ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শাহাব উদ্দিন মাহমুদ

দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে ১০টি বৃহৎ উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২ জুলাই ২০১৮

  দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণে ১০টি বৃহৎ উদ্যোগ

দিনবদলের অঙ্গীকার নিয়ে যাত্রা শুরু করা শেখ হাসিনার সরকারের এক মহৎ উদ্যোগ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী যা সমাজের বঞ্চিত, অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের এক বৃহৎ প্রচেষ্টা। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী বাস্তবায়নে সমাজসেবা অধিদফতরসহ সরকারের ২৯টি বিভাগ কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় বর্তমানে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আপদকালীন সময়ে দেশব্যাপী সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচীর আওতায় গ্রামীণ শ্রমিকদের কাজ প্রদানের জন্য শ্রমঘন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে- অতিদরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী (ইজিপিপি), গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচী। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার শেখ হাসিনার নিরন্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তার উদ্ভাবনী ১০টি বহুল আলোচিত প্রকল্পের অন্যতম দারিদ্র্যবান্ধব সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচী। . বয়স্ক ভাতা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এর মধ্যে যারা ভূমিহীন, বিত্তহীন এবং বার্ধক্যের কারণে দৈহিক পরিশ্রমে অক্ষম তারাই সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্যের শিকার। বয়স্ক এবং কাজ করতে অক্ষম দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ সরকার বয়স্ক ভাতা প্রদান কর্মসূচী চালু করেছে। ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছর হতে প্রাথমিকভাবে দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫ জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলাসহ ১০ জন দরিদ্র বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিকে প্রতি মাসে ১০০ টাকা হারে ভাতা প্রদানের আওতায় আনার মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার সমাজের অবহেলিত এসব মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে দেশের সকল পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনকে এ কর্মসূচীর আওতাভুক্ত করা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩১ লাখ ৫০ হাজার বয়স্ক ব্যক্তিকে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বয়স্কভাতা ভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৩৫ লাখে উন্নীত করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বয়স্কভাতা ভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে ৪০ লাখে এবং ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে ৬০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। সরকারী তথ্য অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার শতকরা সাত ভাগ লোক বয়স্ক হিসেবে চিহ্নিত। এর শতকরা বিশভাগ লোক এ বেষ্টনীর আওতাভুক্ত। . বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজসেবা অধিদফতররের মাধ্যমে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের ভাতা কর্মসূচী প্রবর্তন করা হয়। ঐ অর্থবছরে ৪ লাখ ৩ হাজার ১১০ জনকে এককালীন মাসিক ১০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করা হয়। ২০০৩-০৪ অর্থবছরে এ কর্মসূচীটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছিল। এ কর্মসূচী বাস্তবায়নে অধিকতর গতিশীলতা আনয়নের জন্য ২০১০-১১ সালে বর্তমান সরকারের ১ম মেয়াদে পুনরায় এ কর্মসূচী সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার পর গত ৬ বছরে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা বিতরণে প্রায় শতভাগ সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বর্তমান সরকারের উদ্যোগে প্রবর্তিত এ কর্মসূচী সমাজসেবা অধিদফতর সফলভাবে বাস্তবায়ন করছে। এ কর্মসূচীর আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১২ লাখ ৬৫ হাজার ভাতাভোগীর জন্য জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা হারে মোট ৭৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দের সংস্থান রাখা হয়েছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতাভোগীর সংখ্যা ১২ লাখ ৬৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১৪ লাখে উন্নীত করা হচ্ছে। . অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা আমাদের সমাজে প্রতিবন্ধীরা অবহেলিত। প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকার বিভিন্ন সুরক্ষা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে অসচ্ছল প্রতিবন্ধীরা ভাতা সুবিধা পেয়ে থাকে। অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার জন্য সমাজ সেবা অধিদফতর কর্তৃক নিবন্ধিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যার বার্ষিক গড় আয় সর্বোচ্চ ৩৬,০০০ টাকা এবং বয়স সর্বনিম্ন ৬ বছর তিনি নির্ধারিত ফরমে উপজেলা বা শহর সমাজসেবা অফিসার বরাবরে আবেদন করবেন। ইউনিয়ন পর্যায় থেকে আবেদন যাচাই-বাছাই করে উপজেলা-জেলা তালিকা চূড়ান্ত করে সংসদ সদস্যের অনুমোদন নিয়ে ভাতাভোগীদের নামে উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের