ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষার অমূল্য দান বেলি

প্রিয় পরিচিত ফুল, সুরভিত চারপাশ

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২ জুলাই ২০১৮

প্রিয় পরিচিত ফুল, সুরভিত চারপাশ

মোরসালিন মিজান ॥ বাংলা সিনেমার একটি গান খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। বেশ শোনা যেত। এখনও কেউ কেউ গুনগুন করে গাওয়ার চেষ্টা করেন। গানটি- বেলি ফুলের মালা পরে এক প্রেমিক প্রিয়াকে ঘরে তুলেছে/যৌতুক টাকাকড়ি পায়ে দলেছে...। হ্যাঁ, যৌতুক টাকাকড়ির মতো পচা দুর্গন্ধযুক্ত কুপ্রথার বিপরীতে ভালবাসার জয়গান করা সুগন্ধি ফুলটি বেলি। এইটুকুন ফুলের এত ঘ্রাণ, এত যে, মন মুহূর্তেই আপ্লুত হয়। হৃদয়ের গভীর গোপন প্রেমের বোধটিকে জাগিয়ে দেয়। এখন বর্ষা। প্রিয় এই ঋতুর অন্যতম দান বেলি ফুল। নবধারা জলে গাছগুলো আরও সবুজ সতেজ হয়েছে। ফোটেছে শুভ্র সুন্দর ফুল। এই ফুল যারপরনাই প্রিয় এবং পরিচিত। বাগানে কত গাছ লাগানো থাকে। ফুলও অজস্র। কিন্তু বেলিকে চিনে নিতে কষ্ট হয় না। শখের বাগানে এর অন্তর্ভুক্তি বলা চলে বাধ্যতামূলক। প্রায় সব বাগানেই দেখা যায়। এখনও বেলির মিষ্টি ঘ্রাণ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। অনেক দূর থেকে নাকে এসে লাগে। সবার আগে ঘ্রাণ-ই বলে দেয়, আশপাশের কোথাও বেলি ফোটে আছে! ঘ্রাণের পাশাপাশি ধবধবে সাদা রঙের বেলি একটি পবিত্র অনুভূতির জন্ম দেয়। বেলি ফুলের মালার কথা আগেই বলা হয়েছে। সুঁই সুতোয় ফুলটিকে গেঁথে নিয়ে সুন্দর মালা তৈরি করা হয়। বহুকাল ধরে তৈরি হচ্ছে এ মালা। উচ্ছ্বল তরুণীরা বেলি ফুলের মালা যতœ করে খোঁপায় পেঁচিয়ে নেন। হাতে চুরির মতো পরেন। এর পর যেদিকে তারা হেঁটে যান, সেদিকেই ছড়িয়ে পরে বেলির সুবাস। রাজধানী ঢাকার রাস্তায় ফুটপাথে বিক্রি হয় বেলি ফুলের মালা। রবিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন ফুটপাথ ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় হঠাৎই চোখে পড়ে, দুজন মাঝবয়সী নারী আপন মনে বেলি ফুলের মালা গাঁথছেন। সামনে প্লাস্টিকের পুরনো গামলা ভর্তি ফুল। সেখান থেকে একটি করে তুলে নিয়ে মালা গাঁথার কাজ করছিলেন তারা। ফুটপাথের ওপর লম্বা করে পা ছড়িয়ে দিয়ে কাজ করতে করতে একজন বললেন, ‘এই ফুলের সুগন্ধ আছে। ভার্সিটির আফারা কিনে। খোঁপায় লাগায়া ঘুরে।’ তিনি জানান, একটি মালার দাম মাত্র ১০টাকা। এর প্রেক্ষিতে বলাই যায়, বিদেশী ব্র্যান্ডের সুগন্ধি তো প্রতিদিনই গায়ে মাখা হলো। হয়। একদিন বেলি ফুলের মালা খোঁপায় গেঁথে নিন। তারপর নিজেই অনুভব করবেন অলৌকিক আনন্দ। এবার কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক, বেলি ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম জেসমিনাম সামব্যাক। এটি মূলত পাহাড়ী উদ্ভিদ। হিমালয় অঞ্চলে বিশেষ চোখে পড়ে। আদি ভূমি ভারতীয় উপমহাদেশ। গুল্মজাতীয় গাছ উপরের দিকে খুব একটা বাড়ে না। ১ মিটারের মতো উঁচু হয়। ছোট-খাটো ঝোপঝাড়ের মতো দেখায়। কান্ড সরু এবং দুর্বল ধরনের হয়ে থাকে। কিছুটা লতার মতো। গাছের পাতা ছোট এবং গাঢ় সবুজ। ঘন পাতার মাঝে ছোট ছোট ফুল হয়। থোকা থোকা ফুলের পাপড়ি সুবিন্যস্ত। বেলির হাসির শুরুটা সন্ধ্যায়। এ সময় ফুল ফোটে। পরদিন দুপুরে ঝরে যায়। মাঝখানের সময়টুকু মিষ্টি ঘ্রাণে ভরিয়ে রাখে । উদ্ভিদবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে সাধারণত চার জাতের বেলি হয়। এগুলোর একটি রাই বেলি। এই গাছ দেড় থেকে দু’হাত লম্বা হয়। ফুল ছোট। পাপড়ি সুসজ্জিত হয়। ঘ্রাণ তীব্র। আরেক জাত খয়ে বেলি ছোট গাছ ধরনের। প্রচুর ফুল ফোটে। এটিও সুগন্ধি খুব। এটি মূলত মালা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। তৃতীয় জাত মতিয়া বেলি। এটির আকার বড় হয়। পাপড়ি সংখ্যাও বেশি। থোকায় থোকায় ফুল ধরে। আর যে জাতটি, ভরিয়া বেলি নাম। বেলি ফুলের একে রাজা বলা হয়ে থাকে। ফুলের ওজন ১ ভরির মতো হয়ে থাকে। অনিন্দ্য সুন্দর শুভ্র ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করুন। ভরা বর্ষায় উৎসব হোক বেলি ফুলের।
×