ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কলকাঠি নাড়ার নায়ক রাশেদ খান গ্রেফতার

শিবির-জামায়াতের চেষ্টা সরকার পতনের ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঢাল করে-

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২ জুলাই ২০১৮

  শিবির-জামায়াতের চেষ্টা সরকার পতনের ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঢাল করে-

বিভাষ বাড়ৈ ॥ সাধারণ শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে অস্থিরতা সৃষ্টি চেষ্টার মধ্য দিয়ে সরকার পতনের রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ দেয়ার চক্রান্ত করছে কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলন। কথিত সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের শীর্ষ কয়েক নেতার হাত ধরে আন্দোলনের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে জামায়াত-শিবির ও তাদের মদদপুষ্টদের হাতে। শিবিরের বাঁশের কেল্লাসহ প্রতিটি উগ্রবাদী ফেসবুক পেজ থেকে দেয়া হচ্ছে উস্কানি। তথ্য মিলছে আন্দোলনে বিশেষ গোষ্ঠীর ফন্ডিংয়েরও। শিবিরের হয়ে কলকাঠি নাড়ার অন্যতম নায়ক রাশেদ খানকে প্রযুক্তি আইনে রবিবার গ্রেফতার করা হয়েছে। এক ভিডিও বার্তায় খোদ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও নাশকতায় উস্কানি দেয়ার পর দাবি উঠেছে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার। এদিকে কোটা তুলে দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা এবং আন্দোলননে সাধারণ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ থাকায় এতদিন নমনীয় থাকলেও এবার শক্ত অবস্থানে যাচ্ছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোও। একই অবস্থানের কথা জানিয়েছে খোদ আন্দোলনের শুরু থেকে সক্রিয় থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীসহ অনেক ছাত্র নেতাও। আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল-কায়েদার নেতাদের মতো রাশেদ খানের ভিডিও বার্তায় রীতিমতো নাশকতার উস্কানি দেয়া ও বাকি কয়েক নেতার সরকার বিরোধী চেহারা বেরিয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ওদের আসল চেহারা শীর্ষ পদে থাকা শিবির নেতারাই প্রকাশ করে ফেলেছেন। এখন আর কোন ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পর কোটা সংস্কারে সরকার গঠিত কমিটির কাজ করার মধ্যেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির সকল চিত্র এখন পরিষ্কার। সেই রাশেদ খান গ্রেফতার॥ সরকারী চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রাশেদ খানকে রবিবার গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজধানীর ভাষানটেক থেকে গ্রেফতারের পর শাহবাগ থানায় দায়ের করা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, আল নাহিয়ান খান জয় নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীর আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় করা মামলায় রাশেদ খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে এই মামলার এজাহারনামায় একমাত্র অভিযুক্ত। জানা গেছে, আল নাহিয়ান খান জয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র। মামলার বিষয়ে তিনি জানান, পুলিশ সদর দফতরের অনুমতি নিয়ে ১ জুলাই রাতে তিনি শাহবাগ থানায় রাশেদের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন। কারণ জানতে চাইলে এ ছাত্র নেতা বলেন, রাশেদ ২৭ জুন সন্ধ্যা ৮টায় ফেসবুক লাইভে এসে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন ‘মনে হচ্ছে তার বাপের দেশ, সে একাই দেশের মালিক। তিনি যা ইচ্ছা তাই বলবেন আর আমরা কোন কথা বলতে পারব না’। এছাড়াও রাশেদ বিভিন্ন সময় ফেসবুক লাইভে এসে গুজব ছড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়েছে, এই বিষয়টার জন্য আমি মামলা করেছি। এর আগে সকালেই শিবিরের বাঁশের কেল্লার মাধ্যমে নিজের অবস্থান জানান দেন রাশেদ। সকালে ফেসবুক লাইভে এসে গোয়েন্দা পুলিশ তার পিছু নিয়েছে বলে জানায়। বাঁশের কেল্লায় সঙ্গে সঙ্গে প্রচার করা হয় রাশেদের ভিডিও বার্তা। একই সঙ্গে ভিডিও চলে যায় শিবিরের অনলাইন পোর্টাল এনালাইসিস বিডি, সংবাদ২৪/৭, আন্দোলন নিউজ লাইভসহ বিভিন্ন মাধ্যমে। যেখানে বলতে শোনা যায়, আমাকে ডিবি ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমাকে ডিবি ঘিরে ফেলেছে। আমাকে আপনারা বাঁচান...। ভিডিও বার্তায় উগ্র চেহারায় রাশেদ এবং কথিত আন্দোলন॥ কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ খানের ফেসবুকে লাইভে এসে প্রায় সাড়ে ১৮ মিনিটের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। আর সেই মামলাতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত ২৭ জুন এই ভিডিওটি পোস্ট করা হয় ফেসবুকে যেখানে তিনি বারবার ছাত্রদেরকে বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে এসে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রবাসীদেরকে বলেছেন, তাদের পাঠানো রেমিটেন্স ভিন্নখাতে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণাকে তার নাম উল্লেখ না করে একাধিকবার প্রতারণা বলে উল্লেখ করেছে রাশেদ। বলেছে, ‘মনে হচ্ছে এই দেশ তার বাপের দেশ। মনে হচ্ছে তার বাপের দেশ। সে একাই দেশের মালিক। ইচ্ছামতো যা ইচ্ছা বলবে, আর আমরা কোন কথা বলতে পারব না।’ সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান তার ভিডিওতে আরও বলেন, ‘বাংলার ছাত্র সমাজ যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, শুধুমাত্র সেই আন্দোলনকে দমন করার জন্য আমাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। আর সে কারণেই দীর্ঘ আড়াই মাস শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। এর অর্থ কী বোঝায়? এর অর্থ যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল, যে গণআন্দোলন সৃষ্টি হয়েছিল, সে আন্দোলনকে শুধুমাত্র বন্ধ করার জন্য আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। বাংলার ছাত্র সমাজের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। আমরা বলে দিতে চাই, যদি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয় যদি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়, তাহলে তার পরিণাম কিন্তু ভাল হবে না। বাংলার ছাত্র সমাজ কঠোর হস্তে তা দমন করবে।’ রাশেদ তার ভিডিও বার্তাটি দিয়েছেন সংবাদ পড়ে। যেখানে বলা হয়, কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে কোন অগ্রগতি নেই। খবরটি পড়ে রাশেদের রক্ত গরম হয়ে গিয়েছিল এবং তার ভিডিওতে বিভিন্ন কমেন্ট পড়ে তার মনে হয়েছে, বাংলার ছাত্র সমাজেরও রক্ত গরম হয়ে গেছে। রাশেদ মনে করেন, এখনও যে ছাত্রদের রক্ত গরম হয়নি তার রক্ত নেই। যারা আন্দোলনে নামবে না, তারা কাপুরুষ। দেশবাসীকে রাজপথে নামতে বারবার আহ্বান জানাতে থাকেন রাশেদ। বলেন, আপনারা সবাই জেগে উঠুন, যারা এখনও ক্যাম্পাসে আসেননি তারা অতি দ্রুত ক্যাম্পাসে আসুন। অতি দ্রুত ক্যাম্পাসে ফিরে আসুন। অনেক ছুটি কাটিয়েছেন, অনেক আনন্দ করেছেন, আর নয়। এবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসুন। দ্রুত রাজপথে নামতে হবে। আপনারা অতি দ্রুত ক্যাম্পাসমুখী হন, ক্যাম্পাসে ফিরে আসুন। আপনাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই নির্লজ্জ সংবাদের জবাব দেব। ‘যৌক্তিক আন্দোলনে’ যারা আসে না তাদের পড়ালেখারও দরকার নেই বলেও মনে করেন রাশেদ। রাস্তায় নেমে কেবল রাজপথ বন্ধ করা হয়েছে জানিয়ে রাশেদ বলেন, এবার কিন্তু নৌপথ বন্ধ হবে, আকাশপথ বন্ধ হবে। বাংলাদেশে কোন মিল কারখানা চলবে না। যদি প্রজ্ঞাপন দেয়া না হয়. সব কিছু অচল করে দেয়া হবে। প্রবাসীদের সহযোগিতাও কামনা করেছেন রাশেদ। বিশ্বের যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশী ছাত্ররা পড়াশোনা করছেন, তাদেরকে যেন সেসব দেশে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে মানববন্ধন করারও আহ্বান জানান। বলেন, তারা যে রেমিটেন্স পাঠান, তাকে ভিন্নখাতে ব্যবহার করা হয়। এবার শক্ত অবস্থানের পক্ষে ছাত্র নেতারা ॥ ছাত্রলীগের সদ্য বিদায়ী কমিটির সহসভাপতি চৈতালী হালদার চৈতি বলেছেন, এ আন্দোলনের শীর্ষ ব্যক্তিদের চেহারা আর গোপন নেই। আল কায়েদার মতো রাশেদ যেভাবে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে আর কিছু প্রমাণের দরকার নেই। এবার সরকারের শক্ত অবস্থানের কোন বিকল্প নেই। যেখানে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর কমিটি কাজ করছে সেখানে নতুন করে অস্থিরতা মানা যায় না। সহসভাপতি ইমতিয়াজ বাপ্পি ফেসবুকে লেখেন, কোটাফোটা আর বুঝি না আমাদের একমাত্র আশ্রয়ের জায়গা দেশরতœ শেখ হাসিনাকে নিয়ে যারা ধৃষ্টতাপূর্ণ কথাবার্তা বলবে সে যেই হোক আর যত বড় ব্যাকআপ নিয়েই থাকুক বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না। রাশেদের কত বড় বাপ আছে দেখব আমি। আর কে পদক্ষেপ নিক আর না নিক রাশেদকে যেখানে পাব সেখানেই মাটিতে পুঁতে ফেলব। পারলে মাঠে আয় ফেসবুকে ম্যা ম্যা না করে...। ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘শিবির রাশেদ তার আসল পরিচয় প্রকাশ করল... কারণ সে জামায়াত-শিবিরের এজেন্ট হিসেবে যেকোনভাবেই সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে চায়।’ ‘রাশেদ শিবির প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সূর্যসেন হল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। সদ্য বিদায়ী কমিটির উপ স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক অসিম কুমার বৈদ্য বলছিলেন, এখন আর কিছু গোপন নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে সরকার কাজ করছে। সেখানে রাশেদের ভিডিও বার্তার মাধ্যমে উস্কানি অস্থিরতা সৃষ্টি ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন শক্ত হাতে দমন করতে হবে যে কোন অপতৎপরতা। আন্দোলনে এবার অপপ্রচারের অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সুফিয়া কামাল হল। এ হল শাখার ছাত্র লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় অর্থ বিষয়ক উপসম্পাদক তিলোত্তমা সিকদার বলছিলেন, এটা তো পরিষ্কারÑ আন্দোলনের পেছনে আছে বিশেষ গোষ্ঠী যারা সরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয়। রাশেদের ভিডিও বার্তার পর আর কিছু আড়ালে নেই। সাধারণন শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করে সরকার বিরোধীরা ফায়দা লুটতে চায়। কিন্তু এবার আর চুপ করে থাকা যাবে না। সংস্কার আন্দোলনে শুরু থেকে থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ও সে অনুসারে কাজ শুরুর পর ঘরে ফিরেছেন তানভীর সৈকত। তিনি বলছিলেন, এখন যারা আন্দোলন করছেন তাদের উদ্দেশ্য সরকার বিরোধী বড় ধরনের নাশকতা। আমরা আহত হয়েছি আন্দোলনে। কিন্তু ওরা এখন আসলে সরকার বিরোধী আন্দোলন করছে। এখন আর কোটা সংস্কারের আন্দোলন নেই। যার মামলায় গ্রেফতার হয়েছে রাশেদ সেই ছাত্র নেতা আল নাহিয়ান খান জয় মনে করেন, রাশেদ বিভিন্ন সময় ফেসবুক লাইভে এসে গুজব ছড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়েছে, এই বিষয়টার জন্য আমি মামলা করেছি। এখন ওদের চেহারা পরিষ্কার। সকলকে সতর্ক হতেই হবে। অনুসন্ধানে আরও উদ্বেগজনক চিত্র আসছে ॥ জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে রেখে পেছন থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছিলেন রাশেদ খান ও তার সহযোগীরা। এর আগে কোটা আন্দোলনকে সহিংস রূপ দেয়ায়, এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে হামলা করে আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ দেয়ার অপচেষ্টা চালানোর মতো পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হয় রাশেদের হাত ধরে। আন্দোলনকে সহিংস করতে বাঁশের কেল্লাসহ নিজস্ব ফেসবুক পেজ ও নিউজ পোর্টালে মিথ্যা তথ্য প্রচার করেন রাশেদসহ শিবিরের একাধিক কর্মী। এর আগে ছাত্র শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার জন্য সূর্য সেন হল থেকে রাশেদকে বহিষ্কারও করা হয়। আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত-শিবির। রাশেদের জন্ম ঝিনাইদহ জেলার মুরারীদহ গ্রামে। তার বাবা মোঃ নবাই বিশ্বাস এলাকায় একজন স্বীকৃত জামায়াত কর্মী। তারই আদর্শে গড়ে ওঠা রাশেদ নিজেকে শিবিরের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলে। তার বাবা স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশবিরোধী অবস্থানের জন্য নিজ এলাকায় পরিচিত। জানা গেছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারকে বিব্রত করতে এখন নতুন করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী চরম সহিংসতায় তৎপর জামায়াত-শিবির ও বিএনপির একশ্রেণীর নেতাকর্মী। এতে বিশেষভাবে তৎপর ছিল জামায়াত-শিবির। তারা দেশজুড়ে আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে। মূলত রাশেদকে এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পথভ্রষ্ট করে বিশৃঙ্খলা তৈরিই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। এবার আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণার দুদিন আগে কুষ্টিয়াসহ দেশের কয়েকটি স্থান থেকে শিবির ও ছাত্রী সংস্থার কর্মীদের ঢাকায় জড়ো করা হয়। এর নেতৃত্বে ছিলেন শিবির কর্মী রাশেদ। এ আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল, যে ঘোষণাই দেয়া হোক না কেন দাবি না মেনে আন্দোলনকে দীর্ঘায়িত করা এবং নাশকতামূলক কর্মকা- চালিয়ে ও হামলা চালানো হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়ে সারাদেশে আন্দোলন বিস্তৃত করা। এক পর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এনে বিএনপি-জামায়াত একাত্মতা ঘোষণা করলে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপদান করা। রাশেদের আদর্শ সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হওয়া যায় তার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন স্ট্যাটাসের মাধ্যমে। প্রমাণ মিলেছে রাশেদ খানের এ্যাকাউন্ট থেকে শিবিরের বিভিন্ন পেজে লাইক-কমেন্ট শেয়ার থেকেও। নিজের ফেসবুক এ্যাকাউন্টের একটি স্ট্যাটাস উল্লেখ করলে বোঝা যায় শিবিরের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা। তিনি লিখেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখপাত্রের নামের তালিকা: কেন্দ্রীয় ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসাইন, ছাত্র শিবিরের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন আইয়ূবী, স্কুল কার্যক্রম বিষয়ক সম্পাদক মাশরুর হোসাইন, প্রকাশনা সম্পাদক সালাউদ্দিন মাহমুদ, বিতর্ক বিভাগের সভাপতি আল মামুন রাসেল। ফেসবুকের আরেক পাতায় রাশেদ খান লিখেছেন, ‘একমাত্র ইসলামের ছায়াতলে রয়েছে শান্তির ঠিকানা।’ এই শিরোনামের নিচে রয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের বিকৃত করা পাঁচটি ছবি। রাশেদ তার ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা ছাত্রীদের নিয়েও অশ্লীল কথা লিখেছেন বিভিন্ন সময়। রমজান মাসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন। এক সময় ছাত্রলীগের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য মিললেও নুরুল হক নুরের তৎপরতা নিয়ে এখন শিক্ষার্থীরা নিশ্চিত যে সে ছিল অনুপ্রবেশকারী। পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানকে নিয়েও আছে প্রশ্ন। মামুন ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা ছিল বলে ইতোমধ্যেই তথ্য মিলছে। ২০১৩-এ রাজাকারদের সমর্থনে আন্দোলন সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। অতঃপর দুই জামায়াত নেতার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ইসলামী ব্যাংকে চাকরি নেন। পরবর্তীতে শিবির নিয়ন্ত্রিত একটি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ৩৬তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়। মহিলা ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ পাওয়ার পরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জামায়াতের পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালায়। ছাত্রী সংস্থার কয়ক নেত্রীকে জিহাদী বইসহ গ্রেফতার করা হলে প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্ট দেয় ফেসবুকে। যুগ্ম আহ্বায়ক ফাররুক হোসেন। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদরে। বালিয়াডাঙ্গি সমীর উদ্দিন কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছিল। সেখানে ছাত্রলীগে যোগ দিতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জানে সে শিবিরের কর্মকা-ে জড়িত। এ কারণে সে ছাত্রলীগে যোগদান করতে পারেনি। এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এসএম হলের তৎকালীন ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হয়। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলেন, এখানে এসে শিবিরে যোগ দেয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের কর্মকা- না থাকায় পরে কৌশলে ছাত্রলীগে যোগ দেয়। কিন্তু আদর্শ বহন করে শিবিরের।
×