মাধ্যমে ভাতা বই ইস্যু করা হয়। ভাতাভোগী তার নিজস্ব ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ভাতা উত্তোলন করেন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় উপকারভোগী ছিল সাত লাখ ৫০ হাজার। তারা প্রতি মাসে ৬০০ টাকা হারে ভাতা পেতেন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে আট লাখ ২৫ হাজার উপকারভোগীকে প্রতি মাসে ৭০০ টাকা করে ভাতা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ সালের বাজেটে ভাতার পরিমাণ ঠিক রেখে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা সোয়া ৮ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখে উন্নীত করা হচ্ছে । . হতদরিদ্রদের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচী সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হতদরিদ্রদের ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে সরকার। পল্লী রেশন ডিলারদের মাধ্যমে কার্ডধারীদের মধ্যে মাসে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। এ জন্য নেয়া হয়েছে ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী’। সারা দেশে ৬০ লাখ হতদরিদ্র পরিবার পাঁচ মাসের জন্য এ কর্মসূচীর সুফল পাচ্ছে। এটি শেখ হাসিনার আরেকটি দরিদ্রবান্ধব উদ্যোগ। এ কর্মসূচির সুষ্ঠু বাস্তবায়নের ফলে এর সুফল ভোগ করছে দেশের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী। গত অর্থবছর থেকে স্থানীয় জনপ্রতিধিদের মাধ্যমে সারাদেশে ৬০ লাখ হতদরিদ্র পরিবার নির্বাচন করে কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। কার্ডধারীরা প্রতি মাসে নির্ধারিত ডিলারদের কাছ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৩০ কেজি চাল কিনতে পারবেন। ধান লাগানো ও ধান কাটার মধ্যবর্তী সময়ে যখন দিনমজুরদের হাতে কাজ থাকে না তখনই এ কর্মসূচীর সুফল পাবে পরিবারগুলো। কর্মসূচীর আওতায় বিধবা ও প্রতিবন্ধী নারীদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। দেশের ৭টি বিভাগীয় শহরে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীকে খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে। সরকারের রূপকল্প ২০২১ এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্য অনুযায়ী দারিদ্র্যের হার কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নামিয়ে আনতে খাদ্যশস্য বিতরণ নীতিমালা ২০১১-এর আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে বসবাসকারী হতদরিদ্রদের স্বল্প মূল্যে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের ব্যবস্থা করছে সরকার। যার মাধ্যমে দেশের ৬০ লাখ পরিবার বছরের পাঁচ মাস এই সুবিধা ভোগ করে যা প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নবেম্বর এবং মার্চ ও এপ্রিল হিসেবে সময়টি নির্ধারিত রয়েছে। . দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা গ্রাম অঞ্চলের দরিদ্র, গর্ভবতী মায়েদের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে তাদের দুঃখ দুর্দশা লাঘব করার জন্য সরকার কর্তৃক ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ‘দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা’ কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। কার্যক্রমটি চলমান। এ কর্মসূচীর উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র মা ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, মাতৃদুগ্ধ পানের হার বৃদ্ধি, গর্ভাবস্থায় উন্নত পুষ্টি উপাদান গ্রহণ বৃদ্ধি। এ কার্যক্রমের আওতায় দরিদ্র গর্ভবতী মহিলাদের ভাতা প্রদানের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে। মহিলাবিষয়ক অধিদয়তর কর্তৃক মাঠ পর্যায়ে ৩২৮টি এনজিও- সিবিও এর মাধ্যমে এ কর্মসূচী বাস্তবায়িত হচ্ছে, দরিদ্র মাতাদের ভাতা অন্যান্য বেষ্টনীর মতো এ বেষ্টনীর পরিধি সীমিত হওয়া সত্ত্বেও এ কর্মসূচীটি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে চালু করা এ কর্মসূচীর আওতায় মোট তিন হাজার ইউনিয়ন রয়েছে। এতে ইউনিয়ন প্রতি উপকারভোগী হবে ১৫ জন। ২০১৮-১৯ সালে দরিদ্র মা’র জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা মাসিক ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা এবং ভাতার মেয়াদ ২ বছরের পরিবর্তে ৩ বছর নির্ধারণ করে ভাতাভোগীর সংখ্যা ৬ লাখ থেকে ৭ লাখে উন্নীত করা হয়েছে। . জটিল রোগীদের আর্থিক সহায়তা সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর আওতায় ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীর আর্থিক সহায়তা কর্মসূচী ২০১৩-১৪ অর্থবছর হতে চালু হয়েছে। এসব রোগে আক্তান্ত গরিব রোগীদের শনাক্ত করে সমাজসেবা অধিদফতর, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সুধীজনের সহযোগিতায় নীতিমালা অনুসরণ করে প্রকৃত দুস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়নপূর্বক গৃহীত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ কর্মসূচীর আওতায় ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যরালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগে আক্তান্ত গরীব রোগীদের জন প্রতি ৫০,০০০ টাকা হারে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে আক্রান্ত রোগীর পরিবারের ব্যয়ভার বহনে এবং সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করা হয়। