ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হলি আর্টিজানের ঘটনা ছিল টার্নিং পয়েন্ট ॥ বেনজীর

জঙ্গী নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করেছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১ জুলাই ২০১৮

জঙ্গী নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করেছে

আজাদ সুলায়মান ॥ দুনিয়া কাঁপানো হলি আর্টিজান হামলার পর গত দুবছরে জঙ্গী নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করেছে র‌্যাব। দেশে ঠিক এই মুহূর্তে বড় ধরনের জঙ্গী হামলার সম্ভাবনাও নেই, ওদের সেই সক্ষমতাও নেই। তাই বলে আত্মতুষ্টিতে বসে নেই র‌্যাব। আগামী সাধারণ নির্বাচনকে ঘিরে জঙ্গী হামলার আশঙ্কা থাকলেও সেটা মাথাচাড়া দিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারবে না বলে মনে করেন স্বয়ং র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। তিনি যথেষ্ট আস্থার সঙ্গেই বলেছেন- হলি আর্টিজানের ঘটনা ছিল একটা টার্নিং পয়েন্ট। ওই ভয়ঙ্কর হামলা যেভাবে মোকাবেলা করা হয়েছে, তাতে কঠিন ম্যাসেজ পেয়েছে দেশী বিদেশী জঙ্গীরা। এ ধরনের হামলা কেন করা হয়েছিল, কেন দেশের একটি বিশেষ অঞ্চলের যুবকরা জঙ্গীবাদে জড়াচ্ছে, কীভাবে তাদের বিপদগামী করা হচ্ছে, তাদের নির্মূল করার কৌশল ও পুনর্বাসন নিয়ে এখন গবেষণা করছে র‌্যাব। মাস দুয়েকের মধ্যে সেই গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। আজ ১ জুলাই হলি আর্টিজান হামলা দিবস উপলক্ষে র‌্যাব মহাপরিচালক দৈনিক জনকণ্ঠসহ কয়েকটি গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ ধরনের তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেছেন, এ দেশের জঙ্গীবাদের আলোকে হলি আর্টিজান হামলা ছিল একটি টার্নিং পয়েন্ট। এটা ছিল দেশবাসীর জন্য একটা ওয়োক আপ কল। যেটা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ও নির্দেশে দেশব্যাপী ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করেছে। র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশব্যাপী তৎপরতা শুরু করে আজ বিশেষ একটা অবস্থানে এসেছি। এ হামলার পরবর্তী জঙ্গী তৎপরতা মোকাবেলা ও নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব বিশেষ কৌশল নিয়ে কাজ করছে নিরন্তর। শুধু অপারেশন নয়, সামাজিক কাজও করেছে। প্রচার চালিয়েছে। টিভি এ্যাড দেয়া হয়েছে। জঙ্গীদের সুপথে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসনের উদ্যোগও নিয়েছে র‌্যাব। শুধু র‌্যাবের ফিগারে বলতে পারি, হলি আর্টিজান হামলার পর গত দুবছরে দেশব্যাপী ১৫৬টি অভিযান চালানো হয়েছে। ৮টি ছিল লাইভ অপারেশন। এতে ৪৮৬ জঙ্গী ধরা হয়েছে। গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে ২১ জঙ্গী। ৭ জঙ্গী আত্মসমপর্ণ করে। হলি আর্টিজানের জন্য দায়ী সারওয়ার জাহান মানিক, ইব্রাহিম