ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৩৩৫ দুর্ঘটনায় নিহত ৪০৫

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩০ জুন ২০১৮

 ঈদে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৩৩৫ দুর্ঘটনায় নিহত ৪০৫

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদ-উল-ফিতরে দেশের সড়ক মহাসড়কে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত ১ হাজার ২৬৫ জন আহত হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে সম্মিলিতভাবে ৩৩৫টি দুর্ঘটনায় ৪০৫ জন নিহত ও ১ হাজার ২৭৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। শুক্রবার সকালে নগরীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০১৮ তে এই তথ্য তুলে ধরেন। সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল এই প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবছর ঈদকেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদ যাত্রায় সড়ক, রেল ও নৌ পথে দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি গত চার বছর যাবত অত্যন্ত দক্ষতা ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করে আসছে। এবারের ঈদের আগে যাত্রাপথে সকল তদারকি সংস্থার সক্রিয় অবস্থানের কারণে ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হলেও ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার পথে তদারকি না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। গত ২৩ জুন দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় সারাদেশে ১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫২ জন নিহত ও ১৫০ জন আহতের খবর বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে প্রচার করা হলে তা পরদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এমন উদ্বেগজনক হারে প্রাণহানিতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক প্রধানমন্ত্রী সড়ক নিরাপত্তায় দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব নির্দেশনা আমলে নিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা গেলে সড়কে মৃত্যুর যে গণমিছিল চলছে তা থামানো সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি। ঈদ যাত্রা শুরুর দিন ১১ জুন থেকে ঈদ শেষে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরা ২৩ জুন পর্যন্ত বিগত ১৩ দিনে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত ১ হাজার ২৬৫ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে নৌপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত, ৫৫ জন নিখোঁজ ও ৯ জন আহত হয়েছেন। রেল পথে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩৫ জন, ট্রেনের ধাক্কায় ৪ জন ও ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ২ জনসহ মোট ৪১ জন নিহত হন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী এই সময়ে চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার মামলার প্রধান সাক্ষী সিএমপির ট্রাফিক ইন্সপেক্টর হেলাল উদ্দিন ভুঁইয়া, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ভারতীয় নাগরিক প্রকাশ মল্লিক, জামালপুরে ডিএমপির এএসআই হেলেনুর রহমান, শেরপুরে জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ, চট্টগ্রামের পটিয়ায় চকরিয়া সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবীণ শিক্ষক হৃদয় রঞ্জন দাস, পটুয়াখালীর বাউফলে লঞ্চ থেকে পড়ে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক মাসুম বিল্লাহ, নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁওয়ে সাংবাদিক রমজান ভুইয়া নিলয়, ফেনীর দাগনভুঞায় পল্লী চিকিৎসক ডাঃ মজিবুল হক, নেত্রকোনার মদনে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারেছুর রহমান, লক্ষ্মীগঞ্জে নেত্রকোনা হোমিও কলেজের অধ্যক্ষ এমএ কুদ্দুস, নাটোরের লালপুরে কদিমচিলান ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি সামসুল আরফিন শাহেদ, চট্টগ্রামে অভিনেত্রী তিথি বড়ুয়া, ময়মনসিংহের নান্দাইলে কিশোরগঞ্জ শহরের এসভি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আকলিমা আক্তার, কুড়িগ্রামের উলিপুরে বাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য জাহেদুল হক নিলু, কুমিল্লার দাউদকান্দিতে পৌরসভা ছাত্রদলের সহ-সম্পাদক জুয়েল মিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। নরসিংদীর বাদুয়ারচর রেলসেতুতে সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান পিতা ও দুই কন্যা। শরিয়তপুরের পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম স্পিডবোড দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। সংঘটিত দুর্ঘটনার যানবাহন পরিসংখ্যানে দেখা যায় ১৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ বাস, ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ১২ দশমিক ২২ শতাংশ নছিমন-করিমন, ১৩ দশমিক ০৬ শতাংশ ব্যাটারি রিক্সা ও ইজিবাইক, ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ অটোরিক্সা, ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ কার-মাইক্রো ও ১৫ দশমিক ২৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ অনান্য যানবাহন দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৪.০২ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩২.৭২ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা, ১৩.২৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা, ১.১০ শতাংশ চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে, ০.৭৩ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে ও ১৮.২০ শতাংশ অনান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ১। ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী বহন। ২। বিরতিহীন/বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো। ৩। অদক্ষ চালক ও হেলপার দ্বারা যানবাহন চালানো। ৪। মহাসড়কে অটোরিক্সা, ব্যাটারি চালিত রিক্সা, নসিমন-করিমন ও মোটরসাইকেল অবাধে চলাচল। ৫। মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা। ৬। বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো। ৭। সড়ক-মহাসড়কে ফুটপাথ না থাকা। ৮। সড়ক-মহাসড়কে বেহাল দশা এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। সুপারিশমালা : (১) জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা। (২) প্রশিক্ষিত চালক গড়ে তোলা জন্য জাতীয় পর্যায়ে সরকারীভাবে ‘চালক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ গড়ে তোলা। (৩) নিয়মিত রাস্তার রোড সেফটি অডিট করা। (৪) ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ করা। (৫) ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা। (৬) মহাসড়কে ধীরগতির যান ও দ্রুত গতির যানের জন্য আলাদা আলাদা লেনের ব্যবস্থা করা। (৭) মহাসড়কে নছিমন-করিমন, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, অটোরিক্সা বন্ধে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত শত ভাগ বাস্তবায়ন করা। (৮) ভাঙ্গাচোরা রাস্তাঘাট মেরামত করা। (৯) ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন চলাচল বন্ধে উদ্যোগ নেয়া। (১০) জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ফুটপাথ, আন্ডারপাস, ওভারপাস তৈরি করে পথচারীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা।
×