ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভৈরব নদ দখল উচ্ছেদের খবর নেই

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১ জুলাই ২০১৮

ভৈরব নদ দখল উচ্ছেদের খবর নেই

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোর প্রশাসনের উদাসীনতা আর উচ্চ আদালতের নির্দেশনার কারণে শুরু হয়নি ভৈরব নদের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান। ফলে যশোরবাসীর বহুদিনের স্বপ্ন দখলমুক্ত ভৈরব খনন বাস্তবায়নের কাজ থমকে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ভৈরব নদ খনন প্রকল্প। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান শুরু না হওয়ায় ফেরত যাচ্ছে বরাদ্দের চার লাখ টাকা। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত বছর ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোরে এসে ভৈরব খনন কাজ উদ্বোধন করেন। এরপর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে তৎপর শুরু হয়। ২৮ জানুয়ারি স্থাপনা সরিয়ে নিয়ে ২৯৬ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নোটিস দেয় জেলা প্রশাসন। যার মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ভৈরব গর্ভে রয়েছে ৮৬টি প্রতিষ্ঠান। তবে নোটিসের পরপরই অবৈধ সম্পদ রক্ষায় দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। এরই অংশ হিসেবে সংঘবদ্ধভাবে দখলদাররা উচ্চ আদালতে যান। উচ্চ আদালতের স্থগিত আদেশের আওতায় আসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ১৬টি স্থাপনা। এই ১৬টি স্থাপনা বাদে বাকি ৭০টি স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে কোন বাধা নেই। কিন্তু কোন বাধা না থাকলেও অদৃশ্য কারণে ৭০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযান এখনও শুরু করা হয়নি। জেলা প্রশাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত ভৈরব নদ খননে একনেকে অর্থ বরাদ্দ হওয়ার পর অবৈধ দখলদারদের চিহ্নিতের কাজ শুরু হয়। ভৈরব নদর সীমানা নির্ধারণের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড অবৈধ স্থাপনার একটি তালিকা তৈরি করে। এ ছাড়া নদের দুইধারে যশোর জেলা প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমিতে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করে প্রশাসন। সবমিলে ভৈরব গর্ভে ও তার পাড়ে সরকারী জমিতে গড়ে তোলা ২৯৬ অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে গত ২৮ জানুয়ারি উচ্ছেদের চূড়ান্ত নোটিস দেয়া হয়। নোটিসে এক সপ্তাহের মধ্যে সব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয়। নোটিস পাওয়ার পর দিনই বেশ কয়েকজন নিজেদের বৈধ মালিক দাবি করে জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেন। পরে তারা উচ্ছেদ বন্ধে উচ্চ আদালতের দারস্থ হন। ফলে থমকে যায় যশোর অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি ভৈরব পাড়ের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান। এরপর থেকে জেলা মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় একাধিকবার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয় স্থগিত আদেশ নেই এমন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হবে। সর্বশেষ গত ১৯ জুনও এমন একটি সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু বাস্তবে কাজ শুরু না হওয়ায় ফেরত যাচ্ছে উচ্ছেদের জন্য বরাদ্দকৃত চার লাখ টাকা। এ বিষয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি নদগর্ভে থাকা ৮৬টির মধ্যে উচ্চ আদালতের উচ্ছেদ স্থগিতাদেশ আছে ১৬টি প্রতিষ্ঠানের। বাকি ৭০টি উচ্ছেদের জন্য আমরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু এখনও শুরু করা যায়নি। এরই মধ্যে অর্থবছর শেষ হচ্ছে। তাই এ জন্য বরাদ্দের টাকা ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস উদ্বোধন করতে এসে ভৈরব নদ খননের প্রতিশ্রুতি দেন। পরের বছর ১৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভৈরব নদ খননের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়। সেই চিঠির পর ভৈরব নদ খননে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়। ভৈরব নদর রিভার বেসিন এলাকার পানিবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ভৈরব নদের এই প্রকল্পটি গ্রহণ করে। এ জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) ২৭২ কোটি ৮১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ২৪ কোটি টাকা প্রক্কলন মূল্য ধরে ভৈরবের ১০ কিলোমিটার খনন করতে গত ২ সেপ্টেম্বর তিনটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। যার মধ্যে নদের উজানে ৫০ কিলোমিটার থেকে ৫৪ কিলোমিটার পর্যন্ত চার কিলোমিটার খননের জন্য প্রক্কলন মূল্য ধরা হয় আট কোটি ৭৪ লাখ ৩৯ হাজার ৭৮৫ টাকা ২০ পয়সা। ৫৮ কিলোমিটর হতে ৬১ কিলোমিটার পর্যন্ত তিন কিলোমটির খননের জন্য আট কোটি সাত লাখ ৬৬ হাজার ১৬৭ টাকা এবং ৬১ থেকে ৬৪ কিলোমিটর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার খননের জন্য প্রক্কলন মূল্য ধরা হয় সাত কোটি ৫৪ লাখ ৪৭ হাজার ৪৫৬ টাকা ত্রিশ পয়সা। ২৪ কোটি ৩৬ লাখ ৫৩ হাজার ৪০৮ টাকা মূল্যের তিনটি কাজের দরপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল গত ২৭ অক্টোবর। যেখানে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তাদের দরপত্র দাখিল করে।
×