ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাসিক নির্বাচন

রাজশাহীকে মেগাসিটি করার স্বপ্ন লিটনের, টার্গেট কর্মসংস্থান

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২ জুলাই ২০১৮

 রাজশাহীকে মেগাসিটি করার স্বপ্ন লিটনের, টার্গেট কর্মসংস্থান

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ শহরের আওতা বাড়িয়ে রাজশাহীকে মেগাসিটি হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে ভোটের মাঠে এগিয়ে চলেছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তিনি এমন আশ্বাস দিচ্ছেন। তার স্বপ্নের কথা জানাচ্ছেন নগরবাসীকে। নির্বাচিত হলে গত পাঁচ বছরে পিছিয়ে যাওয়া রাজশাহীকে নতুনভাবে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে লিটনের। ইতোমধ্যে রাজশাহী নগরীকে প্রায় সাড়ে তিন শ’ বর্গকিলোমিটারে মেগাসিটির ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, নির্বাচিত হলে নতুন প্রজন্মের বড় অংশের কর্মস্থানের টার্গেট নিয়ে এগুচ্ছেন তিনি। বিভিন্ন সভায় তার পরিকল্পার কথাও তুলে ধরছেন লিটন। তিনি বলেন, শিল্প-কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে রাজশাহীতে লক্ষাধিক ছেলেমেয়ের চাকরির ব্যবস্থা করা সম্ভব। সুযোগ পেলে আগামীতে এ কাজ করবেন তিনি। খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, গত টার্মে রাজশাহীতে গ্যাস এনেছি শুধু বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহারে জন্য নয়। রাজশাহীতে এক শ’ শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা করার জায়গা আছে। আগামীতে গ্যাস থেকে বিদ্যুত উৎপাদন করে শিল্প কারখানা, গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আর এর মাধ্যমে রাজশাহীতে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব হবে। পাঁচ বছর আগে রাজশাহী নগর উন্নয়নে যে গতিধারা শুরু হয়েছিল তা ক্রমেই পিছিয়ে পড়েছে। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনের পর রাজশাহীকে অন্তত ১৫ বছর পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। উন্নয়নে পিছিয়ে দেয়া সেই নগরে আবারও গতি ফেরানোর টার্গেট এবার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের। আর এমন ভাবনা ভোটারদের মধ্যে জাগ্রত করতে এবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছে রাজশাহী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। এ জন্য তরুণ ভোটারদের কাছে টানার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাজশাহী সিটিতে এবার বিপুল সংখ্যক নতুন ভোটার হয়েছেন। তারাও লিটনের পক্ষে উন্নয়ন ভাবনায় যুক্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বাদশা বলেন, খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র থাকাকালে রাজশাহীর যে উন্নয়ন হয়েছে তার সুনাম এখনও আছে। ঢাকায় গেলে সবাই বলে, রাজশাহী একটা পরিচ্ছন্ন শহর। কিন্তু এই শহরের সৌন্দর্য অনেকটাই বিলীন হয়ে গেছে শুধু গত সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার কারণে। এ কারণে তিনি রাজশাহীর উন্নয়নে কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি। এদিকে লিটন-বাদশার ভাবনার সঙ্গে এক হয়েছেন এবার রাজশাহীর ভোটাররা। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা এবার অগে থেকেই উন্নয়নের জন্য লিটনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। রাজশাহী নগরীর তরুণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা উন্নয়নের পক্ষে। গত ৫ বছর রাজশাহী যেভাবে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে তারা তা টের পেয়েছেন। কলেজ পড়ুয়া তাসনীম তন্নী, মাহাজুবা লীন, পল্লব ম-ল, আবু আহমেদ এবার রাজশাহী নগরীর প্রথম ভোটার হয়েছেন। খায়রুজ্জামান লিটন ও মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের দুই টার্ম তুলনা করে নতুন এই ভোটাররা এরই মধ্যে লিটনের পক্ষে আওয়াজ তুলেছেন। তারা বলছেন, নিজের চোখে লিটনের ৫ বছর আর বুলবুলের ৫ বছর দেখেছেন। কিভাবে উন্নয়নের গতিধারা স্থবির করে দেয়া হয়েছে তাও অবলোকন করেছেন। রাজশাহীর উন্নয়নে লিটনের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করে নতুন ভোটারদের একটি অংশ বলেন, এক সময় পদ্মাপারে তরুণদের ভিড় থাকত সবসময়। এখনও তরুণরা আসে। তবে আগের সেই উৎসাহ নেই। বিকল হয়ে আছে ওয়াইফাই জোন। বিনোদনকেন্দ্রগুলোর অবস্থাও বেহাল। বুলবুলের কোন উন্নয়ন চোখে পড়েনি বলেও জানান নতুন ভোটাররা। রাজশাহী নগরীর সাংস্কৃতিক কর্মী কামারুল্লাহ সরকার বলেন, লিটনের আমলে রাজশাহীর পদ্মাতীরকে মনোরম বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়। সেখানে সংযোজন করা হয় ওয়াইফাই। ল্যাপটপ নিয়ে তরুণের মেলা বসত সেখানে। নগরবাসীর প্রায় সবার প্রাণের কেন্দ্রে পরিণত হয় পদ্মাতীরের এই ওয়াইফাই জোন। এখনও এখানে অনেক মানুষ আসছে। কিন্তু তাদের মধ্যে আগের সেই উৎসাহ নেই। