ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবৃদ্ধি ৭.৭০ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৪:২০, ৩০ জুন ২০১৮

প্রবৃদ্ধি ৭.৭০ শতাংশ

পরিকল্পনামন্ত্রীর মতে, চলতি অর্থবছরের ক্ষেত্রে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭ দশমিক ৭০ থেকে ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ অর্জিত হতে পারে। অর্থবছরের প্রথম নয় মাসের প্রাক্কলিত হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর পাশাপাশি বেড়েছে সর্বস্তরের মানুষের গড় আয়ু। দেশের নারী-পুরুষ এখন গড়ে বাঁচেন ৭২ বছর। এক বছর আগে গড় আয়ু ছিল ৭১ দশমিক ৬ বছর। এক বছরের ব্যবধানে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে ৪ মাস ২৪ দিন। এর অর্থ দাঁড়ায়, সার্বিকভাবে বেড়েছে মানুষের জীবনমান। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতিতে প্রতিফলন ঘটে থাকে জাতীয় উচ্চ প্রবৃদ্ধির। এতদিন বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধি আটকে ছিল ৬ শতাংশের কম-বেশি বৃত্তে। সে অবস্থায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো জাতীয় প্রবৃদ্ধি অতিক্রম করে সাতের ঘর। অবশ্য এর কারণও ছিল বৈকি। এর মধ্যে বেড়েছে রফতানি আয় ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের অর্থ প্রেরণের পরিমাণ। কৃষি খাত তো বরাবরই সাবলীল ও ফলপ্রসূ ভূমিকা রেখেছে। সর্বোপরি বেড়েছে বিনিয়োগ। জাতীয় আয়ের হিসাবে বিনিয়োগের পরিমাণ ২৮ দশমিক ৮৯ থেকে উন্নীত হয়েছে ৩০ দশমিক ৬৬ ভাগে। বর্তমান সরকারের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। অথচ কাজটি মোটেও সহজসাধ্য ছিল না। কুসুমাস্তীর্ণ তো নয়ই। ২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট যখন ক্ষমতায় আসে, তখন দেশের অর্থনীতি ছিল প্রায় ভগ্নদশাপ্রাপ্ত। মানুষের আয় ছিল সীমিত অথচ দ্রব্যমূল্য ছিল আকাশচুম্বী। সেই অবস্থা থেকে জাতীয় অর্থনীতি ও সমৃদ্ধিকে টেনে তোলা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জন্য ছিল রীতিমতো একটি চ্যালেঞ্জ। আজ ২০১৮ সালে এসে অকুণ্ঠচিত্তে বলতেই হয়, বর্তমান সরকার অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গেই সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সমর্থ হয়েছে। অথচ এ সময় প্রায় বিশ্ব দু-দুটো মন্দাবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। এর ফলে বিশ্বের অনেক দেশেই জাতীয় প্রবৃদ্ধি গেছে কমে। এমনকি অনেক দেশে লক্ষ্য করা গেছে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। এ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মন্দাবস্থার উত্তাপ লাগেনি বললেই চলে। বরং শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এগিয়ে চলেছে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি। এর পাশাপাশি এও বলতেই হয়, একাত্তরের ঘৃণিত যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামীর লেজুরবৃত্তি করা দল বিএনপি ও অপরাজনীতির নামে ক্রমাগত হরতাল-বোমাবাজি-অবরোধ-পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা ইত্যাদির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতির চাকাকে থামিয়ে দিতে কম চেষ্টা করেনি। সরকার জনগণের সহায়তায় কঠোর হাতে সে সব দমন করে সচল রেখেছে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির গতি। ফলে গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুত উৎপাদনও বেড়েছে আশাব্যঞ্জক হারে। কুইক বা রেন্টাল পাওয়ার স্টেশন নিয়ে যত বিতর্কই থাকুক না কেন, জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তা অবদান রেখেছে। বর্তমানে সরকার একাধিক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনসহ দেশের অভ্যন্তরে বহুমুখী পণ্য উৎপাদনে আগামীতে আর সমস্যা হবে না। বর্তমানে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কম। মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং শিল্পোৎপাদনের জন্য অপরিহার্য কাঁচামালের দামও কম। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার এখনই প্রকৃষ্ট সময়। দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে প্রচুর অলস অর্থ পড়ে আছে। ঋণের সুদহার কিছু কমিয়ে এবং জমিসহ শিল্প-কারখানা স্থাপনের অবকাঠামো গড়ে তুলে সরকার সুগম করে দিতে পারে বিনিয়োগ পথ। সেক্ষেত্রে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া আদৌ কষ্টসাধ্য হবে না।
×