ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা রাত আটটায়, বারোটায় উরুগুয়ে-পর্তুগাল মহারণ টানটান উত্তেজনার নকআউট পর্ব শুরু

হারলেই বিদায় ॥ আজ মাঠে মেসি রোনাল্ডো

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩০ জুন ২০১৮

হারলেই বিদায় ॥ আজ মাঠে মেসি রোনাল্ডো

জাহিদুল আলম জয় ॥ শেষ হয়েছে গ্রুপপর্বের ডামাডোল। আজ থেকে শুরু হচ্ছে রাশিয়া বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের লড়াই। এখন হারলে আর টিকে থাকার সুযোগ নেই। সোনার ট্রফির স্বপ্ন জিইয়ে রাখতে জয়ের বিকল্প নেই। এ লক্ষ্য নিয়ে প্রিকোয়ার্টার (শেষ ষোলো) ফাইনালে উঠে আসা দলগুলো মিশন শুরু করছে। আর প্রথমদিনেই মাঠে গড়াচ্ছে দু’টি হাইভোল্টেজ ম্যাচ। কাজানে বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় হবে ফ্রান্স-আর্জেন্টিনা মহারণ। এরপর সোচিতে রাত বারোটায় মাঠে গড়াবে উরুগয়ে-পর্তুগাল দ্বৈরথ। দু’টি ম্যাচ নিয়েই ফুটবলবিশ্বে উত্তাপ, উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশেষ করে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার ম্যাচের দিকে তাকিয়ে গোটা দুনিয়া। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনমতে গ্রুপপর্ব উতরালেও এখন আর্জেন্টিনাকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন দলটির ভক্ত-সমর্থকরা। লিওনেল মেসি নামের জাদুকর থাকার কারণেই স্বপ্নচারী তারা। এ জন্য যে ফরাসীদের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই অপেক্ষা করছে সেটা বলাইবাহুল্য। কেননা এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা ফেবারিট দলটি নিজেদের গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেটার যথার্থতা প্রমাণ করেছে। ১৯৯৮ সালের পর এবার দ্বিতীয়বার বিশ্বসেরা হতে মুখিয়ে আছে দিদিয়ের দেশমের দল। আরেক ম্যাচের উত্তাপও কম নয়। কেননা সময়ের অন্যতম সেরা তারকা মেসির মতো মাঠে নামছেন সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোও। কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করার মিশনে পর্তুগীজদের প্রধান ভরসা তিনিই। মূলত সি আর সেভেনকে কেন্দ্র করেই স্বপ্ন বুনছে ইউরোর বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ষোলোর প্রতিটির ম্যাচেই উত্তেজনা ছড়ানোর কথা। তবে প্রথমদিনই মেসি-রোনাল্ডো মাঠে নামায় উত্তাপ বহুগুণে বেড়ে গেছে। বিশ্বকাপের আকর্ষণের কথা ভাবলে আর্জেন্টিনা ও পর্তুগালের জয় প্রয়োজন। এই দেশ দু’টি হেরে গেলে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়বেন রোনাল্ডো ও মেসিও। বাদ পড়ার শঙ্কা মাথায় রেখেই ময়দানী যুদ্ধে মাঠে নামার অপেক্ষায় গত দশ বছর ফিফা সেরা এ্যাওয়ার্ড ভাগাভাগি করে নেয়া মেসি ও রোনাল্ডো। ফ্রান্স কাগজে কলমে এগিয়ে। কিন্তু পরিসংখ্যানে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। তাছাড়া জর্জ সাম্পাওলির একজন মেসি থাকায় ম্যারাডোনার দেশকে কেউ হাল্কভাবে নিচ্ছে না। স্বয়ং ফরাসীরাই আর্জেন্টিনাকে সমীহ করছে। ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশমও এমনটা বলেছেন। তিনি বলেন, আমরা জয় ছাড়া কিছুই ভাবছি না। তাই বলে প্রতিপক্ষকে হাল্কাভাবে নিচ্ছি না। ওদের মেসি আছে। সে একাই ম্যাচের মোড় পাল্টে দিতে পারে। আমাদের ওকে থামাতে হবে। বর্তমান ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়েও এগিয়ে আর্জেন্টিনা। তাদের অবস্থান পাঁচ, আর ফ্রান্সের সাত। এ পর্যন্ত দল দুটি মুখোমুখি হয়েছে ১১ আন্তর্জাতিক ম্যাচে। এর ৬টিতেই জিতেছে রূপালী পর্বতমালার দেশ আর্জেন্টিনা। অন্যদিকে দু’টিতে জিতেছে প্রেম ও শিল্পের দেশ ফ্রান্স। বাকি ৩টি ম্যাচ ড্র হয়। আর বিশ্বকাপে মুখোমুখি দুইবার। এতে আর্জেন্টিনার জয় শতভাগ। প্রথম জয় ১৯৩০ সালে, গ্রুপপর্বে ১-০ গোলে। দ্বিতীয় জয় ১৯৭৮ সালে ২-১ গোলে। সেবারও গ্রুপপর্বে। তার মানে দীর্ঘ ৪০ বছর পর বিশ্বকাপে তৃতীয়বারের মতো মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দু’দেশ। অবশ্য এই প্রথমবার নকআউট স্টেজে। ফরাসীদের সামনে তাই প্রতিশোধ নেয়ার মোক্ষম সুযোগ। আর আর্জেন্টিনার লক্ষ্য সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। বিশ্বকাপে এই প্রথম মুখোমুখি হতে যাচ্ছে উরুগুয়ে ও পর্তুগাল। আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে অবশ্য দুইবার মুখোমুখি হয়েছে তারা। সেটাও সেই ১৯৭২ সালে। আর তাই ৪৬ বছর পর ফের মুখোমুখি হচ্ছে তারা। ১৯৭২ সালের জুলাইয়ে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর মারকানা স্টেডিয়ামে দু’দলের লড়াইটি ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল। ৪৬ বছর পর আবার সাক্ষাত হচ্ছে তাদের। সেটিও আবার ডু অর ডাই ম্যাচ। মেজর কোন আসরে গত ১৭ ম্যাচ (টাইব্রেকারে নিষ্পত্তি হওয়া ম্যাচ ব্যতীত) খেলে মাত্র একটিতে হেরেছে পর্তুগাল, সেটি গত বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ৪-০ গোলে। আর ১৯৩০ ও ১৯৫০ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে ২০১০ সালে পারলেও ১৯৭৪ থেকে শুরু করে বাকি বিশ্বকাপের কোনটিতেই দ্বিতীয় রাউন্ডের গ-ি পেরোতে পারেনি। আর ১৯৩০ সালের পর আর কখনই বিশ্বকাপের শুরুতে টানা চার ম্যাচ জেতেনি। পর্তুগালের ভরসা রোনাল্ডো প্রথম ম্যাচে হ্যাটট্রিক করার পর দ্বিতীয় ম্যাচে এক গোল করেন। কিন্তু গ্রুপের শেষ ম্যাচে গোল পাননি, মিস করেন পেনাল্টি। সি আর সেভেনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ নকআউট পর্বে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ৪২৪ মিনিট খেলে কোন গোলের দেখা পাননি। সেই গোলখরা কাটিয়ে ওঠাটা খুব জরুরী পর্তুগালের জন্যই। কারণ গত বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল ২০১০ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ড ও ২০০৬ বিশ্বকাপে চতুর্থ স্থান দখল করা পর্তুগাল। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়া তাদের সেরা সাফল্য। এছাড়া আহামরি কোন সাফল্য নেই তাদের। অন্যদিকে উরুগুয়েও কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে মরিয়া। এ লক্ষ্যে তারা প্রতিপক্ষের সেরা তারকা রোনাল্ডোকে নিয়েই শুধু ভাবছে না। বিশ্বকাপের ইতিহাসের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়নরা ভাল খেলেই জিততে চায়। শুধু রোনাল্ডোকে নিয়ে ভাবছেন না জানিয়ে উরুগুয়ের ডিফেন্ডার সেবাস্তিয়ান কোয়াটস বলেন, রোনাল্ডো সারাবিশ্বের অন্যতম সেরা তারকা। তার বিপক্ষে খেলাটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে আমরা অবশ্যই কেবল তাকে আটকাতেই মাঠে নামব না। পর্তুগালে আরও অনেক খেলোয়াড় আছে যারা আমাদের ক্ষতি করতে পারে। পুরো দল নিয়েই ভাবতে হবে আমাদের। এই ম্যাচে উরুগুয়ের নায়ক হতে পারেন লুইস সুয়ারেজ। মেসি-রোনাল্ডোর মতো না হলেও তারও একাই ম্যাচে গতিপ্রকৃতি পাল্টে দেয়ার ক্ষমতা আছে।
×