ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসছে

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২ জুলাই ২০১৮

  নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে গুরুত্বপূর্ণ  পরিবর্তন আসছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক হিসাব মানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের নিরীক্ষা পদ্ধতিতে ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসছে। নতুন পদ্ধতিতে নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে আগের তুলনায় আরও বেশি সুনির্দিষ্ট ও ব্যাপকভিত্তিক তথ্য প্রকাশ করতে হবে। এটিকে হিসাব পেশার গত ৩০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) উদ্যোগে আয়োজিত ‘হালনাগাদ আন্তর্জাতিক হিসাব মানের ভিত্তিতে নিরীক্ষকের প্রতিবেদনের নতুন পদ্ধতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব বিষয় উঠে এসেছে। সেমিনারের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাজ্যভিত্তিক আর্নেস্ট এ্যান্ড ইয়ং ম্যানেজার আসিফ জাকির চৌধুরী। প্যানেল আলোচক ছিলেন শেখ আশিক ইকবাল, হুদা ভাসি চৌধুরী এ্যান্ড কোম্পানির পার্টনার সাব্বির আহমেদ ও একনাবিনের পার্টনার মোঃ রোকনুজ্জামান। সেমিনার সঞ্চালনায় ছিলেন আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হোসেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, আন্তর্জাতিকভাবে হিসাব মান পদ্ধতির পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশেও এটি হালনাগাদ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছর থেকেই দেশে নতুন পদ্ধতি কার্যকর করা হবে। বর্তমানে আর্থিক প্রতিবেদনের নিরীক্ষকের প্রতিবেদন অংশে যে ধরনের তথ্য প্রকাশ করা হয়, নতুন পদ্ধতিতে এর ব্যাপকতা আরও বাড়বে। বিদ্যমান পদ্ধতিতে নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে কোয়ালিফাইড মতামত কিংবা এমফেসিস অব ম্যাটার সবার শেষে থাকে। নতুন পদ্ধতিতে নিরীক্ষকের প্রতিবেদনের শুরুতেই কোয়ালিফাইড মতামত কিংবা এমফেসিস অব ম্যাটার থাকবে। নতুন পদ্ধতিতে নিরীক্ষার মূল বিষয়বস্তু (কি অডিট ম্যাটারস বা কেএএম) ও গোয়িং কনসার্নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসছে। এতদিন নিরীক্ষার মূল বিষয়বস্তু অপ্রকাশিত থাকলেও নতুন পদ্ধতিতে নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে এটি প্রকাশ করতে হবে। কোন প্রতিষ্ঠানকে গোয়িং কনসার্ন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অনিশ্চয়তা থাকলে সেটি একটি আলাদা প্যারায় বিশদভাবে উল্লেখ করতে হবে। গোয়িং কনসার্ন ঘোষণার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করতে হবে। তাছাড়া আর্থিক প্রতিবেদনের অন্যান্য তথ্য যেমন পরিচালকের প্রতিবেদন, চেয়ারম্যানের রিভিউ ও অন্যান্য আর্থিক বিশ্লেষণের বিষয়ে নিরীক্ষকের পর্যবেক্ষণ থাকবে। অন্যান্য তথ্যের বিষয়ে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও নিরীক্ষকের দায়-দায়িত্ব অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আর্থিক প্রতিবেদনের সঙ্গে অন্যান্য তথ্য সঙ্গতিপূর্ণ কিনা, সে বিষয়ে নিরীক্ষকের বক্তব্য থাকবে। নিরীক্ষার মূল বিষয়বস্তু ও নিরীক্ষকের দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা থাকবে। নিরীক্ষকের স্বাধীনতা ও আনুষঙ্গিক নৈতিক দায়-দায়িত্বের বিষয়ে একটি ইতিবাচক বক্তব্য থাকবে। বর্তমানে আর্থিক প্রতিবেদনে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ও স্বাক্ষর থাকলেও নতুন পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষকের নাম ও স্বাক্ষর দিতে হবে। প্যানেল আলোচনায় বক্তারা বলেন, আর্থিক প্রতিবেদনে ভুল ও অসত্য তথ্য যাতে প্রকাশিত না হয়, সেজন্য এসব পরিবর্তন আনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিএসইসিসহ অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোও নিরীক্ষার মানোন্নয়নকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে শুধু নিরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন করলেই রাতারাতি সবকিছুর পরিবর্তন হবে না। নিরীক্ষা কার্যক্রমে আমূল পরিবর্তন আনার জন্য নিরীক্ষক, কোম্পানিসহ সংশ্লিষ্টদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। নতুন পদ্ধতিতে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে, সে বিষয়ে নিরীক্ষক, কোম্পানি, বিনিয়োগকারী গ্রাহক, জনগণসহ বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিএসইসি, আইডিআরএ, ডিএসই, সিএসই ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সচেতন করে তুলতে হবে। এজন্য বিভিন্ন ধরনের সভা-সেমিনারসহ ক্যাম্পেইনিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির কমিশনার ড. স্বপন কুমার বালা বলেন, যখনই পুঁজিবাজারে কোন অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তখনই আমরা কোম্পানির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে থাকি। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের আইনী পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সেখানে নিরীক্ষককে বিবাদী করা হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের কোন বিধান না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে বিনিয়োগকারীদের সচেতনতার জন্য বিএসইসি তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রচলিত আর্থিক প্রতিবেদনের বাইরেও কোম্পানির প্রোফাইল ও নিরীক্ষকের কোয়ালিফাইড মতামত প্রকাশ করছে।
×