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে ওয়াইফাই প্রযুক্তি বিকল। এখন আর সেই সুবিধা নেই। এখন সবাই আসে পদ্মার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। তবে নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না এলাকাটি। নগরীর বড়কুঠির বিনোদনকেন্দ্র, উন্মুক্ত মঞ্চ ও তালাইমারী শহীদ মিনার চত্বরের পরিবেশ দিন দিন নোংরা হয়ে গেছে। পদ্মাপারে এখন গরুর খামার গড়ে তোলা হয়েছে। গত ৫ বছরেও মেয়র বুলবুল তা সরাতে পারেনি। এমন মেয়র আর নয় বলেও মত দেন তিনি। আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী সিটি ভোট। কিন্তু গেল ৫ বছরে রাজশাহী বদলে গেছে অনেকটা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী অনেকটা বিবর্ণ। নেই ওয়াইফাই জোন, থমকে আছে বহুতল ভবন নির্মাণ। বেতনভাতা নিয়ে রাসিক কর্মীদের আন্দোলন চলছেই। পদ্মাপারের সেই পরিচ্ছন্ন ও সৌন্দর্যের শহরে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। সাড়ে চার বছরে বিমোহিত রূপ কোথায় যেন উধাও! নতুন ভোটার ছাড়াও বাইরে থেকে যারা আসছেন শুধু তারাই নন, স্থানীয়দের কাছেও শহরের সৌন্দর্যের এ অবনতির বিষয়টি পরিষ্কার। নগর হাসপাতাল, বিনোদনকেন্দ্রের অবস্থা বেহাল, থেমে গেছে মশক নিধন কার্যক্রম। বেশিরভাগ মানুষ একবাক্যেই বলছেন, গত নির্বাচনে (২০১৩) মেয়র পরিবর্তনের পর সব সেবায় ধস নেমেছে। এ অবস্থায় সদ্য বিদায়ী মেয়রের মেয়াদকাল মূল্যায়ন করে সাবেক মেয়র এবং আসন্ন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মনে করেন, নগরীর সেবা কার্যক্রমগুলো ধীরে ধীরে ভেঙ্গে পড়ছে। নতুন কোন কাজ করেননি বিএনপির মেয়র। তিনি মনে করেন সদ্য বিদায়ী মেয়রের যোগ্যতা ও নেতৃত্বের ঘাটতির কারণে রাজশাহী পিছিয়ে পড়েছে। গতি পায়নি কোন উন্নয়ন কার্যক্রমে। তবে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, নগরীতে মানুষ বাড়লেও সেই তুলনায় কর্মী ও যন্ত্রপাতি বাড়েনি। তারপরও প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে তার আমলে। এ অবস্থায় আগামীতে সুযোগ পেলে পরিষ্কার নগরীর প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন তিনিও। পাঁচ মেয়র প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শুরু হয়েছে। রবিবার মেয়র পদের প্রার্থিতা বাছাই করা হয়েছে। এতে ভুয়া সমর্থকের স্বাক্ষর দেয়ায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। রবিবার রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে যাচাই-বাছাই শেষে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবং অপর তিন মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। সহকারী রিটার্নিং অফিসার আতিয়ার রহমান জানান, নিয়ম অনুযায়ী স্বতন্ত্রপ্রার্থী হতে ৩০০ জন সমর্থকের স্বাক্ষর প্রয়োজন। সমর্থক তালিকার ফরম পূরণ করা হলেও নাম অনুসারে বেশকিছু স্বাক্ষরের মিল পাওয়া যায়নি। এ কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আতিয়ার আরও বলেন, অপর পাঁচ প্রার্থী আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, বিএনপির মনোনীত মেয়রপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, জাতীয় পার্টির ওয়াশিউর রহমান দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির হাবিবুর রহমান ও ইসলামী আন্দোলনের সফিকুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থী আগামী তিনদিনের মধ্যে আপীল করতে পারবেন বলে জানান রিটার্নিং অফিসার। তফসিল অনুযায়ী গত ২৮ জুন মেয়র পদে ছয়জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। আগামী ৯ জুলাই রয়েছে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ জুলাই। আর ভোট গ্রহণ আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে।
×