ও তামিমের মতো জঙ্গীরা নিহত হয়েছে। একজন বাদে সবাইকে ধরেছি। আলকুতনী প্রধান, নারী ব্রিগেড স্টুডেন্ট ব্রিগেড, আঞ্চলিক আমির, অর্থাৎ ওদের যে অংশটা টেররিস্ট অপারেশন করতÑ সে অংশটা ধ্বংস করে দিয়েছি। এখন ওদের তাত্ত্বিক গ্রুপ যেটা আছে- সেটা চেষ্টা করে যাতে ওরা রিঅর্গানাইজ হতে পারে। কিন্তু সেটাও আমরা নজরদারি করছি। আপনারা জানেন যে- আমরা কখনোই জঙ্গীদের ওপর থেকে দৃষ্টি সরাব না। গতকালও কিন্তু তিনজনকে এরেস্ট করেছি। এমন কোন মাস নেই, সপ্তাহ নেই যখন- আমরা জেএমবিকে ধরছি না। আমাদের যে সক্ষমতা রয়েছে, তার একটা অংশ রয়েছে যেটা শুধু টেররিস্টদের সঙ্গে ফাইট করছে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ রয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্ব রয়েছে। কারণ এদেশের মানুষ খুবই শান্তিপ্রিয়, ইসলামের নামে ধর্মের নামে জঙ্গীবাদ সন্ত্রাস পছন্দ করে না। জঙ্গীবাদের প্রেক্ষাপটে বলতে পারিÑ এই মুহূর্তে দেশ অনেকটাই নিরাপদ। এ ক্ষেত্রে আসন্ন কোন হুমকিও দেখি না। ওদের সেই সক্ষমতাও নেই। তবে এটা মনে রাখতে হবে যে অনেক সময় এককচিন্তা বা ব্যক্তিগতভাবে জঙ্গী মনোভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েও কাজ করতে পারে। বিদেশেও অনেক সময় এমনটি ঘটে। আপনারা জানেন- যে কারোর সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই, হয়তো একলা একলাই সোস্যাল মিডিয়াতে মটিভেটেড হয়েছে, হয়ে ট্রাক চালিয়ে দিলো ব্রিজের ওপর। টেররিজম করতে গেলে খুব বেশি কিছু দরকার হয় না। অনেকেই ইন্ডিপেন্ডেন্টও করতে পারে। এগুলো আসলে খুব একটা জটিল বিষয়। এখানে আমি মনে করি যে, আরও দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে হবে। যদিও আমাদের সাফল্য কিন্তু অনেক অনেক দেশের চেয়ে বেশি। এমনকি অনেক উন্নত দেশের চেয়েও টেরিরিজম মোকাবেলায় আমাদের সাফল্য বেশি। যদিও আমাদের ইকুপমেন্ট, ফাইন্যান্স, ও টেকনোলজি অনেক কম। তা সত্ত্বেও সাকসেস স্টরি বা রেট কিন্তু আমাদের অনেক বড়। এর ক্রেডিট হচেছ সরকার ও জনগণের। আমরা দ্রুতগতিতে এটাকে একটা তাৎপর্যপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে আসতে পেরেছি। এজন্য জঙ্গীবিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। যারা গ্রেফতার হয়েছে- তাদের একটা অংশ জামিনে বেরিয়ে এসেছে, অনেকে জামিনে এসে আবার পালিয়েছে, তাদেরও মনিটর করছি। আমাদের শুধু গ্রেফতার করে, কনভিকশন করলেই গল্প শেষ হবে না। এই লোকগুলোকে ডির‌্যাডিকালাইজ করতে হবে। কাউন্টার র‌্যাডিকালাইজেশন আসলে অনেক লম্বা পথ। তারপর হচ্ছে এদের পুনর্বাসন করা, কাউন্সেলিং করা, সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসাÑ এগুলো দীর্ঘ যাত্রার পথ। এই পথেই আমাদের যেতে হবে। আমরা অপারেশন ইউনিট করে যে সাফল্য পেয়েছি সেটাকে স্থায়ী করতে হবে। অপারেশনল ইউনিট নিষ্ক্রিয় হলেও দেখা