ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাপানের হাতে এশিয়ার ঝান্ডা

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৩০ জুন ২০১৮

জাপানের হাতে এশিয়ার ঝান্ডা

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ শুরুতেই দুই ফেবারিট ব্রাজিল আর্জেন্টিনার ধাক্কা খাওয়া, আয়োজক রাশিয়ার পাশাপাশি মেক্সিকো-বেলজিয়ামের চোখ ধাঁধানো পারফর্মেন্স, প্রথমপর্ব থেকেই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানির বাদ পড়া, এ সবই ছিল আলোচনায়। যেখানে বাড়তি মাত্রা যোগ করে সেনেগালের সমান পয়েন্ট আর গোল ব্যবধান সত্ত্বেও ‘ফেয়ার প্লে’র কল্যাণে জাপানের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে আসা। এইচ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের কাছে ১-০ ব্যবধানে হারে সামুরাইরা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যৌথভাবে জাপান ও সেনেগালের পয়েন্ট দাঁড়ায় সমান ৪। গেল ব্যবধানও সমান ০। ফলে এবারই প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত ‘ফেয়ার প্লে’, অর্থাৎ পরিচ্ছন্ন খেলা উপহার দেয়ার বিচারে ভাগ্যের সিকে ছেড়ে জাপানের। তিন ম্যাচে দলটি যেখানে ৪টি হলুদ কার্ড পেয়েছে, সেখানে বরাবর পেশিশক্তিনির্ভর সেনেগালের হলুদ কার্ড ৬টি। ফলে রাশিয়া বিশ্বকাপে যেমন আফ্রিকান প্রতিনিধিত্বশূন্য হয়ে পড়ল, তেমনি এশিয়ার একমাত্র দল হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডে সুর্যোদ্বয়ের দেশ জাপান। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল জাপান। এবার ‘ফেয়ার প্লে’র ওপর নির্ভর করে আট বছর পর দ্বিতীয় রাউন্ডের টিকেট পেয়ে যায় জাপান। এশিয়া থেকে অংশ নেয়া দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র জাপানই গ্রুপপর্বের বৈতরণী পার হতে পারল। অন্যদিকে সেনেগালকে ১-০ গোলে হারিয়ে ৩ ম্যাচ থেকে ৬ পয়েন্ট নিয়ে এইচ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোতে স্থান করে নেয় কলম্বিয়া। নকআউট পর্বে কলম্বিয়া ও জাপান প্রতিপক্ষ হিসেবে ইংল্যান্ড কিংবা বেলজিয়ামকে পেতে যাচ্ছে। জাপানকে বলা হয় ‘এশিয়ার ব্রাজিল’। ছোট পাসে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়ে ইতোমধ্যে এই অঞ্চলে ফুটবলের পাওয়ার হাউসের খ্যাতি পেয়েছে সময়ের অন্যতম সেরা অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশটি। এইচ গ্রুপে জাপান শুরু করেছিল হট ফেবারিট কলম্বিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে। আর সেনেগালের সঙ্গে ড্র করেছিল ২-২ গোলে। ‘ফেয়ার প্লে’র সৌজন্যে এশিয়ান প্রতিনিধিরা কার্যত গোটা আফ্রিকান অঞ্জলকেই রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দিল। রবিবার রোস্টভ অন-ডনে দ্বিতীয় রাউন্ডে সামুরাইদের প্রতিপক্ষ ইউরোপের ডার্ক হর্স বেলিজিয়াম। সর্বশেষ ১৯৮২ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব পেরোতে পারেনি আফ্রিকার কোন দেশ। এরপর গত ৩৬ বছরে মরক্কো, ক্যামেরুন, নাইজিরিয়া, সেনেগাল আর ঘানার চমক দেখেছে বিশ্ব। সে অর্থে এবারের বিশ্বকাপে আফ্রিকান দেশগুলো পুরোপুরি ব্যর্থ। বিশ্বকাপে আফ্রিকান দেশগুলোর প্রতিনিধিত্ব বোধ হয় এতটা আলোহীন আর কখনই ছিল না। ২০০২ সালে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিল সেনেগাল, ২০১০ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়েছিল ঘানা। কিন্তু এবার? সেনেগাল, মিসর, নাইজিরিয়া, তিউনিসিয়া, মরক্কোÑ এই পাঁচ প্রতিনিধির সবাই বিদায় নিল প্রথম রাউন্ড থেকেই। ১৯৮২ সালের পর এবারই বিশ্বকাপটা এত বাজে কাটল আফ্রিকানদের। শেষ ভরসা হিসেবে টিকে ছিল সেনেগাল। কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি ড্র করলেই দ্বিতীয় রাউন্ডে চলে যেত সেনেগালিজরা। কিন্তু তারা হেরে গেল ১-০ গোলে। বিদায়টাও হলো ফিফার নতুন চালু করা ‘ফেয়ার প্লে’ আইনের মারপ্যাঁচে! মোহাম্মদ সালাহর কারণে আলোচিত মিসর তো প্রথম দুই ম্যাচ হেরেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয়। মরক্কো ও তিউনিসিয়াও তাই। আশাটা টিকিয়ে রেখেছিল ওবি মিকেলের নাইজিরিয়া ও সাদিও মানের সেনেগাল। কিন্তু আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হেরে কপাল পুড়েছে সুপার ইগলদের। আর শেষ মুহূর্তে হলুদ কার্ডের খড়গে পুড়ল সেনেগাল। মোট ১৫টি ম্যাচের মধ্যে আফ্রিকান দলগুলোর জয় তিনটিতে। বাকি ১২টিতেই হেরেছে তারা। সেনেগাল-ঘানার আগে ১৯৯০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিল রজার মিলার ‘অদম্য সিংহ’ ক্যামেরুন। ‘আফ্রিকা একদিন সফল হবেই। কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে খেলতে আসার আগে কিভাবে আসা উচিত।’ বলছেন সাবেক আইভরি কোস্ট ও চেলসি তারকা দিদিয়ের দ্রগবা।
×