ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পত্রিকা অফিসে হামলা

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২ জুলাই ২০১৮

পত্রিকা অফিসে হামলা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবার পত্রিকা অফিসে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। ১৮৮৪ সাল থেকে প্রকাশিত পত্রিকাটির নাম ‘দ্য ক্যাপিটাল গেজেট’। মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে পত্রিকাটির অফিসে গুলির ঘটনায় অন্তত চার সাংবাদিক ও এক বিক্রয়কর্মী নিহত হয়েছেন। আহতের খবরও আছে। তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৩৮ বছর বয়সী জ্যারড রামোস নামের আততায়ীকে গ্রেফতার করতেও সক্ষম হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী এটি কোন জঙ্গী সন্ত্রাসী হামলা নয়। পত্রিকাটির অপরাধ, ২০১২ সালে রামোস কর্তৃক হাই স্কুলের এক ছাত্রীকে হয়রানির খবর প্রকাশ। এ নিয়ে আদালতে মানহানির মামলা হলে হেরে যায় সে। এরপর চরম ক্রোধের বহির্প্রকাশ ঘটে পত্রিকাটির অফিসে ঢুকে গোলাগুলির মাধ্যমে। এ ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় কয়েক বছর আগে ফ্রান্সের প্যারিসে সাপ্তাহিক কার্টুন পত্রিকা ‘শার্লি এবদো’র অফিসে হামলার ঘটনা। সে হামলায় অন্তত ১২ সাংবাদিক ও অঙ্কনশিল্পী নিহত হয়েছিলেন। তবে এত বড় হামলার পরও পত্রিকা কর্তৃপক্ষ পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছেন। নিহত সহকর্মী পাঁচজনের ছবি দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে শোক সংস্করণ। সম্পাদকীয় লেখার স্থান ফাঁকা রেখে বোঝানো হয়েছে, আমরা বাকশক্তিহীন। এ ঘটনায় সব বিখ্যাত পত্রিকা অফিসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তার মানে পৃথিবীর কোথাও সাংবাদিকরা নিরাপদ নয়। হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এর জন্য তিনিও কম দায়ী নন কোন অংশে। কেননা, আমেরিকার স্কুলগুলোতে একের পর এক সশস্ত্র হামলা ও গোলাগুলির ঘটনায় বহুসংখ্যক ছাত্রছাত্রী নিহত হলেও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণে তিনি কোন পদক্ষেপই নেননি। উপরন্তু তিনি নিজেই বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমের প্রতি বিষোদগার করে সহিষ্ণুতার পথ প্রায় অবরুদ্ধ করে দিয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর রক্ষণশীল রাজনীতিকদের এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সংবাদমাধ্যম মিথ্যা খবর প্রচার করে উল্লেখ করে তাদের আখ্যায়িত করেছিলেন গণশত্রু হিসেবে। ঘটনা যা-ই ঘটুক না কেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা হোয়াইট হাউসের দীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা ছিল নজিরবিহীন ও ভয়াবহ। এমন সিদ্ধান্তকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আঘাত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সে দেশের সাংবাদিক সংগঠনগুলো ও সমালোচকরা। ট্রাম্পের এহেন আচরণ অবশ্য নতুন নয়। সত্যি বলতে কী, নির্বাচনের প্রচারাভিযানের সময় থেকেই ট্রাম্পের শিবির নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট. বাজফিড, সিএনএনসহ কয়েকটি পত্রিকা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর জারি করেছিল নিষেধাজ্ঞা। কেননা, এসব গণমাধ্যম সমর্থন করেছিল ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে। মার্কিন রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত নবাগত ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে অভিযোগ রয়েছে: তিনি রাগী, জেদী, একগুঁয়ে, নারীকাতর, বর্ণবিদ্বেষী, ধর্মবিদ্বেষী, অভিবাসন এমনকি মুসলিম বিদ্বেষী। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি মার্কিন মুলুক থেকে সব অবৈধ অভিবাসী বিশেষ করে মুসলিমদের বিদায় করবেন বলে অঙ্গীকার করেছিলেন। ট্র্যাজেডি হলো, ট্রাম্প নিজেই একজন অভিবাসী, যার দাদা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিল জার্মানি থেকে। এমনকি তার স্ত্রী মেলানিয়াও তাই; জন্মসূত্রে যিনি একজন সেøাভেনিয়ান। সেক্ষেত্রে এহেন ব্যক্তিকে গণমাধ্যম কোন অবস্থাতেই সমর্থন করতে পারে না। যেখানে স্বাধীন ও অবাধ সংবাদপত্র রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত। যা হোক ধারণা করা গিয়েছিল যে, অন্তত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্প তার সুর বদলাবেন। কার্যত দেখা গেল, ট্রাম্প তার অবস্থান থেকে একটুও নড়েননি। ট্রাম্প যে গণমাধ্যমের ওপর ক্ষিপ্ত হবেন, তাতে আর বিচিত্র কী! এরই বহির্প্রকাশ ঘটেছে ‘দ্য ক্যাপিটাল গেজেট’ পত্রিকা অফিসে সশস্ত্র হামলার মাধ্যমে। গণমাধ্যমের ওপর এ ধরনের হামলার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই।
×