ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্র্রাহ্মণবাড়িয়ায় নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কারের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২ জুলাই ২০১৮

  ব্র্রাহ্মণবাড়িয়ায় নতুন গ্যাস  ক্ষেত্র আবিষ্কারের সম্ভাবনা

রিয়াজউদ্দিন জামি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ সম্পূর্ণ নতুন একটি গ্যাস জোন আবিষ্কারের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় গ্যাস ক্ষেত্রটি আবিষ্কার হওয়ার পথে। এ গ্যাস ক্ষেত্রটি আবিষ্কার হলে দেশের জ্বালানি সেক্টরের অভূত পূর্ব উন্নতি সাধিত হবে। নব আবিষ্কৃত এই গ্যাস ক্ষেত্রটি টু-ডি ও ত্রি-ডি সাইসমিক সার্ভের ওপর ভিত্তি করে প্রাথমিক কার্যক্রম চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাটির অন্তত ২৪শ’, ২৫শ’, ২৮শ’ ও ৩ হাজার মিটার গভীর তলদেশে সম্ভাবনাময় এ প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল ভান্ডার রয়েছে। ভূ-তত্ত্ববিদগণ জানিয়েছেন, দেশের অন্যতম গ্যাস ভান্ডার হবে কসবার নতুন এ গ্যাস ক্ষেত্রটি। ইতোমধ্যে অনুসন্ধান মূলক খনন কাজও শুরু করেছে বাপেক্স সরকারের রূপকল্প-৩ এর আওতায় কসবা-১, মাদারগঞ্জ, জামালপুর ও শৈলকূপায় অনুসন্ধান কূপ খনন কাজ শুরু হয়েছে। কসবার পৌরসভার অভ্যন্তরেই গত ২৭ এপ্রিল অনুসন্ধান কূপের কমিশনিং কাজ শুরু হয়। এরপর ১ মে থেকে ড্রিলিং কাজ শুরু হয়েছে। বাপেক্স নিজস্ব জনবল ও রিগ দিয়ে এ কাজটি শুরু করে। গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের অর্থায়নের প্রায় ৩শ’ ৮২ কোটি টাকা ব্যয়ে পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। কসবা এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০ কোটি টাকা। প্রায় সাড়ে ৫ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এ অনুসন্ধানী কূপের খনন কাজ এক তৃতীয়াংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ মাসের শেষের দিকে এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে ২ হাজার ৬৫ মিটার খনন কাজ শেষ হয়েছে। ভ্যার্টিকাল (খাড়াখাড়ি) পদ্ধতিতে মাটির ৩ হাজার মিটার গভীরে ড্রিলিং পাইপ বসানো হবে। ইতোমধ্যে লগিং কাজ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, লগিং এর মাধ্যমে মাটির তলদেশে বিশেষ ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে মাটির স্তরের অবকাঠামো ও সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পরই ক্যাচিং পাইপ স্থাপনসহ পরবর্তী ড্রিলিং সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম শুরু হবে। আগামী মাসের শেষের দিকে কূপের টেস্টিং আনুষাঙ্গিক কাজ শুরু করা যাবে বলে ভূ-তত্ত্ববিদরা জানিয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, ড্রিলিং পাইপ যতই গভীরে যাচ্ছে ততই কঠিন শিলাস্তর ও শক্ত বস্তুর কারণে খনন কাজ গতি কমে আসছে। ড্রিলিং কাজে নিয়োজিত এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিন ১শ’ মিটার ড্রিলিং করা গেলেও এখন মাত্র ৫০-৬০ মিটার ড্রিলিং করা যাচ্ছে। অনুসন্ধানি এ কূপে গ্যাস পাওয়া গেলে আশপাশে আরও একাধিক কূপ খনন করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এদিকে সালদা নর্থে (উত্তর) ও নতুন গ্যাস কূপ খনন চলছে। অনুসন্ধানী এ কূপের পাইপ ১১শ’ ৬৪ মিটার মাটির তলদেশে প্রবেশ করেছে। ৩৫শ’ মিটার তলদেশ থেকে গ্যাস উত্তোলনের আশা করছে তারা। ভূ-তত্ত্ববিদরা জানিয়েছেন, যতটুকু পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট আসছে তাতে ভূ-তাত্ত্বিক অবস্থা খুবই ভাল। সালদা নর্থে গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা খুবই উজ্জল। এতে ৮৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয় হবে। রূপকল্প-১ এর আওতায় দেশের ৫টি অঞ্চলে গ্যাস কূপ খনন হবে। এতে ব্যয় হবে ৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (জিডিএফ) এর অর্থায়নে অনুসন্ধানী এ কূপের খনন চলমান। গত ৮ মে থেকে এ কূপের খনন কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ৩০ জুন এ কূপের খনন কাজ শেষ হওয়ার কথা। কূপগুলো খনন হলে ওয়্যার লাইন লগিং এর মাধ্যমে ডিএসপি টেস্টিং করে গ্যাস জোনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যাবে। একটি সূত্র জানিয়েছে, সালদা ও কসবা গ্যাস ক্ষেত্রের ভূ-গঠনের অংশ সীমান্তবর্তী প্রতিবেশী দেশ ভারতের মধ্যে বিস্তৃত রয়েছে। তবে মূল রিজার্ভ বাংলাদেশ অঞ্চলে। ’৮০-৯০ দশকের মধ্যে এ অঞ্চলের গ্যাস উত্তোলনের তোরজোর শুরু হলেও তেমন সফল হয়নি সংশ্লিষ্টরা। তবে বহু আগ থেকেই এ স্তর থেকে ভারত বিপুল পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। ২টি গ্যাস ক্ষেত্রের উৎপাদিক গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হবে বলে জানা গেছে। কসবার এক গ্যাস ক্ষেত্রের ২শ’ থেকে আড়াই বিলিয়ন ঘনফুট রয়েছে বলে ভূ-তত্ত্ববিদরা ধারণা করছেন।
×