ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষি বিপ্লবে মীরসরাই ॥ হিমাগারের দাবি

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২ জুলাই ২০১৮

কৃষি বিপ্লবে মীরসরাই ॥ হিমাগারের দাবি

নিজস্ব সংবাদদাতা, মীরসরাই, চট্টগ্রাম, ১ জুলাই ॥ চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লাইফ লাইন খ্যাত মীরসরাই। এই উপজেলায় কৃষিতে বর্তমান সরকারের অধীনে বিগত কয়েক বছর কৃষি উৎপাদনে বিল্পব ঘটেছে। এই উপজেলার মোট আয়তন ৪৮২.৮৮ বর্গকিলোমিটার। মোট জনসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। এই বিশাল জনসংখ্যার অধিকাংশ কৃষি নির্ভর। মীরসরাই উপজেলার মোট ভূমির পরিমাণ ৪৮ হাজার ৮শ হেক্টর। এখানে আবাদি জমির পরিমাণ ২৩ হাজার ৪শ হেক্টর। আউশ, আমন, রোরো তিন মৌসুমে ধান উৎপাদন হয়। আউশ উৎপাদন হয় ৮ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে, আমন উৎপাদন হয় ২১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে, বোরো উৎপাদন হয় ২০০০ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মাঝে শীতকালীন সবজি ১৮ হাজার হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালীন সবজি ৮শ হেক্টর চাষাবাদ হয়ে থাকে। তবে কোন কোল্ড স্টোর না থাকায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় কৃষকরা। উপজেলার পূর্ব দিকে রেললাইন ঘেঁষে বড় বড় পাহাড়ের বিস্তার। এই সব পাহাড়ে জুম চাষসহ নানা ধরনের হরেক রকমের শাকসবজি উৎপাদন ও ফলদ গাছের বনায়ন করা হয়। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহতম কৃত্রিম লেক মহামায়া মহা প্রকল্পের উদ্বোধনের পর থেকেই মূলত মীরসরাইয়ে চাষাবাদের কৃষি বিল্পব গড়তে থাকে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া মহাপ্রকল্পের ও রাবার ড্রামের মাধ্যমে পানি নিয়ন্ত্রণ ফলে এক সময়ের ব্যাপক বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে কৃষক রক্ষা পায় এবং রাবার ড্রামের নিয়ন্ত্রণ পানি মাধ্যমে শুকনো মৌসুমে রোরো ধান চাষের বাম্পার ফলন যেমনি হয় তেমনি শীত মৌসুমে সবজি চাষে কৃষক ব্যাপক সফলতা পেয়ে থাকেন। মীরসরাইয়ের দুঃখ ছিল বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ী ঢল। মূলত এই পাহাড়ী ঢলের পানি মহামায়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের ফলে ব্যাপক ক্ষতি হাত থেকে রক্ষা পায় কৃষক। বাংলাদেশের উল্লেখ যোগ্য শিম চাষের উৎপাদন এলাকা সীতাকু--মীরসরাই। বড়দারোগারহাট দুই উপজেলার কেন্দ্রস্থল। এখানে শীত মৌসুমে প্রতিদিন শত শত টন শিম বেচাকেনা হয়ে থাকে। শীতকালীন সবজির মধ্যে ডাল, লাউ, টমেটো, বেগুন, আলু, ঝিঙা, করলা, ঢেঁড়স, কুমড়া, বরবটি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, লালশাক, পুঁইশাক ইত্যাদি মীরসরাইয়ের সর্বত্র চাষাবাদ হয়ে থাকে। বোরো মৌসুমে ইরি ধান চাষে উপজেলার প্রায় খালে পানি থাকাতেই কৃষকের চাষাবাদের সমস্যা হয় না। বিগত কয়েক বছর মীরসরাইয়ে রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়েছে। উপজেলার পশ্চিম দুর্গাপুরের কৃষক নুরুল হুদা বলেন, বিগত কয়েক বছর সরকারের প্রতি মৌসুমে কৃষকদের সার, বীজ, ও আর্থিক সহযোগিতার ফলে আমরা যথেষ্ট উপকৃত হয়েছি। মীরসরাই সদর পশু হাসপাতাল সংলগ্ন কৃষক মীর হোসেন জানান, বিগত কয়েক বছর বন্যায় মহামায়া অঞ্চল পানি নিয়ন্ত্রণ করে কৃষক উপকৃত হলেও পুরো উপজেলা জুড়ে সরকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার নুরে আলম জানান, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে বলেন, মীরসরাই উপজেলা পানি সঠিক সময়ে পাওয়া যায় না। নাহলে উৎপাদন আরও বাড়ত। তিনি আরও বলেন কৃষি খাতে অতীতের তুলনায় অনেক এগিয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মেদ বলেন, সরকারী প্রণোদনা মাধ্যমে বীজ ও রাসানিক সার উপজেলা থেকে ১ হাজার ৪০ জন কৃষক পেয়ে থাকে এবং আগাছা দমনের জন্য ৫০০ টাকা হারে মোবাইল ব্যাংক কিংয়ের মাধ্যমে দেয়া হয়ে থাকে। বর্তমানে ১২ হাজার হেক্টর আউশ আবাদ হচ্ছে। নিল মানবাধিকার উন্নয়ন সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও সাংস্কৃতি সম্পাদক আনোয়ারুল হক নিজামী বলেন, মীরসরাই কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম কারণ কোল্ড স্টোর অভাব। মৌসুমি উৎপাদিত ফসলের দাম সাধারণত কম থাকে। কোল্ড স্টোরের মাধ্যমে স্টক করে রাখলে যে কোন সময়ে বেশি দাম পাওয়া যায়।
×