গেছে সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জে একজন প্রকাশককে হত্যা এবং সিলেটে অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বেনজীর আহমেদ বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে সিলেটে এটা কিন্তু বড় কোন গ্রুপ নয়। ছোট্ট একটা গ্রুপ, লোকাল গ্রুপ। বলা চলে সেল্ফ মোটিভেটেড। আমরা চেষ্টা করছি সমস্ত গ্রুপকে ওয়াচে রাখা। সে কারণে আমরা বলছি, যেখানে বর্তমানে এসেছি, এখানে আত্মতুষ্টির কোন অবকাশ নেই, সন্তুষ্টির কোন অবকাশ নেই। আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। নতুন করে কেউ যাতে জঙ্গীবাদে দীক্ষিত না হয়, সে জন্য কাজ করতে হবে। যে একবার র‌্যাডিকালাইজড হয়ে গেছে- তাকে ডির‌্যাডিকালাইজড করতে হবে। আর যাতে কেউ না হয় সেজন্য কাউন্টার কাজ করতে হবে। এ ধরনের কাজ কিন্তু লং টার্মের বিষয়। সে প্রস্তুতি, ক্যাপাবিলিটি ও ফিন্যান্স কি র‌্যাবের আছে জনকন্ঠ প্রতিনিধির এমন প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, এ দায়িত্বগুলো কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এককভাবে নয়। যেমন ধরুন এখানে অনেক ফ্যাক্টর জড়িত আছে। সেগুলো নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় অনেক জঙ্গী প্রচারণায় সক্রিয় রয়েছে সেগুলো বন্ধ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অনেক কিছুই চেষ্টা করছি বন্ধ করার জন্য। কিন্তু এমন অনেক সাইট আছে আমরা পারি না। কারণ এগুলোর এডমিন বাইরের। আমাদের এখানে অফিসও নেই। তো এখানে পশ্চিমারা কিছু টেকনলোজি আবিষ্কার করেছে- যেগুলো আমাদের কাছে নেই। আমরা চাইলেও পারি না। যেমন এমন কিছু টেকনলোজি আছে যেগুলো আছে তারা চাইলে ওই সফটওয়ার আপলোড করলে ওই কথাবার্তাগুলো অটোমেটিকভাবে মুছে যাবে। ওই টেকনোলজি কিনতে গেলেও পাই না। কারণ পশ্চিমারা আমাদের অনেক কিছুই দেয় না। এটা এখন হয়তো লোকালি রিসার্চ করে বের করতে হবে। আমাদের এখানেও সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে, ৫/৭ বছর পর হয়তো তারাই পারবে। আসলে আমাদের দেশে যে টেররিজম গড়ে উঠছে সেটা ইন্টারনেট থেকেই হয়েছে। ইন্টারনেট তো একটা বিশাল জগৎ। আমরা যেটা দেখি এটা তো ওপেন এরিয়া। ডাক ওয়েজ আছে ডিপ ওয়েভ আছে। এ দুটোতে তো বিলিয়ন বিলিয়ন ম্যাটার রয়ে গেছে। যেগুলো আমরা নরম্যালি দেখি না। ডাক ওয়েভ ও ডিপ ওয়েভে আমাদের কাজ করতে হবে। এ চ্যালেঞ্জটা বাংলাদেশের একার নয়। এটা বৈশ্বিক। এটাকে বৈশ্বিকভাবেই মোকাবেলা করার সুযোগ আছে। এ প্রেক্ষিতে আমাদের সার্থকতার গল্প অনেক বড়। যেটা অনেকেরই নেই। তারপরও বলছি আমার দেশে অনেক ইমাম আছে, ইসলামিক স্কলার আছে, তাদের জঙ্গীবাদবিরোধী সচেতনতায় কাজে লাগাতে হবে। সোসাল মিডিয়া বা ইন্টারনেটে মেসেজ দিয়ে একতাবদ্ধ হতে হবে। যাতে করে আমার দেশের কেউ ইন্টারনেটের মাধ্যমে র‌্যাডিকালাইজড না