ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সমস্যা

কক্সবাজারে দু’শতাধিক এনজিওর প্রত্যাবাসন বিরোধী তৎপরতা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২ জুলাই ২০১৮

  কক্সবাজারে দু’শতাধিক এনজিওর প্রত্যাবাসন বিরোধী তৎপরতা

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ দিন যতই গড়াচ্ছে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ইস্যু নিয়ে সন্দেহের দানা ততই বিস্তৃতি লাভ করছে। মিয়ানমার এমনিতেই এ বিষয়ে আন্তরিক নয়। বিশ্ব চাপের মুখে ইতোমধ্যে তারা যেসব ঘোষণা দিয়েছে তাতেও তাদের ধীরগতি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। এর ওপর রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছে এমন কিছু এনজিও বিষয়টিকে ঘোলাটে অর্থাৎ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যাতে দীর্ঘস্থায়ী হয় তা নিয়েই তৎপর। জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দুই শতাধিক এনজিও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কাজ করছে। এগুলোর মধ্যে আরব দেশসমূহের ইসলামী ব্যানারের এনজিওর কার্যক্রম সাহায্য সহায়তাভিত্তিক হলেও প্রকারান্তরে প্রত্যাবাসনমুখী নয় বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোপূর্বে রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ২১ ঘাঁটিতে হামলার ঘটনাটির জন্য মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে দায়ী করে আসছে। এর মধ্যে আরসা অন্যতম। আরসা গ্রুপ প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনীর নামটি রয়েছে সর্বাগ্রে। যিনি ইতোমধ্যে মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন বলে অসমর্থিত বিভিন্ন সূত্রে খবর মিলেছে। আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপগুলো তাদের স্বার্থ হাসিলে ইসলামী ব্যানারের এনজিওগুলোর সহায়তা পাচ্ছে। এসব এনজিও সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রোহিঙ্গাদের নগদ টাকাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা দিচ্ছে। এদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরএসও, এআরইউ অন্যতম। ইউরোপ, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মান, ফ্রান্স, তুরস্কসহ কয়েকটি দেশের এনজিও রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর নেতাদের মাধ্যমে যোগসাজশ রেখে কিছু অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের পুরনো নেতা আবু সিদ্দিক আরমান, সেলিম উল্লাহ, মৌলবি ওসমান, জোবায়ের, মৌলবি সফিক, আবদুল হামিদ, রুহুল আমিন, নুর হোসেন, মোঃ আয়াজ, আবদুর রহিম, হাফেজ মোঃ হাসিম বিদেশ থেকে নগদ অর্থ আনতে সক্ষম হয়েছেন, যার কিছু অংশ রোহিঙ্গাদের মাঝে ইতোমধ্যে বণটন করা হয়েছে। আবু সিদ্দিক আরমান বর্তমানে কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। ইতোপূর্বে রামুতে গোপন বৈঠককালে যে ৬ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করেছিল তাদের নেতৃত্ব দিয়েছিল আবু সিদ্দিক আরমান। বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো উদ্ঘাটন করেছে। এদিকে, আতাউল্লাহ জুনুনীর আরসার কিছু নেতার নেতৃত্বে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিঘœ করার অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন আরএসও, এআরইউসহ কয়েকটি সংগঠন নিজেদের অপস্বার্থ হাসিল করার লক্ষ্যে রাখাইন রাজ্যে বিভিন্ন অপকর্ম চালানোর অভিযোগও রয়েছে। রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য নগদ অর্থের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি আসে সৌদি আরব থেকে। এর পাশাপাশি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীগ্রুপগুলোর কিছু সদস্যের অস্ত্র প্রশিক্ষণও রয়েছে। এরা প্রত্যাবাসনবিরোধী এবং এরাই রোহিঙ্গা আশ্রয় ক্যাম্পে খুন, অপহরণ, গোলাগুলি, মুক্তিপণ আদায়সহ বিভিন্ন নাশকতার ঘটনা ঘটাচ্ছে। আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গা ক্যাডারদের বেপরোয়া আচরণে স্থানীয়রাও আতঙ্কিত। ক্যাম্পগুলোতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ও সন্ত্রাসী তৎপরতা দিন দিন বাড়ছে। সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে যারা নিজ ভূমে ফিরে যাওয়ার মত ব্যক্ত করছে তাদেরকে হুমকি ধমকির মধ্যে রাখা হয়েছে। এদের কয়েকজনকে ইতোমধ্যে গুম করার ঘটনাও ঘটেছে। রোহিঙ্গারা কিছু দাবি তুলে প্রত্যাবাসনবিরোধী তৎপরতায় নেমে পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করছে। চিহ্নিত কিছু এনজিও কর্মীর উস্কানিতে রোহিঙ্গারা কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে অবরোধ সৃষ্টির ঘটনাও ঘটিয়েছে। বর্তমানে বার লক্ষাধিক যে রোহিঙ্গা টেকনাফ উখিয়া অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেখানে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অবাধ বিচরণ রয়েছে। যা আগামী দিনগুলোর জন্য অশনি সঙ্কেত হিসেবে ধারণা দিয়েছে স্থানীয়রা। এদিকে, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিং ইয়ং কিম আজ সোমবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে তারা ঢাকায় পৌঁছেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। দুই সংস্থার শীর্ষ এই দুই প্রধানের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকে কেন্দ্র করে প্রশাসন ইতোমধ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কক্সবাজারে তাদের আগমন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং ফিরে যাওয়া পর্যন্ত নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যকর থাকবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে।
×