ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আজ থেকে একদামে কেনাবেচা হবে কম্পিউটার ল্যাপটপ

প্রকাশিত: ০৫:১২, ১ জুলাই ২০১৮

আজ থেকে একদামে কেনাবেচা হবে কম্পিউটার ল্যাপটপ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ একই ব্র্যান্ডের একই মানের কম্পিউটার প্রযুক্তি পণ্য বাজারে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হয়। প্রযুক্তি পণ্যের গায়ে (পিসি, ল্যাপটপ) কোন দাম লেখা থাকে না। ফলে ক্রেতাকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। আজ রবিবার থেকে আর এই সমস্যা থাকবে না। কোন ব্র্যান্ডের নির্দিষ্ট একটি মডেল সব বাজারে একই দামে বিক্রির জন্য ওইদিন থেকে কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা যে কোন প্রযুক্তি পণ্যের গায়ে মূল্য লেখা (এমআরপি) থাকবে। যে দাম লেখা থাকবে তার চেয়ে বেশি বা কম দামে ব্যবসায়ীরা তা বিক্রি করতে পারবে না। ক্রেতা দামাদামী করতে পারবে না। গায়ের দামের চেয়ে বেশি বা কম দামে পণ্য বিক্রি করলে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। দেশের কম্পিউটার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশে কম্পিউটার পণ্যের আমদানিকারক-পরিবেশকরা পণ্যের দাম বেঁধে দেবেন। সেই দামে পণ্য বিক্রি করতে হবে ব্যবসায়ীদের। দাম যেন যৌক্তিক হয় তা দেখভাল করার জন্যও একটি কমিটি কাজ করবে। অন্যদিকে বিসিএস যে ওয়ারেন্টি নীতিমালা তৈরি করেছে তাও কার্যকর হবে রবিবার থেকেই। এই দুটি নিয়ম চালু হলে প্রযুক্তি পণ্যের ক্রেতার দুর্ভোগ কমবে। কম দামে পণ্য কেনার জন্য এ মার্কেট, ওই মার্কেট ঘুরতে হবে না। সব দোকানে একই পণ্য একই দামে বিক্রি হবে। প্রযুক্তি বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে বাজারের একচেটিয়া রাজত্ব কমবে। তারা আরও বলেন, ওয়ারেন্টি নীতিমালা বাস্তবায়ন করা গেলে, গ্রাহক পণ্য কেনার সময়ই বুঝে যাবেন তিনি কতটুকু ওয়ারেন্টি পাবেন, কত সময়ের মধ্যে এলে পাবেন, পণ্যের অবস্থা কেমন থাকতে হবে ইত্যাদি। সব কম্পিউটার দোকানে একই নিয়ম মানতে হবে। কেউ একই পণ্যে ২ বছর, কেউ ১ বছর ওয়ারেন্টি দিতে পারবে না। সবাইকে একটি নিয়মে, একই সময়ের জন্য ওয়ারেন্টি দিতে হবে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই দুটি নিয়ম চালু হলে প্রযুক্তি পণ্যের বিক্রেতাদের তখন সার্ভিস দিয়ে টিকে থাকতে হবে। এতে করে ক্রেতারা সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন। এ প্রসঙ্গে বিসিএসের সভাপতি সুব্রত সরকার বলেন, বাজারে যে কোন প্রযুক্তি পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে অসম প্রতিযোগিতা চলে। দেখা যায়, একই ল্যাপটপ এক মার্কেট যে দামে বিক্রি হচ্ছে, অন্য মার্কেটে তার চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। কম দামে পণ্যটি পেতে ক্রেতাদের এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে ছুটতে হয়। আমরা এই দুর্ভোগ দূর করে ক্রেতাদের স্বস্তি দিতে চাই। বিসিএস সভাপতি জানান, চাইলেই আমদানিকারক বা পরিবেশকরা পণ্যের গায়ে ইচ্ছেমতো দাম লিখতে পারবেন না। যৌক্তিক দামটাই লিখতে হবে। বিসিএস-এর মনিটরিং টিম নিয়মিত তা পর্যবেক্ষণ করবে। আর কম্পিউটার ব্যবসায়ীদের পণ্যের দাম সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা থাকেই। বিসিএস সভাপতি বলেন, আমরা পণ্যের ওয়ারেন্টি নীতি তৈরি করেছি। সবাই যেন নিয়মটি ঠিকঠাক মেনে চলে সে ব্যাপারটিও দেখা হবে। তিনি জানান, ক্রেতাকে পণ্য ক্রয়ের সময় ওয়ারেন্টি কার্ড দেওয়া হলো বা অন্য কোনোভাবে দেওয়া হলো। পণ্যে কোনও সমস্যা হলে তা বিক্রেতার কাছে নিয়ে আসা হলে অনেক সময় নানা সমস্যার কথা বলে ক্রেতা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ক্রেতা প্রকান্তরে ভোগান্তিরই শিকার হন। ওয়ারেন্টি আবার একেক বিক্রেতা একই পণ্যে ভিন্ন ভিন্ন ধরন ও সময়ের জন্য দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘এটা যেন না হয় সেই বিষয়গুলোও আমরা দেখভালের উদ্যোগ নিয়েছি।’ বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া যেসব প্রযুক্তি পণ্যের সরাসরি কোনও সার্ভিস সেন্টার নেই। সংশ্লিষ্ট পণ্যের উৎপাদকদের এ দেশে সার্ভিস সেন্টার চালু করার জন্য বিসিএস উৎপাদকদের আহ্বান জানিয়েছে। উৎপাদকরা সরাসরি এ দেশে সার্ভিস সেন্টার চালু করলে ক্রেতারা দ্রুত সেবা পাবেন বলে মনে করে বিসিএস। কয়েকটি পণ্যের উৎপাদক এ বিষয়ে সাড়া দিয়েছে বলেও জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জানুয়ারি মাসে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বিসিএস কার্যালয়ে এ বিষয়ে একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে স্মার্ট টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলামকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি বলেছিলেন, ক্রেতাকে ওয়ারেন্টি দেওয়া প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ কাজে ক্রেতাকে খুশি রাখতে আমদানিকারক বা পরিবেশকদের অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়। নিজের প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করে কেউ ওয়ারেন্টি দেবে না। তাই নীতিমালা এমন হতে হবে যেন এর জন্য ব্যবসায়ীদের বেশি অর্থ ব্যয় না হয় আবার ক্রেতারাও খুশি থাকে।
×