হয়। তাদের ওখান থেকে সরিয়ে আনতে হবে। আপনারা জানেন যে, আইএসের হাতে কিন্তু মারা গেছে সবচেয়ে বেশি মুসলিমস। আইএস যদি ইসলামের ঝান্ডাই হয়, তাহলে কেন তাদের হাতে হাজার হাজার মুসলিম মরছে? কেন অন্যরা মরছে না? এটা দেখতে হবে। এবং এটা আমাদের দেশের ইসলামিক স্কলারদেরই আইডেন্টিফাই করতে হবে। এ প্রসঙ্গে র‌্যাব মাঠ পর্যায়ে গবেষণা করছে বলেও জানিয়েছেন র‌্যাব মহাপরিচালক। দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষ কেন এত বেশি জঙ্গীবাদে জড়ায় এটা র‌্যাবের কাছে একটা প্রশ্ন। ইতোমধ্যে র‌্যাবের গবেষণা অনেকটাই এগিয়েছে। র‌্যাব অত্যন্ত পেশাদার গবেষক দিয়েই মাঠ পর্যায়ে কাজ করাচ্ছে। এটার কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। মাস দুয়েকের মধ্যে তার প্রতিবেদন প্রকাশের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, কেন গ্রামের সেই প্রান্তিক দরিদ্র মানুষের সঙ্গে সমাজের বিত্তবানের ছেলে মেয়েরা একত্র হয়ে টেররিজম করছে। এটা দুটো শ্রেণীর কীভাবে মিলছে। এদের কালচার ডিফারেন্ট, এদের বিহেবিরাল এটিচুড ডিফারেন্ট, তা সত্ত্বেও কীভাবে মিলছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের সঙ্গে মাদ্রাসা ছাত্র কীভাবে একত্রিত হলো? এদের ড্যাইভিং ফ্যাক্টরগুলো খুঁজে বের করার জন্যই গবেষণা চলছে। এ গবেষণার ফাইন্ডিংসগুলো অপারেশনল কাজে ব্যবহার করা হবে। এটা সোসাল মিডিয়াতেও শেয়ার করা হবে যাতে প্রত্যেকেই এ থেকে শিক্ষা নিতে পারে। আগামী সাধারণ নির্বাচনে জঙ্গীরা মাথাচাড়া দিতে পারে বিদেশী গণমাধ্যমের এমন সংবাদ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা এক ধরনের ইস্টিমেশন যে, ইলেকশন আসছে। তাই এ ধরনের সম্ভাবনা থাকতে পারে। এটা তত্ত্ব বা তথ্যভিত্তিক নয়। এটা ধারণা বা আশঙ্কা। তবে আশঙ্কাকে আমরা উড়িয়ে দিব না। আমরাও গুরুত্ব দিব- যাতে করে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কেউ কোন ধরনের টেররিজমকে উস্কানি দিতে না পারে। অথবা উস্কানি দিয়ে এদের রিঅর্গানাইজড না করতে পারে। জঙ্গীবাদের প্রধান উপাদান অর্থ। দেশ বিদেশে জঙ্গী অর্থায়ন বন্ধের বা উৎস চিহ্নিত করা নিয়ে অনেক কাজ চলে। র‌্যাবও সেভাবেই কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে র‌্যাবের কৌশল সম্পর্কে জানালেন বেনজীর। বললেন, র‌্যাবের পক্ষ থেকে অনেক ফাইন্যান্সারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নব্বই দশকে যখন টেরিরজম শুরু করে হুজি, তারপর জেএমবি, তখন যেভাবে ফাইন্যান্সিংটা হতো, আসলে নাইন ইলেভেনের পর সে সিনারিওটা চেঞ্জ হয়েছে। তখন টাকা আসত বাইরে থেকে এনজিও এর মাধ্যমে, বা হুন্ডির মাধ্যমে বা ব্যাংকের মাধ্যমে, টুইন টাওয়ার হামলার পরে অনেক এনজিওকে আমেরিকানরা চিহ্নিত করে। তারা গবেষণা শুরু করে। আমাদের এখানেও দুটো এনজিও কাজ করত, পরে তারা চলে গেছে। তখন যেভাবে