ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বন্দ্ব-গ্রুপিংয়ে না জড়িয়ে নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন তৃণমূল নেতারা

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১ জুলাই ২০১৮

দ্বন্দ্ব-গ্রুপিংয়ে না জড়িয়ে নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন তৃণমূল নেতারা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কোন নেতা বা মন্ত্রীর দ্বন্দ্ব-গ্রুপিংয়ে না গিয়ে নৌকা মার্কার প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করলেন তৃণমূলের নেতারা। তবে ভোটের আগেই সারাদেশে সংগঠনকে শক্তিশালী এবং ঐক্যের অটুট বন্ধন গড়ে তোলার তাগিদ দিয়ে তারা বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কোনদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তবে নির্বাচন আসলেই আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ হয়ে যায়। এবার আমরা কোন নেতার গ্রুপিংয়ে যাব না, নেত্রী যাকে নৌকা দেবেন আমরা তাকেই বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামব। আমরা বুঝি নৌকা যেদিকে শেখ হাসিনা সেদিকে। শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবন গণভবনে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং দল সমর্থিত ইউনিয়ন পরিষদ ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরদের নিয়ে দ্বিতীয় দফার বিশেষ বর্ধিত সভায় তৃণমূলের নেতারা এমন অঙ্গীকার করেন। সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও দলের মধ্যে ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পরে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখেন। এরপর তৃণমূল নেতাদের কথা শোনেন শেখ হাসিনা। এ সময় তৃণমূল নেতারা স্থানীয় উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। কেউ কেউ স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন দেয়ার অনুরোধ জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে। দলের ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ করার কথা বলেন তৃণমূলের নেতারা। শুরুতেই বক্তৃতা করার সুযোগ পান কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। যার ইউনিয়নেই লাখ লাখ রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে। তিনি বলেন, উখিয়া-টেকনাফে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ৪ চারলেনে উন্নীত করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সম্মানী খুবই নগণ্য। আজকের এই সভায় এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কক্সবাজারে যে মেডিক্যাল কলেজটি করার কথা রয়েছে, দ্রুত সেটির ভিত্তিপ্রস্তর দেয়ার অনুরোধ জানাই। মাদকের কথা আসলে আমাদের উখিয়া-টেকনাফের মানুষের মাথা হেট হয়ে যায়। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখুন। মাদকের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে আপনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাই। ঝালকাঠি জেলার কৃত্তিপাশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শংকর মুখার্জি বলেন, আমি একজন সাধারণ মানুষ। হাঁস-মুরগি পালন করি। আজ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বলেই আমার মতো একজন সামান্য মাঠের কর্মীকে এখানে কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন। এ সুযোগ অন্য কেউ দিত না। আর সবাই উন্নয়নের কথা বলেন, কিন্তু উন্নয়ন দেখতে হলে গ্রামে আসেন। আগে আমাদের গ্রামে নলার-যাকে বলে খড় বা ছনের ঘর বলেন। এখন আমাদের গ্রামে কোন ছনের ঘর নেই। তিনি বলেন, ২০০১ সালের সেই ভয়াবহতা যারা দেখেন নাই, তারা বুঝবেন না জামায়াত-বিএনপি কী জিনিস। তাই আপনাদের বলব, কোন অবস্থায় যেন সেই জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় না আসতে পারে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনদিন বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসতে পারবে না। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নগরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নিলুফার ইয়াসমিন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আব্দুল কুদ্দুসকে পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খোকো মারমা তার বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ফলে পাহাড়ি মানুষের জীবন-মান উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা এখন শান্তিতে বসবাস করি। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমির আলী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ১৯টি সিট আমরা আপনাকে উপহার দেব। সিলেট সিটি কর্পোরেশনে আপনি যাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছেন আমরা আপনাকে সিটি মেয়র উপহার দেব। জাতীয় পার্টির স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, এখানে টাকা ছাড়া কোন নিয়োগ হয় না। সিলেটের ওই আসন থেকে শফিকুর রহমান চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়ার অনুরোধ জানাই। আমাদের নৌকা আমাদের ফিরিয়ে দিন। সুনামগঞ্জের মোহনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত তালুকদার বলেন, আমরা গ্রাম থেকে এসেছি, আমাদের কোন কথা বলার সুযোগ নাই। আওয়ামী লীগের শত্রু আর কেউ নাই। নির্বাচন আসলেই আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ হয়ে যায়। আমরা কোন নেতার গ্রুপিংয়ে যাব না, নেত্রী যাকে নৌকা দেবেন আমরা তাকে ভোট দেব। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। আমরা বুঝি নৌকা যেদিকে শেখ হাসিনা সেদিকে। পাবনা সদর উপজেলার সাদুল্যাহপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস ম-ল স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রশংসা করে বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি, নৌকার জয়ের জন্য কাজ করে যাব। বরিশাল মহানগরের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল ফারুক হুমায়ুন বলেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ করে এ রকম সুযোগ পাইনি। আজ যে সুযোগ পেয়েছি, তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আগামী সিটি নির্বাচনে আপনাকে বরিশাল থেকে একটা নতুন উপহার দেব। সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে মেয়র নির্বাচিত করে আপনাকে উপহার দেব।
×