ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সম্মেলনে আহ্বান

গৃহশ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় সকলকে একত্রে কাজ করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১ জুলাই ২০১৮

গৃহশ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় সকলকে একত্রে কাজ করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গৃহশ্রম অসম্মানের কাজ নয় বরং এটাকে পেশা হিসেবে দেখা উচিত। গৃহশ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন মানবাধিকার নেত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। গৃহশ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের উদ্যোগে শনিবার সকাল ১০টায় আয়োজিত ‘গৃহশ্রমিক সম্মেলন ২০১৮’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। ‘গৃহশ্রমিক সম্মেলন ২০১৮’র এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো- ‘সকল গৃহশ্রমিক এক হও, অধিকার ও মর্যাদার জন্য সংগঠন গড়ে তোল’। এ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস। সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার নেত্রী ও গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ড. হামিদা হোসেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ বিলসের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শাহ মোঃ আবু জাফর ও নাজমুল আহসান জুয়েল, ডিডাবলিউআরএন-এর সদস্য সচিব সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন যুগ্ম-মহাসচিব ড. ওয়াজেদুল ইসলাম খান। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি আলহাজ শুক্কুর মাহমুদ। এছাড়া সম্মেলনে গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কভুক্ত খ্যাতনামা মানবাধিকার সংগঠন ও জাতীয়ভিত্তিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনসমূহের নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও জাতীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ঢাকা শহরের চৌদ্দটি এলাকার গৃহশ্রমিক সংগঠিতকরণের কাজে নিয়োজিত নেতারা এবং গৃহশ্রমিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে বক্তারা বলেন, গৃহশ্রমিকের অধিকার মানবাধিকার কিন্তু বর্তমান সময়ে সর্বত্রই এই অধিকার লঙ্ঘিত হয়ে চলেছে। গৃহশ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সংগঠিত হচ্ছে নৃশংস হত্যাকাণ্ড। সরকার ইতোমধ্যে গৃহশ্রমিক সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালা-২০১৫ ঘোষণা করেছে। তবে এখন বিষয়টিকে আইনের সুরক্ষায় এনে গৃহশ্রমিকদের ওপর নির্যাতন প্রতিরোধ ও তাদের মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করার সময় এসেছে। সম্মেলনে গৃহশ্রমিক সুরক্ষানীতি-২০১৫ বাস্তবায়নের মাধ্যমে গৃহশ্রমিকদের সুরক্ষা ও কল্যাণ সর্বোপরি তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, নির্যাতন ও সহিংসতা বন্ধ এবং ন্যায্য মজুরি, ক্ষতিপূরণ ও শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। ঘোষণাপত্র উপস্থাপনকালে ড. ওয়াজেদুল ইমলাম খান বলেন, দেশের প্রধান দশটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে বিলস্ পরিচালিত জরিপ থেকে দেখা যায়, শুধু ২০১৭ সালেই দেশে নির্যাতনের কারণে ২৪ জন গৃহশ্রমিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২৪ জন। সারাদেশে শহরে মফস্বলে এমনকি গ্রামেও লাখ লাখ নারী শিশু ও কিশোর-কিশোরী গৃহশ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। শ্রমিক হলেও দেশের শ্রম আইনের সুরক্ষা ও অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত তাদের বিশ্রাম, বিনোদনের অন্যতম কোন সুযোগ নেই, মুক্ত মানুষ হয়েও চার দেয়ালে তারা বন্দী, বন্দী তাদের শিক্ষা, সুকুমারবৃত্তি আর মানবাধিকার। এই সম্মেলন থেকে সরকারের নিকট কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। সুপারিশগুলো হলো- গৃহশ্রমিকদের আইনে শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করে তাদের মজুরি, কর্মঘণ্টা, ছুটি, বিশ্রাম, বিনোদন, ক্ষতিপূরণ, মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার চর্চার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ নীতি শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং দেশের সকল জেলা উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ট্রেড ইউনিয়নের সম্পৃক্ততায় মনিটরিং কমিটি এবং পরিদর্শন টিম গঠন করতে হবে। অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গৃহশ্রমিকদের জন্য শোভন কাজ সংক্রান্ত আইএলও কনভেনশন নং ১৮৯ দ্রুত অনুসমর্থন করতে হবে। অবিলম্বে গৃহশ্রমিক নিবন্ধন ও পরিদর্শন কার্যক্রম চালু করতে হবে। গৃহকর্মে শিশু নিয়োগ বন্ধ করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে শিশুর নিয়োগদাতা ও অভিভাবকদেরকে জবাবদিহিতা ও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। গৃহশ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বল্প মূল্যে রেশনিং, বীমা ও পেনশন স্কিম চালু করতে হবে।
×