ফাইন্যান্সিং হতো এখন সেভাবে হয় না। এখন এক দেশ থেকে অন্য দেশে ১০ হাজার ডলার ট্রানজাংশান দুনিয়াব্যাপী মনিটর করা হয়। এখন তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। কিছুদিন আগে দেখেছেন স্পেনে কোম্পানি খুলে এখান থেকে এলসি করে টাকা নিত। একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ফাইন্যান্স করত তাকে ধরেছি। একজন লইয়ার করত তাকেও ধরেছি। এখন যেটা দেখছি, ফাইন্যান্সের বড় একটা অংশ আসে ইয়ানত থেকে, যার অর্থ সদস্যরা নিজেরা নিজেরা চাঁদা দিয়ে ফান্ড করা। অনেক সময় দেখা যায় তারা একটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান (মসজিদ-মক্তব ) তৈরি করে গ্রামবাসীর কাছ চাঁদা আদায় করে। অনেকেই পেশা ছেড়ে এ পথে এসে অর্থ দিচ্ছে। একজন ডক্টরকে জানি যে ৭০ লাখ টাকার সম্পদ বিক্রি করে টাকা নিয়ে সিরিয়া গেছে বাকিটা দলে দিয়ে গেছে। অর্থাৎ আর্থিকভাবে যারা সচ্ছল তারা সম্পদ বিক্রি করে সব দিয়ে দেয়। আসলে এখন ইয়ানত থেকেই বেশি অর্থায়ন হচেছ। আর ছোটখাটো অর্থায়ন যে হয় না তা নয়। যেমন ৫০০ ডলার বা ১০০০ ডলারের ট্রানজাংশান যখন দেখি তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা নেয়া হয়। জঙ্গীদের গোপনে জামিন কৌশল সম্পর্কে বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ করেন র‌্যাব মহাপরিচালক। তিনি জানালেন একজন বড় মাপের জঙ্গী নেতা জেল খানায় বসেও তাত্ত্বিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। ওই জঙ্গী কাশিমপুর কারাগার থেকে একটা মামলা জামিন নেয়ার পর বের না হয়ে অন্য এক মারামারির মামলায় ঝিনাইদহ কারাগার থেকে জামিন নিয়েছেন। যেখানে র‌্যাবের কোন মনিটর থাকার কথা নয়। আমরা দেখেছি টেররিস্ট মামলা জামিন হয়েছে তারপর তার বিরুদ্ধে মারামারির মতো তুচ্ছ মামলা দায়ের করে তাকে মাসের পর মাস কারাগারে রেখেছে। এ মামলা করে তাকে অন্য একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে পরে বেইল করানো হয়েছে। যাতে র‌্যাব মনিটর করতে না পারে। এ ক্ষেত্রে কারাগারের বিশেষ মনিটর করতে হবে। আপনারা জানেন কারাগারগুলোতে বর্তমানে প্রায় বন্দীর সংখ্যা ৭৫ হাজার। গত দুই মাসে মাদকের অভিযানে ধরা পড়েছে আরও ২০ হাজার। তাহলে বুঝতেই পারেন কারাগারের কি অবস্থা। তবে যে কাজটা বিশ্বব্যাপী দরকার সেটা হলো ওদের আলাদা প্রিজনে রাখা। আবার আলাদা আলাদা সেলে রাখতে হবে যাতে সেখানে বসে কিছু করতে না পারে। সেখানে রেখে কাউন্সিলিং করতে হবে। কিন্তু আমাদের সে বাস্তবতা নেই। এখানে তো দুজনের সেলে ৫০ জনকে রেখেছি। তবে আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব রেখেছি এদের জন্য আলাদা কোন প্রিজন তৈরি করা। জঙ্গীদের জন্য কোন আলাদা কারাগার তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছেন কিনা জনকণ্ঠের এমন প্রশ্নের জবাবে বেনজীর বলেন, নট অনলি