষমতাগ্রহণ সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা হয় ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। আপীল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। পাশাপাশি ৯০ দিনের মধ্যে ইটালিয়ান মার্বেলকে মুন সিনেমা হল ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে নির্দেশ দেয়া হয়। এ অবস্থায় সম্পত্তি ফিরে পেতে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কর্স কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি আপীল বিভাগ ওই সম্পত্তি অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ এক প্রকৌশলীকে দিয়ে জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে দিয়ে এই মূল্য নির্ধারণ করতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই প্রতিবেদন অনুসারে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৯৯ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয় আপীল বিভাগ।
×