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা কর্মসূচীর উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। . কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল কর্মসূচী মা’জাতির সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের প্রতি জাতীয় স্বীকৃতি। মা জাতির প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে কর্মজীবী মা’দের জন্য এই সহায়তা। দরিদ্র মা ও শিশুর স্বাস্থ্য, পুষ্টির উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক গৃহীত একটি অন্যতম সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম। যার মাধ্যমে গর্ভধারণকাল থেকে ২৪ মাস পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত ৫০০ হারে নগদ অর্থ, আর্থ-সামাজিক ও সচেতনতামূলক সেবা প্রদান করা হয়। বাল্যবিবাহ ও যৌতুকের জন্য নির্যাতন রোধকল্পে শুধু ২০ বছরের অধিক বয়সী দরিদ্র কর্মজীবী গর্ভবতী/দুগ্ধদায়ী মা’দের ক্ষেত্রে প্রথম বা দ্বিতীয় গর্ভধারণ কালে এ ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। পাইলট কর্মসূচী হিসেবে প্রথম পর্যায়ে কর্মসূচিটি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায় অবস্থিত বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ এর আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে এবং দেশের ৬৪টি জেলা সদরস্থ পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনে ও সাভার উপজলোয় বাস্তবায়িত হয়েছিল। বর্তমানে কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কর্মসূচী দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও পৌরসভায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তার আওতায় মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা হতে ৮০০ টাকায় বৃদ্ধি এবং ভাতা প্রদানের মেয়াদ ২ বছরের পরিবর্তে ৩ বছর নির্ধারণ এবং ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ লাখ থেকে আড়াই লাখে উন্নীত করা হয়েছে। এ কর্মসূচী বাস্তবায়নের ফলে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সচেনতামূলক প্রশিক্ষণ ও ভাতার অর্থ উপকারভোগীদের আত্মসচেতনতা ও আত্ম-নির্ভরশীলতা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। ফলে উপকারভোগী কর্মজীবী দরিদ্র মায়েদের গর্ভকালীন, প্রসবোত্তর সমস্যা ও সমাধান এবং শিশু ও মায়ের পুষ্টি ও দুগ্ধদান ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা এবং সোস্যাল মোভিলাইজেশন বৃদ্ধি পেয়েছে। . চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচী চা শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প। জাতীয় অর্থনীতিতে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের চা উৎপাদনের পরিমাণ বছরে প্রায় ৬০.৫০ কোটি কেজি এবং এখান থেকে চা রফতানি করা হয় ২৫টি দেশে। এই চা উৎপাদনের যারা সরাসরি জড়িত তারাই চা-শ্রমিক। কিন্তু চা-শ্রমিকরা সকল নাগরিক সুবিধা ভোগের অধিকার সমভাবে প্রাপ্য হলেও তারা পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বৈষম্যের শিকার। অবহেলিত ও অনগ্রসর এ জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ, তাদের সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিতকরণ, পারিবারিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় ‘চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম’ বাস্তবায়ন করেছে। আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধান; আপদকালীন সময়ে চা-শ্রমিকদের খাদ্য সহায়তা প্রদান; পরিবার ও সমাজে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি। প্রকৃত দুস্থ চা-শ্রমিকদের শনাক্ত করে সমাজসেবা অধিদফতর, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও চা বাগান কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় এ নীতিমালা অনুসরণ করে প্রকৃত দুস্থ ও অসহায় ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়ন পূর্বক গৃহীত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ এবং পঞ্চগড় জেলার চা বাগানসমূহে কর্মরত চা শ্রমিকগণ এ কর্মসূচীর আওতাভুক্ত। প্রকৃত দুস্থ ও গরিব চা-শ্রমিককে নির্বাচন করে প্রতি চা-শ্রমিক পরিবারকে সর্বমোট ৫,০০০ (পাঁচ হাজার) টাকার খাদ্যসামগ্রী প্যাকেটজাত অবস্থায় মোট ৩ বারে বিতরণ করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচীর উপকারভোগীর সংখ্যা ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। . পোশাক শিল্প শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা তহবিল তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশে রফতানি আয়ের প্রধান খাত। এ খাতে ৫০ লাখের বেশি শ্রমিক সরাসরি কাজ করে তন্মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ কম সুবিধাভোগীই নারী। সরকার সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর আওতায় তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ ও সহায়তা তহবিল গঠন করছে। ২০১৬ সালের জুনে এই তহবিল গঠন করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ওই তহবিল থেকে মৃত, আহত শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের ২৬ কোটি ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেয়া হয়েছে। কোন শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে নিহত হলে ৩ লাখ টাকা ও কর্মস্থলের বাইরে নিহত হলে ২ লাখ টাকা এবং আহত বা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে ১ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও কোন শ্রমিক মৃতু্যুবরণ করলে বীমা বাবদ ২ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকেন। চলবে... লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
×