স্টাফ রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, আবারও গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তথাকথিত ঐক্যের নামে মুখ চেনা, বর্ণচোরা অশুভ শক্তি মাঠে নেমেছে। জনগণের ভোটে তাদের বিজয়ী হওয়ার যোগ্যতা নেই। নির্বাচনকে তারা ভয় পায়। এরা সবসময় ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে অসাংবিধানিক পথে ক্ষমতায় আসতে চায়। তবে এই অশুভ শক্তি ফের ঐক্যের নামে বিএনপি-জামায়াতকে সমর্থন দিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা মোকাবেলা করবে ১৪ দল।
শুক্রবার দুপুরে ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠক শেষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ১৪ দলের যে ঐক্য সেটা হলো মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পক্ষের ঐক্য। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট আন্দোলনের নামে ষড়যন্ত্র করে অন্য কোন শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে চায়। ১৪ দল এটা কখনও হতে দেবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের শক্তভাবে প্রতিহত করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের শক্তি হলো জনগণ, কোন মুখচেনা ব্যক্তি নয়। জনগণের শক্তির প্রতীক হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রয়োজনে আমরা আরও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে এখানে সমবেত করব এবং এসব অশুভ শক্তিকে মোকাবেলা করব। আগামী নির্বাচনগুলোতেও ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থেকে সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে ১৪ দল। তিনি বলেন, আন্দোলন ও নির্বাচনে পরাজিত হয়- এই ধরনের কিছু অশুভ শক্তি আছে। তারা সব সময় মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে ভয় পায়। ১৪ দলের ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে ভয় পায়। এদের পেছনে কারা আছে আমরা সবাই জানি।
আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা পেনাল্টি মিস করবেন না ॥ মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘বিশ্বকাপ ফুটবলে মেসি পেনাল্টি মিস করতে পারেন। কিন্তু আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা পেনাল্টি মিস করবেন না। আগামী নির্বাচনেও আমরা বিজয়ী হব। আর অতীতের মতো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।’ তিনি বলেন, নির্বাচন হচ্ছে জনগণের রায় দেয়ার একমাত্র উপায়। শেখ হাসিনা গত প্রায় ১০ বছরে কোন নির্বাচন বিলম্বিত হতে দেননি। এটা সংবিধান ও গণতন্ত্রের প্রতি শেখ হাসিনার আনুগত্যের প্রমাণ। আগামী জাতীয় নির্বাচনও আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে করবে- প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণাকে অবিস্মরণীয় হিসেবে আখ্যায়িত করে ১৪ দলের বৈঠকে তাকে স্বাগত জানানো হয়।
তিন সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নামবে ১৪ দল ॥ এছাড়া আসন্ন রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে ১৪ দল। এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, অতীতের মতোই ১৪ দল তিন সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামবে।
নির্বাচন হলো যুদ্ধের মতো ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট ও বিভিন্ন সংগঠনের দেয়া পর্যবেক্ষণকে একান্তই তাদের ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে আখ্যায়িত করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে যদি সত্যিই কোন অনিয়ম হয়ে থাকে সেটা নির্বাচন কমিশন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। গাজীপুর ও খুলনার জনগণ জানে ভোট কীভাবে হয়েছে। তারা সচেতনভাবে ভোট দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে যেকোন ব্যক্তি বা সংগঠন পর্যবেক্ষণ দিতেই পারে। পর্যবেক্ষক মহলের পর্যবেক্ষণ তাদের ব্যক্তিগত। কোনটা সঠিক, কোনটা সঠিক নয় তা নির্ধারণ করবে জনগণ।’ তিনি বলেন, পৃথিবীতে কোন নির্বাচনই কারও কাছে শতভাগ সন্তুষ্ট অর্জন করতে পারে বলে আমি মনে করি না। জয়-পরাজয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হবেই। নির্বাচন হলো যুদ্ধের মতো। মাঠে যে থাকবে তারাই মানুষের মন জয় করতে পারে। মাঠে অনুপস্থিত থেকে নির্বাচন নিয়ে কোন কথা বললে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।’
গাজীপুরবাসীকে ১৪ দলের অভিনন্দন ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র হিসেবে নৌকা প্রার্থীকে নির্বাচিত করায় গাজীপুরবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছে ১৪ দল। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘গাজীপুরবাসী উন্নয়ন, শান্তি, মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের পক্ষে যে গণরায় দিয়েছে, সেজন্য তাদের অভিনন্দন। আমার বিশ্বাস গাজীপুরবাসীর উন্নয়নের আকাক্সক্ষা পূরণ করবেন নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলররা।’ পরাজিত প্রার্থীদেরও গাজীপুরের উন্নয়নে নবনির্বাচিত মেয়রকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান মোহাম্মদ নাসিম। এদিকে বিএনপি সব নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিতে চাওয়ায় তাদের অভিনন্দন জানিয়েছে ১৪ দল।
মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে বৈঠকে মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাসদের একাংশের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া, তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ শহীদুল্লাহ সিকদার, জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম সালাহউদ্দিন আহমেদ, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাৎ হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ওয়াজেদুল ইসলাম খান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দফতর সম্পাদক আব্দুস সোবাহান গোলাপ ও উপ দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।