ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের আড়াই লাখ কর্মীকে ফিরতে হবে

মালয়েশিয়ায় অবৈধদের ধরতে অভিযান শুরু, তিন হাজার গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১ জুলাই ২০১৮

মালয়েশিয়ায় অবৈধদের ধরতে অভিযান শুরু, তিন হাজার গ্রেফতার

ফিরোজ মান্না ॥ বৈধ হওয়ার ‘রিহ্যায়ারিং’ কর্মসূচীর শেষ দিন শনিবার মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ অবৈধদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে। বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ৮শ’র বেশি বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় তিন হাজার কর্মীকে আটক করা হয়েছে। আটকদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে বাংলাদেশের দুই থেকে আড়াই লাখ কর্মীকে দেশে ফিরতে হবে। অন্যদিকে, দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারান গত ২৩ জুন বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছেন। মানবসম্পদ পাচারের অভিযোগের মুখে থাকা একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন। মালেিয়শিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, রিহ্যায়ারিং কর্মসূচীর শেষ দিন পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চৌকি বসিয়ে কর্মীদের কাগজপত্র পরীক্ষা করছে। যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই তাদের আটক করে অস্থায়ী ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৮ শ’র বেশি বাংলাদেশী কর্মীকে আটক করার খবর তারা পেয়েছে। আটকদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তা কিছুই বলতে পারেনি। মালয়েশিয়া থেকে সূত্র জানিয়েছে, অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণের প্রক্রিয়া ৩০ জুন (শনিবার) রাত ১২টা পর্যন্ত পুত্রাযায়া ইমিগ্রেশন বিভাগে ফিঙ্গারিঙের কার্যক্রম চলবে। রাত ১২ টার পরে আর কোন অবৈধকে বৈধ করার সুযোগ দেয়া হবে না। যদি ইমিগ্রেশন অফিসে বৈধ হওয়ার জন্যও গিয়ে ১২ টার মধ্যে বৈধ হতে না পারেন তাদেরও অবৈধ হিসেবে গ্রেফতার করা হবে। ইমিগ্রেশন বিভাগ এবার অবৈধদের আর ক্ষমা করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চালু হওয়া দীর্ঘ মেয়াদী এ বৈধকরণ প্রকল্পে যেসব অভিবাসী কর্মী ও নিয়োগকর্তারা নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের আর সময় দেবে না কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের কঠোর অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাইকমিশন আটক কর্মীদের বিষয়ে কোন আলোচনায়ই যাচ্ছে না। তারা পররাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে বিষয়টি জানিয়েছে। দুই মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারান জানিয়েছেন, একটি চক্র মালয়েশিয়ার বিগত সরকারের শীর্ষ মহলের যোগসাজশে বাংলাদেশে এজেন্ট অনুমোদন দিয়ে একচেটিয়াভাবে মানবসম্পদ নিয়েছে। এ চক্রের নেতৃত্বে প্রবাসী দাতু আমিনের নাম উঠে এসেছে। দাতু আমিনকে খোঁজা হচ্ছে। তাকে পেলে মালয়েশিয়ায় মানব সম্পদ নিয়োগের অনিয়মের সব বিষয় পাওয়া যাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ১০ টি এজেন্সি সম্পর্কেও খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তারা কিভাবে কর্মী পাঠিয়েছে। সব কিছুর তদন্ত শেষ হওয়ার পরই বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হবে। এখনই কোন প্রকার আলোচনা হচ্ছে না। দেশটির বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে কর্মীদের কাছ থেকে দুই বছরে অন্তত ৩০০ কোটি রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত এক লাখের বেশি বাংলাদেশী কর্মী মালয়েশিয়ায় নিয়োগ পেয়েছেন। অপেক্ষায় রয়েছে আরও ৪ লাখ। এই সিন্ডিকেটের মালয়েশিয়া অংশের নেতৃত্ব দিয়েছেন দাতু আমিন নামের এক ব্যক্তি। সরকার বদলের পরই তিনি কানাডায় চলে গেছেন। বাংলাদেশ অংশে ছিলেন বায়রার সাধারণ সম্পাদক। তিনিও এখন কানাডায় অবস্থান করছেন। সূত্র জানিয়েছে, দেশটির অভিবাসন বিভাগ এক জুলাই থেকে পর্যবেক্ষণ করবে অবৈধরা স্বেচ্ছায় দেশ ত্যাগ করছে কিনা। এরমধ্যে কেউ গ্রেফতার হলে দেশটির অভিবাসন আইন অনুযায়ী ইমিগ্রেশন এ্যাক্ট ১৯৫৯/৬৩-এর ধারা ৫৫-বি’র অধীনে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার রিঙ্গিত জরিমানা বা ১২ মাস পর্যন্ত জেল অথবা উভয় দ- দেয়ার বিধান রয়েছে। দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ জানিয়েছে, বিপুল কর্মী বৈধ হওয়ার জন্য কোম্পানি মারফত ও কোম্পানি ছাড়া বহু এজেন্টের কাছে টাকাপয়সা ও পাসপোর্ট দেয়ার পরও তারা বৈধ হতে পারেননি। এসব কোম্পানি ও এজেন্ট শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে এক জুলাই থেকেই মাঠে নামবেন তারা। এদিকে সময়সীমা শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই মালয়েশিয়ার সর্বত্র ধরপাকড় চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। এ ধরপাকড়ে বাংলাদেশীসহ ৮শ’র বেশি অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৈধকরণ ও ধরপাকড় বিষয়ে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোঃ সায়েদুল ইসলাম বলেন, রি-হিয়ারিং কর্মসূচী সফল করতে বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। পাশাপাশি ছুটির দিনেও মালয়েশিয়ার প্রত্যন্ত এলাকায় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা অবৈধ প্রবাসীদের সেবা দিয়েছেন। কর্মীদের সচেতন করতে প্রচারপত্র বিলি করা হয়। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করা হয়েছে। এর পরও অনেকেই বৈধ হতে ব্যর্থ হয়েছেন। যারা ব্যর্থ হয়েছেন তারা আটক হলে কিছু করার নেই। হাইকমিশন থেকে সবসময় বলে দেয়া হয়েছে, কেউ যেন তথ্য গোপন না করে। তথ্য গোপন করলেই তার পাসপোর্ট পেতে সমস্যা সৃষ্টি হবে। এছাড়া দালালের শরণাপন্ন না হওয়ার জন্যও বলা হয়েছে অবৈধ প্রবাসীদের। কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে হাইকমিশনের শরণাপন্ন হয় কর্মীরা। তখন আর কিছু করার থাকে না। অবৈধ যারা আটক হয়েছেন তারা দেশে ফেরত যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ২৯ জুন পর্যন্ত ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৮শ’ ৯২ কর্মী ও ৮৩ হাজার ৯শ’ ১৯ জন নিয়োগ দাতা বৈধকরণ প্রকল্পে নিবন্ধিত হয়েছেন। নিবন্ধিতদের মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার ৩শ’ ৩২ জন অবৈধ কর্মীকে বৈধতার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
×