ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে পত্রিকা অফিসে গুলিতে সাংবাদিকসহ নিহত ৫

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩০ জুন ২০১৮

 যুক্তরাষ্ট্রে পত্রিকা অফিসে  গুলিতে সাংবাদিকসহ নিহত ৫

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের রাজধানী এ্যানাপোলিসে ‘ক্যাপিটাল গেজেট’ পত্রিকা অফিসের বার্তা কক্ষে ঢুকে গুলি চালিয়েছে এক বন্দুকধারী। এতে ওই পত্রিকার চার সাংবাদিকসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর এ্যানি আরলেন্ড এলাকার ওই পত্রিকা অফিসে এই হামলায় আহত হয়েছে আরও কয়েকজন। এ্যানি আরলেন্ড পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ও এটিএফও এ হামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। -খবর বিবিসি, সিএনএন ও গার্ডিয়ানের। পুলিশের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, এ্যানাপোলিসের ৮৮৮ বেস্টগেট রোডে পত্রিকাটির কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কার্যালয়ের ভবনটি ঘেরাও করে। কর্মকর্তারা বলছেন, ভবনটির ভেতরে তল্লাশি চালানো হয়েছে। জড়িত সন্দেহে একজনকে আটকও করা হয়েছে। নিহত সাংবাদিকরা হচ্ছেন, প্রতিবেদক ওয়েন্ডি উইন্টার (৬৫), বিক্রয় সহকারী রেবেকা স্মিথ (৩৪), সম্পাদক রবার্ট হাইয়াসেন (৫৯), এডিটরিয়াল রাইটার জেরাল্ড ফিস্কম্যান (৬১) ও সম্পাদক জন ম্যাকনামারা (৫৬)। ক্যাপিটাল গেজেটের কর্মীরা জানিয়েছেন, হামলাকারী শর্টগান আর স্মোক গ্রেনেড নিয়ে তাদের অফিসে ঢোকে। কাচের দরজার ভেতর দিয়ে সে বার্তা কক্ষের ভেতরে নির্বিচারে গুলি চালায়। আর পুলিশ বলছে, পত্রিকা অফিসকে লক্ষ্য করেই এ হামলা চালানো হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে এ ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে মনে করছেন না তারা। ঘটনাস্থল থেকে জ্যারড রামোস নামের এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে, যিনি ২০১২ সালে ক্যাপিটাল গেজেটের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে ব্যর্থ হন। তদন্তকারীরা বলেছেন, ৪০ এর কাছাকাছি বয়সী ওই ব্যক্তিকে তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাপিটাল গেজেটের বিরুদ্ধে তিনি বিভিন্ন সময়ে যেসব হুমকি দিয়েছিলেন, সে সবও তারা খতিয়ে দেখছেন। কাউন্টি পুলিশের কর্মকর্তা স্টিভ শুহ বলেছেন, গুলির ঘটনার এক মিনিটের মধ্যে পুলিশ ওই ভবনে প্রবেশ করে। হামলাকারী তখন একটি ডেস্কের নিচে লুকিয়ে ছিল। পুলিশকে কোন গুলি ছুড়তে হয়নি। ওই ভবনে কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেরও অফিস রয়েছে। হামলার পর অন্তত ১৭০ জনকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয় পুলিশ। পরে পুলিশের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ভবনের ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে একটি স্মোক বম পাওয়ার পর সেটি ধ্বংস করেছে তারা। বাল্টিমোর সান মিডিয়া গ্রুপের মালিকানাধীন ক্যাপিটাল গেজেটের বেশ কয়েকটি স্থানীয় পত্রিকা রয়েছে। এর মধ্যে দ্য ক্যাপিটাল নামে একটি দৈনিক পত্রিকা আছে, যার সূচনা হয়েছিল ১৮৮৪ সালে। বাল্টিমোর সানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার ঘটনার পর আটক রামোসের বাড়ির পাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ দেখা যায়। হয়রানির অভিযোগে এক মামলা নিয়ে ২০১১ সাল থেকে ক্যাপিটাল গেজেটের সঙ্গে তার মামলা চলছিল। হামলার ঘটনার পর ক্যাপিটাল গেজেটের আতঙ্কিত কর্মীরা অফিস ছেড়ে বেরিয়ে গেলেও শুক্রবারের পত্রিকা তারা ঠিকই বের করবেন বলে জানিয়েছেন। এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম কার্যালয়ের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিউইয়র্কে বিভিন্ন পত্রিকা অফিসের সামনে অস্ত্রধারী পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পত্রিকাটির প্রতিবেদক ফিল ডেভিস এক টুইটে লিখেছেন, ডেস্কের নিচে লুকিয়ে যখন শুনতে পাবেন যে, আশপাশের মানুষের গায়ে গুলি লাগছে আর হামলাকারী তার অস্ত্র রিলোড করছে, এর চেয়ে আতঙ্কের আর কিছু হতে পারে না। তার ভাষায়, বার্তাকক্ষের পরিস্থিতি তখন ছিল যুদ্ধক্ষেত্রের মতো। এক পর্যায়ে হামলাকারী গুলি থামালেও ডেস্কের নিচে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচানো মানুষগুলো কেউ মাথা তোলার সাহস পাচ্ছিল না। চেজ কুক নামের আরেক প্রতিবেদক টুইট করেছেন, আমি এটা বলতে পারি, কালও আমাদের পত্রিকা ছাপা হবে। হামলার ঘটনা সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জানানো হলে এক টুইটে তিনি এই হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা জানান এবং হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারা স্যান্ডার্সও ‘নিজেদের কাজের মধ্যে থাকা নিরপরাধ সাংবাদিকদের’ ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি এই হামলাকে প্রতিটি মার্কিন নাগরিকের ওপর হামলা বলে বর্ণনা করেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ক্যাপিটাল গেজেট পত্রিকা অফিসে হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ধরনের ঘটনা প্রায় প্রতি সপ্তাহে, প্রতি মাসেই ঘটছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো টুইটারে যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা অফিসে ঢুকে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাকে ধ্বংসাত্মক বলে বর্ণনা করেছেন।
×