ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তিন হাজার কৃষক দিশেহারা

পটিয়ার শ্রীমাই খালের ভাঙ্গন ভয়াবহ

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১ জুলাই ২০১৮

পটিয়ার শ্রীমাই খালের ভাঙ্গন ভয়াবহ

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া, ৩০ জুন ॥ অবৈধভাবে বালু ও খালের মাটি লুটের কারণে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শ্রীমাই খালের দুই পাড় ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতি বছরই খালের পাড় ভাঙ্গনের কারণে ইতোমধ্যে উপজেলার হাইদগাঁও, কচুয়াই, পৌরসভার বাহুলী, ভাটিখাইন ও ছনহরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অন্তত তিন হাজার কৃষক নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেকে বসতভিটে হারিয়ে ভাড়া বাসা কিংবা অন্যত্র জমি ক্রয় করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ফসলি জমি ও বসতভিটে খালে বিলীন হলেও এসব কৃষককে সরকারিভাবে কোন ধরনের সহযোগিতা করা হয়নি বলে অভিযোগ। শ্রীমাই খালটি উপজেলার হাইদগাঁও-কচুয়াই পাহাড়ের ‘শ্রীমাই আগা’ নামক এলাকা থেকে শুরু। খালটি চাঁনখালী খাল, মুরালী খাল হয়ে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে উপজেলার ছনহরা ইউনিয়নের উত্তর ছনহরা এলাকায় বেড়িবাঁধ ও চলাচল রাস্তা ভেঙ্গে ৭ পরিবারের বসতভিটে পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে সিএনজি চালক জসিম উদ্দিনের বসতভিটের ৯ শতক জায়গা সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে ওই পরিবারের সদস্যরা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী, বিজিএমইএ সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আ’লীগ নেতা মোহাম্মদ নাছির ব্যক্তিগত উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের অনুদান দিলেও সরকারীভাবে এখনও পর্যন্ত কোন ধরনের সহযোগিতা পাননি বলে জানান। জসিমের বসতভিটে ছাড়াও শ্রীমাই খালের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুই পাড়ে ব্যাপক ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। এই ভাঙ্গন রোধ করতে হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কিংবা সরকারী কোন প্রতিষ্ঠানকে উদ্যোগ নিতে হবে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, শ্রীমাই খালের বাহুলী, পারিগ্রাম, কচুয়াই, ভাটিখাইন ও পূর্ব হাইদগাঁও এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও মাটি লুটের কারণে এই ভাঙ্গন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। শনিবার দুপুরে পটিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী ও ছনহরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ দৌলতী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শ্রীমাই খালটি কয়েকশ’ বছরের পুরনো। এই খালের সঙ্গে পটিয়ার পূর্বাঞ্চল হাইদগাঁও-কচুয়াই পাহাড়ের ঝর্ণা ধারা ও চন্দনাইশ উপজেলার শীলছড়ি খাল, হরিণা ঝিরি খাল, অগ্নিছড়া, কলাছড়ি, ডিলি ঝিরি খাল, অট্টই ঝিরি খাল, বাট্ট্যা ঝিরি খাল, কমলাছড়ি, দক্ষিণ ডালা, উত্তর ডালা, আধার মানিক ও ডলু খাল যুক্ত। এসব খাল পাহাড়ী এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে। যার কারণে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ী ঢল ও বন্যায় শ্রীমাই খালের নিচের অংশে খালের দুই পাড় ভাঙছে। খালের শুরুতে উত্তরে-পূর্ব হাইদগাঁও ও দক্ষিণে-উত্তর শ্রীমাই এলাকা। এক সময় খাল ৫০ ফুট হলেও বর্তমানে খালের শুরুতে দুই পাড় ভেঙ্গে তিনশ ফুট ছাড়িয়েছে। জমি, বসতভিটে ও খাল সমান থাকলেও অবৈধভাবে বালু ও মাটি লুটের কারণে কৃষকের ফসলি জমি দিন দিন বিলীন হয়ে পড়ছে। শ্রীমাই এলাকার বাসিন্দা ও পটিয়া উপজেলা যুবলীগের সদস্য মোঃ দিদারুল আলম জানিয়েছেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে পূর্ব হাইদগাঁও আবদুল্লাহ বাপের বাড়ি, মাহাদাম পাড়ার মাথা, শ্রীমাই বদু বাপের বাড়ি, আমির বাড়ি, সবজা বাপের বাড়ি ঘাটা, আমতলীর মোড়, গোদার পাড়, রাজঘাটা সেতুর পশ্চিমে, শ্রীমতি বাড়ির পূর্বে, চন্দন পাড়া, উত্তর শ্রীমাই বৈদ্য পাড়া, ওয়াহিদুর পাড়া ইকবাল মেম্বারের বাড়ি এলাকা, মল্লপাড়া, পারিগ্রাম, বাহুলী, শ্রীমাই রেল সেতু, ভাটিখাইন, ছনহরা এলাকায় খালের দুই পাড় ভেঙ্গে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে বসতভিটে ছাড়াও ফসলি জমি, ফলজ বাগান, খামার ও পানের বরজ রয়েছে। প্রতি বছরই এভাবে খালের ভাঙ্গন অব্যাহত। খালের ভাঙ্গনে ও পাহাড়ী ঢলে সবচেয়ে বেশি ফসলি জমি তলিয়ে গেছে কচুয়াই ইউনিয়নের ওয়াহিদুর পাড়া এলাকার কবির সওদাগর ও শ্রীমাই এলাকার মোজাফফর আহমদের। উত্তর ছনহরা গ্রামের খাল পাড়ের বাসিন্দা ও সিএনজি চালক জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে তার বসতভিটেসহ ৯ শতক জায়গা সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি স্ত্রী, ৪ মেয়ে ও ১ পুত্র সন্তান নিয়ে কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছেন। একইভাবে গত বছরও বন্যায় তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পটিয়া উপজেলা যুবলীগের প্রাক্তন সদস্য মোহাম্মদ ছৈয়দুল হক জানিয়েছেন, বেড়িবাঁধ ও কেরিঞ্জা সড়ক ভেঙ্গে তাদের এলাকায় ক্ষতি হলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এখনও সরকারীভাবে কোন সহযোগিতা পাননি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে প্রতি বছরই শ্রীমাই খালে ভাঙ্গন দেখা দেয়। কচুয়াই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, গত দুই তিন বছরে কচুয়াই পারিগ্রাম চৌধুরী পাড়া এলাকার ৮-১০টি পরিবারের বসতঘর খালে বিলীন হয়ে গেছে। চলতি মৌসুমেও ব্যাপক ভেঙ্গেছে। ভাঙ্গনের বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীকে এলাকার জনগণ জানিয়েছেন। ভাঙ্গনরোধ করতে হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে মূল উদ্যোগ নিতে হবে।
×