ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জয়ের আশা আওয়ামী লীগের, সুষ্ঠু ভোটের দাবি বিএনপির

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১ জুলাই ২০১৮

জয়ের আশা আওয়ামী লীগের, সুষ্ঠু ভোটের দাবি বিএনপির

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ না হওয়ায় আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামেননি কোন প্রার্থী। তবে যে যার মতো করে ঘর গোছাতে বৈঠক কিংবা সভা অব্যাহত রেখেছেন। এর মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটাররা আগামী ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে তাদের জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশা করছেন। অন্যদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরীক দল খেলাফত মজলিস এবারই জোট ভেঙ্গে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ায় অনেকটা বিভ্রান্তিতে পরেছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। তবে বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, শেষপর্যন্ত খেলাফত মজলিসের মনোনীত প্রার্থী তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন। এজন্য তাদের ২০ দলীয় জোটের বৈঠক অব্যাহত রয়েছে। সূত্রটি আরও জানিয়েছেন, অবাধ সুষ্ঠু ভোট হলে তাদের ধানের র্শীষের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত হবে। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে আমি আগেই বলেছি আমার কোন লিখিত ইশতেহার নেই। বরিশাল নগরবাসীর চাওয়া-পাওয়াই আমার ইশতেহার। মহানগরীর মানুষের সেবায় আমি এই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, উন্নয়নের নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে যে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রেখেছেন, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের যে উন্নয়ন তিনি করেছেন তাতে ইনশাআল্লাহ বরিশালের মানুষ ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করবেন। সাদিক আব্দুল্লাহ আরও বলেন, আমার দাদা সাবেক মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, বাবা সাবেক চীফ হুইপ, মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কল্যাণে যে কাজ করেছেন, তাতে আমি মেয়র হই বা না হই বরিশালবাসীর জন্য চিরজীবন কাজ করে যাব। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসআর সমাজ কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান ও নগরীর বিশিষ্ট সমাজ সেবক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সালাউদ্দিন রিপন বলেন, সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বরিশাল নগরবাসী নৌকা মার্কায় শতভাগ ভোট দিয়ে আমাদের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে বিজয়ী করবেন বলে আমরা আশাবাদী। তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণ বরিশাল নগরীতে যে উন্নয়ন করেছে তা আজ পর্যন্ত কেউ করতে পারেনি এটা বরিশালের মানুষ জানেন। তাই হিরণের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্নের জন্য সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কোন বিকল্প নেই। অন্যদিকে বিএনপির দলীয় প্রার্থী মহানগর সভাপতি এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, বরিশালের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধ, আন্দোলন-সংগ্রাম রাজনীতিতে আমি জড়িয়ে রয়েছি। এখানকার মানুষ আমাকে পাঁচবার ভোট দিয়েছে। আমি প্রথম বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়ে উন্নয়ন করেছি। আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে শতভাগ বিজয়ের আশা করছি। আর আমি মেয়র নির্বাচিত হলে নগরবাসীর উন্নয়ন, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত একটি সুন্দর নগরী গড়ে তুলব। মজিবর রহমান সরোয়ার আরও বলেন, ২০১৮ সাল ভোটের বছর। নির্বাচন নিয়ে মানুষের শঙ্কা কাটানো আর সুনাম রক্ষা করা বর্তমান সরকারের দায়িত্ব। বরিশালের মাটিতে যদি উল্টা-পাল্টা কিছু হয়, নির্বাচনে কারচুপি হয় তবে সেটা বর্তমান সরকারের গায়ে পড়বে। ২০ দলীয় জোট ভেঙ্গে প্রথম প্রার্থী হলেন মাহবুব আলম ॥ এবারই প্রথম বরিশাল সিটি নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ভেঙ্গে মেয়র প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন খেলাফত মজলিসের মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক একেএম মাহবুব আলম। খেলাফত মজলিসের সাবেক মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কেন্দ্রের নির্দেশে তারা সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী দিয়েছেন। এ বিষয়ে বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহীন বলেন, কেন্দ্র থেকে ২০ দলীয় জোটের একক প্রার্থী করা হয়েছে মজিবর রহমান সরোয়ারকে। খেলাফত মজলিস যেহেতু জোটের শরিক সে কারণে তাদের কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকেই অনুসরণ করতে হবে। আবুল কালাম শাহীন আশা করেন শেষ পর্যন্ত অধ্যাপক একেএম মাহবুব আলম তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন। সিপিবি’র প্রার্থীকে প্রগতিশীল সংগঠনের সমর্থন ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মেয়র প্রার্থী ও জেলা কমিটির সভাপতি শ্রমিক নেতা এ্যাডভোকেট একে আজাদকে সমর্থন দিয়েছে প্রেস শ্রমিক ইউনিয়ন, মহানগর দোকান কর্মচারী ইউনিয়ন, গণফোরাম ও ঐক্য ন্যাপ। শুক্রবার রাতে কাস্তে প্রতীকের সমর্থনে এক সভায় সিপিবি, বামগণতান্ত্রিক মোর্চাসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে সিপিবি’র প্রার্থী একে আজাদকে সমর্থন দেয়া হয়। অনুষ্ঠিত সভায় মহানগর দোকান কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি স্বপন