ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জুলাইর প্রথম সপ্তাহেই যোগ হবে জাতীয় গ্রিডে

এলএনজি সরবরাহ শুরু হচ্ছে ৪ জুলাই ॥ পাইপলাইনের ত্রুটি সারিয়েছে এক্সিলারেট

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৩০ জুন ২০১৮

   এলএনজি সরবরাহ শুরু হচ্ছে ৪ জুলাই ॥  পাইপলাইনের ত্রুটি সারিয়েছে এক্সিলারেট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহের জন্য সাবসি পাইপ লাইনে (সাগরের তলদেশে নির্মিত পাইপ লাইন) ত্রুটি সারিয়েছে এক্সিলারেট এনার্জি। গত ২৫ জুন থেকে পাইপ লাইনটির পরীক্ষামূলক কমিশনিং করা হচ্ছে। জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিজিসিএল) সূত্র বলছে এখন পর্যন্ত এলএনজি সরবরাহের দিন ঠিক রাখা হয়েছে ৪ জুলাই। সব কিছু ঠিক থাকলে এলএনজি জুলাই এর প্রথম দিকেই জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। এর আগে তিন দফা এলএনজি সরবরাহের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তা ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি। গত ২৪ এপ্রিল এক্সিলারেট এনার্জির ভাসমান টার্মিনালটি কাতার থেকে এলএনজি নিয়ে বাংলাদেশে আসে। ১০ মে প্রথম দফায় এলএনজি সরবরাহের দিন ঠিক করা হয়। এরপর ২৫ অথবা ২৬ মে দ্বিতীয় দফায় আরও একবার এলএনজি সরবরাহের দিনক্ষণ ঠিক করা হলেও সরবরাহ শুরু করতে পারেনি এক্সিলারেট এনার্জি। এরপর জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ ৬ থেকে ১২ জুনের মধ্যে যে কোন একদিন এলএনজি সরবরাহের দিন নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কোন বারই এলএনজি সরবরাহের জন্য পাইপ লাইনের ত্রুটি সারাতে পারেনি এক্সিলারেট এনার্জি। আরপিজিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, সাগরে বসে থাকার জন্য এক্সিলারেটকে আমাদের কোন জরিমানা দিতে হবে না। তাদের নিজেরাই নির্মাণ এবং পরিচালনা করবে এই ভিত্তিতে কাজ দেয়া হয়েছে। ক্ষতি যা হওয়ার তা এক্সিলারেট এনার্জির হবে। সাগরে ভাসমান টার্মিনালের অবস্থান থেকে সাড়ে চার কিলোমিটারের সাবসি পাইপ লাইন দিয়ে এই গ্যাস জিটিসিএলের স্টেশনে আসবে। মূল সমস্যাটি এই সাড়ে চার কিলোমিটার পাইপ লাইনের মধ্যে ছিল। জানা যায়, সাড়ে চার কিলোমিটার পাইপ লাইনের মধ্যে দুটো ফ্রেঞ্জ (জোড়া) রয়েছে। পাইপ লাইনটিতে এক হাজার পিএসআই চাপে গ্যাস সরবরাহ করতে গেলে কোন সমস্যা হচ্ছিল না। কিন্তু যখনই দেড় হাজার পিএসআই চাপে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে তখনই একটি ফ্রেঞ্জ থেকে গ্যাস বাইরে বের হয়ে আসে। সাগরের তলদেশের ২০ মিটার মাটির নিচে দিয়ে পাইপ লাইনটি নির্মাণ করা হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় এক্সিলারেটের ডুবুরি দল ঠিকমতো কাজ করতে পারছিল না। তবে দেশে এলএনজির জাহাজ আসার ২ মাসের বেশি সময় ধরে এই ত্রুটি সারানোর কাজটি করে এক্সিলারেট। জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এখনও পর্যন্ত ৪ জুলাই এলএনজি সরবরাহের দিন ঠিক রাখা হয়েছে। গত ২৫ জুন থেকে পাইপ লাইনটি পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে আর কোন সমস্যা সৃষ্টি না হলে ৪ জুলাই থেকে এলএনজি সরবরাহ করা হবে। তিনি জানান, এবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। গত ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এলএনজি সরবরাহ উদ্বোধনের কথা ছিল। তিনি জানান, এলএনজি সরবরাহ শুরু হলে পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হতে পারে। মহেশখালীর জিটিসিএল স্টেশন থেকে ৯১ কিলোমিটার পাইপলাইন দিয়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় জাতীয় গ্যাস গ্রিডে যোগ হবে। টার্মিনালটি প্রতিদিন ৪৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। ১৫ বছর ধরে চুক্তির আওতায় রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ নেবে এক্সিলারেট এনার্জি। প্রতিদিন দুই হাজার ৭শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে পেট্রোবাংলা। কিন্তু চাহিদা এর চেয়ে অন্তত এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বেশি। দেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদা বৃদ্ধির বিপরীতে গ্যাসের সঙ্কট দূর করতে সরকার এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। প্রাথমিকভাবে কাতার ও ওমান থেকে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ৩২ কোম্পানির কাছ থেকে এলএনজি আমদানি করা হবে। এক্সিলারেট দেশে প্রথম এলএনজি টার্মিনাল এলেও আগামী বছরের শুরুর দিকে সামিট গ্রুপের এলএনজি টার্মিনাল আসবে। তখন দৈনিক এলএনজি সরবরাহ এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মোহাম্মদ আল মামুন জানান, জিটিসিএলের পাইপ লাইনে কোন সমস্যা নেই। জিটিসিএল পাইপ লাইনটি পরীক্ষা করে রেখেছে। এক্সিলারেট এনার্জির সরবরাহ শুরু করলে জিটিসিএল সঞ্চালন শুরু করতে পারবে।
×