ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না তা প্রমাণিত ॥ মওদুদ

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ৩০ জুন ২০১৮

   দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না তা প্রমাণিত ॥ মওদুদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না সেটা খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন (জিসাস) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মওদুদ বলেন, এখন আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া জেলে। অনেক চেষ্টা করা হচ্ছে যেন তার মুক্তি বিলম্বিত হয়। কিন্তু খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত করতে গিয়ে তারা নিজেদের মুখোশ উন্মোচন করেছে যে, তারা আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না। এটাই তাদের নীতি। কিন্তু এটুকু আমি বলতে পারি, বিলম্বিত হলেও খালেদা জিয়া আমাদের মাঝে খুব শীঘ্রই ফিরে আসবেন। তার মুক্তি হবে। তার মুক্তির পথ কেউ বন্ধ করতে পারবে না। আর জামিন তো মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নয়। জামিন হলো একটা মৌলিক অধিকার। যে কোন মানুষের জামিন পাওয়ার অধিকার আছে এবং আইনে সেটা দেয়া আছে। আশা করি খুব শিগগিরই তিনি আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। যেদিন তিনি ফিরে আসবেন সেদিন থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ধারা সূচিত হবে, গণতন্ত্রের নতুন জোয়ার তৈরি হবে। সেই জোয়ার বন্ধ করার ক্ষমতা এ সরকারের থাকবে না। মওদুদ বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আমাদের অনেক পুরনো সিদ্ধান্ত। এখন প্রশ্ন হলো, খুলনা ও গাজীপুরের পর আমরা কেন আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি? এর উত্তর একটাই, আমরা বারবার প্রমাণ করতে চাই দলীয় সরকারের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না এবং এটা হবে এই সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের জন্য শেষ পরীক্ষা । দলীয় সরকারের অধীনে যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় না সেটা আমরা জাতির কাছে বার বার প্রমাণ করব। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে মওদুদ বলেন, এই নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এটা একটা তল্পিবাহক, আজ্ঞাবাহক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানকে সংবিধানে যে অধিকার দেয়া হয়েছে, যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করার মতো শক্তি, ক্ষমতা বা সাহস এ নির্বাচন কমিশনের নেই। যার জন্য এ কমিশন রাখা না রাখা, থাকা না থাকা একই বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মওদুদ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ নির্বাচন কমিশন অবশ্যই পুনর্গঠন করতে হবে। কারণ, এ নির্বাচন কমিশন দিয়ে কোন স্বাধীন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। সেটা তারা প্রমাণ করে দিয়েছে খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে। আর মাত্র পাঁচ মাস আছে মাঝখানে। তাই বাংলাদেশ এখন অগ্নিপরীক্ষার মধ্যে আছে। ১৬ কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ নির্ভর করছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর। এর চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, স্বাধীনতার পর আমাদের জীবনে আসেনি। সেই চ্যালেঞ্জ হলো দেশের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার চ্যালেঞ্জ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ। কেননা আমরা সবই হারিয়েছি। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আবুল হাশেম রানার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা এ্যাডভোকেট দীপেন দেওয়ান, কণ্ঠশিল্পী মনির খান, সুলতানা রহমান, শামীমুর রহমান শামীম প্রমুখ। সরকার বিদায়ের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে-রিজভী ॥ সরকার বিদায়ের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। রিজভী বলেন, সরকার যত কূটকৌশলই অবলম্বন করুক না কেন খালেদা জিয়াকে মুক্তি এবং সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে এ সরকারকে বাধ্য করবে জনগণ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থতার কারণে কারা চিকিৎসকরা তাকে আদালতে হাজির না করার পরামর্শ দিয়েছেন। সেজন্য পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করেনি। যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কাজেই খালেদা জিয়া যে গুরুতর অসুস্থ, এটি সুস্পষ্ট। এরপরেও তাকে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সরকার। রিজভী বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটারদের ভোট দেয়ার স্বাধীনতা ছিল না। আওয়ামী লীগ সেখানে ৫ কৌশলে কাজ করেছে। এগুলো হলো- ম্যানিপুলেশন, আতঙ্ক সৃষ্টি করা, পুলিশের এসপির ভোট ডাকাতিতে সরাসরি অংশগ্রহণ, ভোটারদের মনে ভয় সৃষ্টিতে পোশাকধারী ও সাদা পোশাকধারীদের অংশগ্রহণ এবং ভয় দেখিয়ে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ। রিজভী অভিযোগ করেন বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের বাসভবনে হামলা চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাসার সব সিসি ক্যামেরা খুলে ফেলে তারা। ভাড়াটিয়াদের বাসা ছেড়ে দেয়ার হুমকিসহ বাসার লোকজনদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া প্রমুখ।
×