ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে আদিবাসীদের সাত দফা দাবি

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১ জুলাই ২০১৮

রাজশাহীতে আদিবাসীদের সাত দফা দাবি

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন, সরকারী চাকরিতে আদিবাসীদের ৫ ভাগ কোটা বাস্তবায়ন ও উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে আদিবাসী কোটা ব্যবস্থা চালুসহ সাতদফা দাবি জানিয়েছে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ। শনিবার সকালে রাজশাহীতে মহান সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশ ও গণমিছিল থেকে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। নগরীর আলুপট্টি মোড়ে সমাবেশ ও গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়। গণমিছিলের উদ্বোধন করেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। এর আগে সকালে নগরীর ভুবনমোহন পার্ক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাঁওতাল বিদ্রোহের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন। অন্যদের মধ্যে কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম ছাড়াও বক্তব্য রাখেন, সাধারণ সম্পাদক সবিন চন্দ্র মুন্ডা, রাজশাহী জেলা সভাপতি বিমল রাজোয়াড়, সাধারণ সম্পাদক সুসেন কুমার শ্যামদুয়ার, রাজশাহী মহানগর সাধারণ সম্পাদক আন্দ্রিয়াস বিশ্বাস, আদিবাসী যুব পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নবদ্বীপ লাকড়া, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি বিভূতী ভূষণ মাহাতো প্রমুখ। বক্তারা বলেন, ১৮৫৫ সালের এইদিনে সাঁওতাল কৃষকদের বিদ্রোহ ছিল নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার ও অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। নিজেদের অধিকার রক্ষায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন সাঁওতাল বীররা। কিন্তু আজও আদিবাসীরা অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে মুক্তি পায়নি। নিজেদের জমিজমা হারিয়ে ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে। বক্তারা অবিলম্বে তাদের দাবি সমূহ বাস্তবায়নের দাবি জানান। তাদের অন্য দাবিগুলো হলো, খাস জমি ও সরকারী পুকুর পাড়ে বসবাসরত আদিবাসীদের স্থায়ী মালিকানা দিতে হবে। আদিবাসীদের ওপর নির্যাতন, জুলুম-অত্যাচার, ধর্ষণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, হয়রানি বন্ধ ও বিচার করতে হবে, সরকারী তালিকা থেকে বাদপড়া আদিবাসীদের দ্রুত অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। এ দিকে সাঁওতাল বিদ্রোহের মহান নেতা সিধু-কানহুর আত্মত্যাগ দিবস উপলক্ষে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ও দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়াও রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির উদ্যোগে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে র‌্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় সিসিবিভিও-রক্ষাগোলা সংগঠনসমূহ অংশগ্রহণ করেন। গোলাই রক্ষাগোলা গ্রাম সমাজ সংগঠনের মোড়ল ও সিসিবিভিওর নির্বাহী সদস্য শ্রী রঘুনাথ শিংয়ের সভাপতিত্বে দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ইউপি সদস্য কস্তান্তিনা হাঁসদা, মুক্তিযোদ্ধা বিষ্ট হাসদা, সিসিবিভিওর প্রতিনিধি মাহাবুব জামান তপন ও শাহাবুদ্দিন শিহাব। এ ছাড়াও সিসিবিভিও-রক্ষাগোলা গ্রাম সমাজ সংগঠনের বিভিন্ন জাতির অংশগ্রহণে বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির উদ্যোগে র‌্যালি বের করা হয়। এতে প্রায় ৮০০ সাঁওতাল অংশগ্রহণ করেন। গাইবান্ধা গাইবান্ধা থেকে জানান, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শনিবার সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস উপলক্ষে বিক্ষোভ মিছিল, আদিবাসী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ব্যানার, ফেস্টুন ও লাল পতাকায় সজ্জিত বিক্ষোভ মিছিলটি জয়পুর-মাদারপুর থেকে শুরু“ করে কাটা মোড় হয়ে সাপামারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছে। বিক্ষোভ মিছিলটি সমাবেশ স্থলে যাওয়ার পথে কাটা মোড়ে পুলিশ সাঁওতালদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বাধা অতিক্রম করে সমাবেশ স্থলে পৌঁছে। সেখানে অস্থায়ী শহীদ বেদিতে সাঁওতাল বিদ্রোহে সিদু, কানুসহ নাম না জানা শহীদ ও বাগদাফার্মে নিহত শ্যামল, রমেশ, মঙ্গলসহ সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুস্পস্তবক অর্পণ ও তাদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য মিহির ঘোষ, আদিবাসী-বাঙালী সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক এ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু, আদিবাসী যুব পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি হরেন্দ্রনাথ সিং, জনউদ্যোগ কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সচিব তারিক হোসেন, আদিবাসী-বাঙালী সংহতি পরিষদের সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী, জেলা বাসদ সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী, সিপিবি উপজেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম প্রমুখ। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৬ নবেম্বর বাগদাফার্মে সংঘটিত ঘটনার পর থেকেই সেখানে আদিবাসী-বাঙালীরা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। পুলিশ ও চিনিকল কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় এখনও ক্ষতিগ্রস্তরা আতঙ্কিত জীবনযাপন করছে। বক্তারা অবিলম্বে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের উদ্বাস্তু মানুষদের জমি ফেরতের দাবি জানান। দিনাজপুর স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, সমতল আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন, ভূমিতে প্রথাগত অধিকারের দাবির মধ্য দিয়ে দিনাজপুরে ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস পালিত হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন, বাংলাদেশ আদিবাসী সমিতি, বাংলাদেশ কিষানী সভা ও বাংলাদেশ ভূমিহীন কমিটির যৌথ আয়োজনে সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি দিনাজপুর প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র‌্যালি শেষে শহরের বালুবাড়ির সাঁওতাল বিদ্রোহের শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর দিনাজপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ আদিবাসী সমিতি, বাংলাদেশ কিষানী সভা ও বাংলাদেশ ভূমিহীন কমিটির যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ আদিবাসী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমলী কিসকু এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য বদরুল আলম। বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র পলিট ব্যুরো সদস্য মোঃ মুখলেস উদ্দিন, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমএল জায়েদ ইকবাল খান, বাংলাদেশ ভূমিহীন সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুবল সরকার, বাংলাদেশ কিষনী সভার সাধারণ সম্পাদক সাবিনা ইয়াসমিন, গার্মেন্টস টেক্সটাইল শ্রমিক ফোরামের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম সবুজ, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা মাসুদুর রহমান স্বপন ভূইয়া, সাজ্জাদ সাজু, তারক কবিরাজ, আনিসুর রহমান, হবিবর রহমান, রশিদুল ইসলাম জুয়েল, জুলিয়াস মুর্মু, স্বপ্ন এক্কা, রাম হাসদা, বাহমনি কিস্কু, সাবিহা বেগম, মর্জিনা বেগম, লতা আক্তার প্রমুখ। নওগাঁ নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, শনিবার নওগাঁ জেলা জুড়ে আদিবাসীরা পালন করল তাদের ১৬৩তম সান্তাল হুল দিবস। এ উপলক্ষে ধামইরহাট ও নিয়ামতপুরে আদিবাসীরা র‌্যালির পাশাপাশি নেচে গেয়ে পালন করল দিবসটি। শনিবার বেলা ১১টায় ধামইরহাট উপজেলা পারগানা বাইসির আয়োজনে এবং কারিতাসের আলোঘর প্রকল্পের সহযোগিতায় উপজেলা সদরে মহান সান্তাল হুল দিবসের র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালি শেষে উপজেলা অডিটরিয়ামে এ উপলক্ষে উপজেলা পারগানা সেবাস্তিয়ান হেমব্রমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মোঃ দেলদার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল হক সরকার, ফাদার কর্নেলিউস মুরমু, কারিতাসের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক দিপক এক্কা, বৈদ্যনাথ কর্মকার, সাবেক ইউপি সদস্য রামজনম রবিদাস, জিল্লু মার্ডী, নরেন হাঁসদা, রবিন কিস্কু, সুরেশ উরাও, নারী নেত্রী ইমেলদা মারার্র্ন্ডী, নগেন মুরমু, জোনাস হেম্ব্রম, কুরশীদ পাহান, প্রদীপ আগরওয়াল প্রমুখ। অপরদিকে জেলার নিয়ামতপুরে এদিন সকাল ১০টায় যথাযোগ্য মর্যাদায় ঐতিহাসিক সান্তাল বিদ্রোহ দিবস (সিদু-কানু) পালিত হয়েছে। ঠাকুরগাঁও নিজস্ব সংবাদদাতা ঠাকুরগাঁও থেকে জানান, নানান কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে পালিত হয়েছে ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। শনিবার সকালে স্থানীয় প্রেসক্লাব চত্বর থেকে র‌্যালি বের করে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ। র‌্যালিটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একইস্থানে গিয়ে শেষ হয় এবং পরে সেখানে দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বক্তব্য দেন, প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি মনসুর আলী, প্রাক্তন সভাপতি আবু তোরাব মানিক, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ জেলা শাখার উপদেষ্টা এ্যাড. ইমরান হোসেন, শামীম হোসেন প্রমুখ। সভায় বক্তারা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য কাজ করতে সরকারকে আরও আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন।
×