দত্ত’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট একে আজাদ, সিপিবি’র জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সেলিম, মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক দুলাল মজুমদার, যুব ইউনিয়নের সভাপতি এ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম খোকন, কমরেড বিমল মূর্খাজী, দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তুষার সেন, প্রেস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাসান, আব্দুর লতিফ, আল আমিন প্রমুখ। সভায় উদীচী, মহিলা পরিষদ, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন, নারী শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন, বস্তিবাসী ইউনিয়ন, হল শ্রমিক ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন ও যুব ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন। মেয়র পদে মনোয়ন জমা দিয়েছেন যারা ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের আটজন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া ১১৪ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ৩৮ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মেয়র প্রার্থীরা হলেন-আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, বিএনপি মনোনীত এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, জাতীয় পার্টির মনোনীত ইকবাল হোসেন তাপস, জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) বশির আহমেদ ঝুনু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহাবুব, বাসদ মনোনীত প্রার্থী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী, সিপিবি’র প্রার্থী একে আজাদ ও খেলাফত মজলিসের প্রার্থী একেএম মাহাবুব আলম। নির্বাচন কমিশনের সচিব আসছেন ৩ জুলাই ॥ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ আগামী ৩ জুলাই বরিশালে আসছেন। তিনি বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবেন। সভায় তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আসন্ন সিটি নির্বাচনের বিষয়ে বিভিন্ন দিক নিদের্শনা দেবেন বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও বরিশাল সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান। সূত্রমতে, নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ ৩ জুলাই সকাল ১০টায় রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় পরিদর্শন শেষে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সভাকক্ষে রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও সহায়ক কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবেন। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠানের জন্য ওইদিন বিকেল তিনটায় নির্বাচন কমিশনের সচিব বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসারসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবেন। বরিশালের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ মুজিবুর রহমান জানান, গত ৩১ মে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন ছিল গত ২৮ জুন। মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে ১ ও ২ জুলাই। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ৯ জুলাই। ১০ জুলাই দেয়া হবে প্রতীক বরাদ্দ। ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ৩০ জুলাই। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবার ২ লাখ ৪১ হাজার ৯৫৯ জন ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৩৩২ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ২০ হাজার ৬২৭ জন। বিএনপির কর্মী সভা ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে দলীয় প্রতীক বরাদ্দের পর বাড়ি বাড়ি প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ বৃদ্ধিসহ নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে অতন্দ্র প্রহরীর মতো দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্দেশনা দিয়ে দলীয় কর্মীদের নিয়ে শনিবার বেলা এগারোটায় প্রস্তুতি সভা করেছে মহানগর বিএনপি। নগরীর পশ্চিম কাউনিয়াস্থ মেয়র প্রাথী এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারের বাস ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত সভায় মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবুল হোসেন খান, মহানগর বিএনপি উপদেষ্টা নুরুল আলম ফরিদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান খান ফারুক, আলমগীর হোসেন, আব্বাস উদ্দিন বাবলু, রফিকুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন সিকদার, যুগ্ম-সম্পাদক আনায়ারুল হক তারিন, সৈয়দ আকবর হোসেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহিন প্রমুখ। সভায় নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের বিএনপি ও তার সকল সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের চতুর্থ পরিষদের মেয়র নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপি যুগ্ম- মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচনে কোন প্রকার মাঠ ফাঁকা রাখা যাবে না। সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থেকে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ নির্বাচন মেয়র হওয়ার জন্য নয়, এ নির্বাচন হবে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার নির্বাচন। নির্বাচনের দিন ভোটাররা যাতে নিশ্চিন্তে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেদিকে কর্মীদের খেয়াল রাখতে হবে। যেকোন ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ভোটের দিন নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে মাঠে থাকতে হবে।
×