জঙ্গী, মাদকের আসামির জন্যও আলাদা কারাগার দরকার। মাদকের জন্য দুধরনের লোককে কারাগারে পাঠাচ্ছি। একটা মাদক সেবী আরেকটা ব্যবসায়ী। সেবীদের আমি মনে করি চিকিৎসা দিতে হবে, কাউনিসিলিং করতে হবে। সমাজে পুনর্বাসন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সমাজ ও পরিবারের ভূমিকা রয়েছে। মনোবিজ্ঞানীদের ভূমিকা রয়েছে। যারা ব্যবসায়ী তাদেরও দেখতে হবে। জেল থেকে বের হয়ে সে কি করবে? তাকে হয়তো ব্যবসা বা অন্য কোথাও কাজ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রেও আলাদা জেল দরকার। এ ছাড়া তাদের চিকিৎসারও ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে ৭০ থেকে ৮০ লাখ মাদকসেবী রয়েছে। তাদের চিকিৎসার জন্য রয়েছে মাত্র এগার থেকে ১২ শত শয্যার সুবিধা। তার মানে এদের চিকিৎসার জন্য কত হাজার বছর দরকার? এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। এদেশে বিদেশী জঙ্গী আস্তানা সম্পর্কে জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, জঙ্গীদের জন্য এখন বিশ্বের কোথাও কোন ল্যান্ড নেই। একমাত্র আফগানিস্তানে তাও একটা প্রদেশে কিছু রয়েছে। আর আমাদের দেশ এত বেশি ঘনবসতি যে এখানে কোন বিদেশী লোক এসে জঙ্গী আস্তানা গড়তে পারবে না। হলি আর্টিজানের হামলা মোকাবেলায় সিলেট থেকে কমান্ডো আনার পরিবর্তে র‌্যাবের নিজস্ব সক্ষমতা দিয়ে এ অপারেশন চালানো সম্ভব ছিল কিনা জনকণ্ঠের এই প্রশ্নের জবাবে বেনজীর আহমেদ বলেনÑ আমার এসেসমেন্ট হচেছ এটাকে এভাবে না দেখা। আমি বরং বলব এটাই রাষ্ট্র্রের দূরদর্শিতা। আপনারা জানেন রাত পৌনে নয়টা থেকে আমরা সারাক্ষণ সেখানে ছিলাম। রাষ্ট্র চেয়েছে এ ধরনের ঘটনায় রাষ্ট্রের যে সক্ষমতা রয়েছে তা প্রদর্শন করা। অর্থাৎ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে। এটার কিন্তু একটা ফলও দিয়েছে। যেমন আমরা এগারো ঘণ্টার মধ্যে এটাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। আপনারা দেখেছেন অনেক ওয়েস্টার্ন দেশে এ ধরনের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে দুদিন তিন দিন লেগেছে। পাকিস্তানের বর্ডারে পাঠানকোট এয়ারবেইজ মুক্ত করতে তিন দিন লেগেছে। কাজেই হলি আর্টিজানে আমরা যা করেছি তাতে শুধু দেশীয় নয় বিদেশীরাও একটা সিগনাল পেয়েছে। তাই আমি মনে করি, ইট ওয়াজ এ গুড ডিসিসন। হলির মতো আরেকটা হামলা ঠেকানোর মতো একক সক্ষমতা র‌্যাবের রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু র‌্যাব কেন, পুলিশসহ অন্য যে কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যেকেরই স্বাধীনভাবে এককভাবে যে কোন ধরনের অপারেশন চালানোর সেই সক্ষমতা রয়েছে। হলি আর্টিজানের হামলাকারীদের জীবিত অবস্থায় ধরা যেত কিনা এ প্রতিনিধির এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওরা তো সুসাইডাল স্কোয়াডের। ওরা এখানে জীবন দিতেই এসেছিল।
×