ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শাহাব উদ্দিন মাহমুদ

পৃথিবীর স্বপ্নপুরী

প্রকাশিত: ০৭:১০, ২৯ জুন ২০১৮

পৃথিবীর স্বপ্নপুরী

পূর্ব প্রকাশের পর মিরাক্কেল গার্ডেন ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ যাত্রা শুরু করা বাগানটি এক বছরের মাথায় গিনেস বুকে রেকর্ড গড়ল বিশ্বের সর্ব বৃহৎ ও প্রাচীরওয়ালা ফুলের বাগান হিসেবে। দুবাই ল্যান্ডের পাশেই মিরাক্কেল গার্ডেন। দুবাই থেকে জাবেল আলী রোডের আল বারসার দক্ষিণে এর অবস্থান। মিরাক্কেল গার্ডেনের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যমতে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে এ বাগান। প্রবেশ ফি ২০ দেরহাম। বাচ্চাদের জন্য ফ্রি। স্থানীয় আরবীরা পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসেন এখানে, সে সঙ্গে ইউরোপীয় পর্যটকরাও। মূল ফটকের বাঁ পাশে রয়েছে ৩টি ফুলের ময়ূর পাখি। সবকিছু ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে এখানে। প্রত্যেকটি ফুলের আয়োজনের কাছে রয়েছে সিকিউরিটি কর্মী। ওয়েবসাইটে যেমন দেখেছিলাম তার চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় ফুলের কারুকাজ। চারদিকে নানামুখী ও নানা রঙের ফুল মুগ্ধ করবে। সেই সঙ্গে রয়েছে পর্যটকদের জন্য ফ্রি টয়লেট ও হাল্কা খাবারের আয়োজন। এ বাগানে রয়েছে একটি ফটো স্টুডিও। কোথাও উঁচু আবার কোথাও নিচু আবার কোথায় ফুলের নদীর মতো করে সাজানো হয়েছে বাগানটি। ৪৫ বিলিয়ন ফুলের সমাহার দিয়ে যাত্রা শুরু মিরাক্কেল গার্ডেনের। নানা রঙের নানা প্রজাতির ফুল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নানা ধরনের আকৃতি। রয়েছে ফুলের তৈরি পুরনো নানা মডেলের গাড়ি, ফুলের জাহাজ, ফুলের বিছানা, ফুলের পাহাড়, ফুলের ঘোড়ার গাড়ি, ফুলের বাড়ি, ফুলের ঘর, ফুলের সাগর, ফুলের দোলনা। এ বাগানে কৃত্রিম বাক্সে রাখা হয়েছে নানা ধরনের পাখিও। এসব পাখির কিচিরমিচির মনে আনন্দ যোগায়। বাগানের এক পাশে রাখা হয়েছে নানা প্রাণীও। তৈরি করা হয়েছে নানা রঙের ছাতা দিয়ে একটি তোরণ। রয়েছে ‘লাভ’ আকৃতির একাধিক তোরণ। তবে বাগানের মাঝে আরবীদের দেশপ্রেম ফুটে উঠেছে। এ দেশের জাতীয় পাখির ছবি দিয়ে বিশাল আকৃতির শিল্পকর্ম পর্যটকদের নজর কাড়ে। রয়েছে ফুলের ঝর্ণাধারাও। কলস দিয়ে ফুলের পানি পড়ছে এমনটি চোখে পড়বে সবার। আরব আমিরাতের রাজধানীর আল আইনের একটি কৃষি কোম্পানি পুরো বাগানের নকশার কাজ করেছে। আবদেল নাসের আল হামাদ নামের গার্ডেনিং কোম্পানি এ বাগানটিকে অলৌকিক রূপ দিয়েছে। বাগানটির রাস্তা ৪ কিলোমিটার। ৭২ হাজার স্কয়ার মিটারের এ বাগানে ৪৫ মিলিয়ন প্রজাতির ফুল রয়েছে। গরমের সময় বাগানটি মে থেকে সেপ্টেম্বরে বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। দিনের বেলায় বাগানটি মনের যেমন খোরাক যোগায় রাতেও সব ফুলে নানা মিউজিক ও লাইটিং আরও সুন্দর করে তোলে। দুবাই শহরের দেরা থেকে ট্যাক্সি নিয়ে জাবেল আলী রোড ও আমিরাত রোড হয়ে ১ ঘণ্টা পথ চললেই রাস্তার পাশে চোখে পড়বে দুবাই ল্যান্ড। দুবাই ল্যান্ডের ঠিক পেছনে রয়েছে এ বাগানটি। বাগানের পাশে রয়েছে ফ্রি গাড়ি পার্কিং এবং সিকিউরিটির সঙ্গে রয়েছে প্রতি ঘণ্টায় ১০ দেরহামে গাড়ি পার্কিং। জেবল হাফিত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সর্বোচ্চ পাহাড় জেবল হাফিতের পাদদেশে অবস্থিত গ্রীন মোবাজারা পার্ক। জেবল হাফিত আমিরাতের গ্রীন সিটি আল আইনের উপকণ্ঠে অবস্থিত। ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ, চার কিলোমিটার প্রস্থ এবং ১৩০০ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট পাহাড়টি সর্পিল এঁকেবেঁকে চলে গেছে ১৫-২০ কিলোমিটার ঢালু রাস্তা পেরিয়ে। এর চূড়ায় উঠতে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এখানে আসেন। জেবল হাফিতের আঁকাবাঁকা রাস্তাটি বড়ই মনোরম। তিন লেনের এ রাস্তায় দুই লেন ওপরে ওঠার এক লেন নিচে নামার জন্য। পাহাড়ের চূড়া এবং ঢালু রাস্তার দুই পাশে জরুরী প্রয়োজনে গাড়ি থামানোর জন্য রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। ফলে রাতের বেলায়ও গাড়ি চালালে মনে হয় না গাড়ির হেড লাইটের প্রয়োজন রয়েছে। আর কিছুদূর পর পর রয়েছে গাড়ি পার্কিং এবং পর্যটকদের বসার ব্যবস্থা। গাড়ি পার্ক করে পর্যটকরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্যই এসব আয়োজন। জেবল হাফিতের চূড়া থেকে গোটা গ্রীন সিটি আল আইনকে কুয়াশার চাদরে ঢাকা মনে হয়। দুবাই-আবুধাবি হাইওয়ে হয়ে আল আইনের দিকে আসার সময় চূড়াটি অনেক দূর থেকেও দেখা যায়। রাতে দূর থেকে জেবল হাফিতের আঁকাবাঁকা রাস্তার হাই ভোল্টেজের বাতিগুলোকে দেখে মনে হয় সাপের মতো শরীরী কাঠামোয় আলোর রেখা আকাশের দিকে উঠে গেছে। পাহাড়ের পাদদেশে যেমন আছে গ্রীন মোবাজারা পার্ক তেমনি এর সর্বোচ্চ চূড়ায় রয়েছে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কাফেটেরিয়া, সরকারি বিনোদন কেন্দ্র আর বিলাসবহুল অট্টালিকা। বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে আসেন। পর্যটকরা এখানে আসেন ঝরনার গরম পানিতে গোসল করতে, কেউবা পিকনিক করতে, কেউ আসেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। এখানকার রাতের অপরূপ সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসুদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেয়। চলবে...
×