ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

গরমে শান্তির পরশ ঘোল আর মাঠা

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ৩০ জুন ২০১৮

গরমে শান্তির পরশ ঘোল আর মাঠা

ঘোল-এই শব্দ শুনলে দুই ধরনের অনুভূতি হয়। ১. প্রচন্ড গরমে প্রাণ শীতল করা দুধে তৈরি তরল খাদ্য। ২. কাউকে বোকা বানিয়ে স্বার্থ সিদ্ধি করলে রূপক অর্থে বলা হয় ঘোল খেয়েছে। যে ভাবেই ঘোল খাওয়া হোক গ্রীষ্মের দাবদাহে এই ঘোলের জুড়ি নেই। হালে এই ঘোলের উণ্ণত সংস্করণ হয়েছে ‘মাঠা’। এটাও এক ধরনের ঘোল, তবে স্বাদে তারতম্য। নিকট অতীতে গ্রামের ঘোষ সম্প্রদায় দইয়ের পাশাপাশি দুধ দিয়ে ঘোল বানিয়ে গৃহস্থ ও কৃষকের আঙিনায় গিয়ে বিক্রি করত। সেই ঘোলের স্বাদই ছিল অন্যরকম। ঘোল গলাধঃকরণের পর দাবদাহে প্রাণ জুড়িয়ে উচ্চারিত হয় ‘আ...হ’ কি শান্তি। এমনই শান্তির পরশ পাওয়া এই ঘোল বর্তমানে হাঁড়ির বদলে প্লাস্টিকের বোতল ঢুকে পড়েছে। তারপরও কারিগররা ঘোল বানিয়ে মাটির অথবা সিলভারের পাতিলে ভরে গ্রামের হাটবাজারে বিক্রি করে। কখনও তারা জেলা ও উপজেলা সদরে আসে বিক্রি করতে। হালে ঘোলের উন্নত সংস্করণ হয়ে ‘মাঠা ঘোল’ নামের সুস্বাদের এক তরল খাদ্য উদ্ভাবিত হয়েছে। মাঠা নামেই পরিচিতি বেশি। ঘোল বানাতে যে দুধের প্রয়োজন সেই দুধকেই অধিক সময় জ¦াল দিয়ে বেশি ঘন করার পর এক ধরনের ননী জমে। সেই ননী দিয়ে আলাদাভাবে বানানো হয় মাঠা। ঘোল ও মাঠার মধ্যে সামান্য স্যাকারিন ও নুন মিশিয়ে স্বাদ বাড়ানো হয়। খোঁজখবর করে জানা যায়, দেশে ঘোলের আদি উৎপত্তিস্থল সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার সলপ গ্রামে। এই গ্রামের কারিগররা ব্রিটিশ শাসনামলে ঘোল বানিয়ে উল্লাপাড়া রেলস্টেশনে বিক্রি করতেন। মহাকালের পথ ধরে এই ঘোলের খ্যাতি ও ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। দেশের প্রতিটি এলাকায় ঘোল তৈরি হতে থাকে। ওই সময়ে প্রায় প্রতিটি রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের সময়ে ঘোল বিক্রি হতো। বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার হরিখালি গ্রামের ঘোষ পরিবারের সদস্য রঞ্জিত বললেন বংশ পরম্পরায় তারা ঘোল ও দই বানাচ্ছেন। একটা সময় সাদা টক দইয়ের কদর ছিল বেশি। এখন গ্রীষ্মের মৌসুমে ঘোল বিক্রি হয় বেশি। রঞ্জিত বললেন, ৫০ লিটার দুধে ৩৮ থেকে ৪০ লিটার ঘোল বানানো যায়। দীর্ঘ সময় ধরে তাপ দেয়ার পর ঘন করে পাতিলে তোলা হয়। তারপর ঠা-া করার পর দড়িতে ঘুলট (বাঁশে তৈরি এক ধরনের ঘূর্ণি) বেঁধে দুই দিক থেকে টেনে ঘেটে সামান্য মিষ্টি ও লবণ মিশিয়ে ঘোল বানানো হয়। এই ঘুলট টানার সময় পাত্রের ওপরে এক ধরনের ননী জমে। এই ননী না তুলে তা গুলিয়ে বানানো হয় মাঠা। ঘোল বিক্রি হয় ৪৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে। মাঠা বিক্রি হয় ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। ঘোল বানানোর প্রবীণ কারিগর আব্দুল আউয়াল বললেন, দুধের ননী দিয়ে ঘি তৈরি করা হয়। এই ননী আলাদা করে রাখার পর পরবর্তী পর্যায়ের ননী দিয়ে মাঠা বানানো হয়। বর্তমানে অনেক ব্যবসায়ী ঘোল ও মাঠা তৈরির যন্ত্র কিনে প্লাস্টিকের বোতলে ভরে বিক্রি করছে। এভাবে ঘোল ও মাঠা তৈরির ফ্যাক্টরি চালু হয়েছে। বগুড়ার চিনিপাতা দইয়ের স্বত্বাধিকারী মুক্তার আলম বললেন, ঘোল ও মাঠা বোতলজাত হওয়ার পর বিক্রি বেড়েছে। প্রতিটি আড়াইশ’ মিলিলিটারের বোতলের ঘোল বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা দরে। এই পরিমাণ মাঠা বিক্রি হয় ২৫ টাকা দরে। তবে পথের ধারে হাঁড়ি পাতিলে যারা ঘোল বিক্রি করে তার দাম প্রতি গ্লাস ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা। এই ঘোল পাতলা। এই ঘোল পান করছে সাধারণ মানুষ। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×