ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের বৈঠক

ত্রাণ সহায়তা ছাড়া মিয়ানমারে অর্থায়ন বন্ধ বিশ্বব্যাংকের

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২ জুলাই ২০১৮

  ত্রাণ সহায়তা ছাড়া মিয়ানমারে অর্থায়ন বন্ধ বিশ্বব্যাংকের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ত্রাণ সহায়তা ছাড়া অন্য সব প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ রেখে মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরি করছে বিশ্বব্যাংক। রবিবার সকালে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সাক্ষাত করেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। পরে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘ মহাসচিবের একাধিক বৈঠক হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের প্রশ্নে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের বাংলাদেশ সফরকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এর প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলতে পারি, আজকের দিন বাংলাদেশ সরকারের জন্য ভাল দিন। অর্থমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের এই সফর মূলত রোহিঙ্গা সমস্যা সরেজমিন দেখার জন্য। এ জন্য আমরা এ দুই সংস্থার প্রতি কৃতজ্ঞ। গুতেরেস ও কিমের সফরের মধ্য দিয়ে বিশ্বকে বোঝানো গেছে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যা কতটা প্রকট। কত বড় দায় আমাদের ঘাড়ে একথা আমরা বিশ্ববাসীকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি তাদের সফরের কারণে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ নেয়া উচিত ছিল। রোহিঙ্গাদের দায় নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন গুতেরেস ও কিম। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এই দুই নেতাকে বাংলাদেশ বলেছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারকে ফিরিয়ে নিতে হবে পুরো নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এ জন্য রাখাইনে একটি ‘সেফ জোন’ করা যেতে পারে। যদি জাতিসংঘ টেককেয়ার করে, তা সম্ভব। বাংলাদেশের তরফে এমন কথা বলা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, এই দুজনের বাংলাদেশের সফর মিয়ানমারের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মিয়ানমারে সব প্রকল্প স্থগিত করেছে বিশ্বব্যাংক। তিনি বলেন, মিয়ানমার অনেক আগে থেকেই রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। তারা খাদ্য পায় না। শিক্ষা পায় না। তারা চিকিৎসা পায় না। অথচ মিয়ানমার একটি ধনী দেশ। গুতেরেস ও কিমের এই সফরের মধ্য দিয়ে কি বাংলাদেশ আশা করতে পারে রোহিঙ্গারা শিগগিরই মিয়ানমারে ফেরত যাবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রুতি টোটালি রাবিশ। তাদের কথার ওপর বিশ্বাস রাখা যায় না। ওরা বিশ্বকে দেখাতে সামান্য কিছু লোক নিয়ে যেতেও পারে। তাতে মূল সমস্যার সমাধান হবে না। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গাদের জন্য ৪৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দেবে। এ অর্থ তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য ও স্যানিটেশনের জন্য ব্যয় করা হবে। আজ থেকে কার্যকর হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে রোহিঙ্গাদের জন্য ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী জানান, এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের কোন অর্থ ব্যয় হয়নি। রোহিঙ্গাদের জন্য যা ব্যয় হয়েছে তার সবই পাওয়া গেছে অনুদান হিসেবে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তির কাছ থেকে। রোহিঙ্গাদের জন্য আরও অনুদান প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। অর্থমন্ত্রী বলেন, সকালে প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও সরকারের পাঁচ মন্ত্রীসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে লম্বা মিটিং হয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘ মহাসচিবের। সে কারণে আমি বলতে পারি আজকের দিন বাংলাদেশ সরকারের জন্য ‘গুড ডে’। বিশ্বব্যাংকের ৪৮০ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই ৪৮০ মিলিয়ন ডলার শতভাগ অনুদান। যেকোন সময় ৫০ ছাড় করবে তারা। বাকিটা আগামী দুই বছরের মধ্যে দেবে। বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে। পুরনো আছে ৪ লাখ ৭০ হাজার। গত বছরে এসেছে প্রায় ১১ লাখ। মোট ১৫ লাখ ৭০ হাজার বাংলাদেশে রয়েছে। কবে নাগাদ রোহিঙ্গাদের ভাষাণচরে স্থানান্তর করা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেন, আপাতত এক লাখ স্থানান্তর করা হবে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। ভাষাণচরকে বসবাসের উপযোগী করতে বাংলাদেশের নৌবাহিনী কাজ করছে।
×