ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবেশ দূষণরোধে সঙ্কর প্রজাতির ঝিনুক!

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ২৯ জুন ২০১৮

পরিবেশ দূষণরোধে সঙ্কর প্রজাতির ঝিনুক!

ফ্রান্সের মতো দেশে ঝিনুকের চাষ করা হয়। নানা ধরনের ভাইরাস ও জীবাণু ছাড়া পরিবেশ দূষণের ফলেও নাজুক প্রাণীগুলোর অস্তিত্বের সঙ্কট দেখা দিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিজ্ঞানী ও স্থানীয় ঝিনুকচাষীরা মিলে যার সমাধান করার চেষ্টা করছেন। দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের ঝিনুকচাষিরা তাঁদের জীবিকার ব্যাপারে শঙ্কিত। ঝিনুক কীসে মরে, তা নির্ধারণ করার চেষ্টা করছেন একটি ইউরোপীয় গবেষণা প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা। ঝিনুকচাষী জেরাল ভিও জানালেন, ‘ঝিনুকচাষের গোটা পর্বটা চলে তিন-চার বছর ধরে। প্রথম বছরে ঝিনুকগুলো খুব কাঁচা থাকায় তাদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মারা যায়। দ্বিতীয় বছরে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ঝিনুক প্রাণ হারায়Ñ তৃতীয় বছরে আবার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। ফসল তোলার সময় আমরা প্রতি দশটি ঝিনুকের মধ্যে একটিকে বিক্রি করতে পারি।’ এসব পরীক্ষাগারে বিজ্ঞানীরা একটি ভাইরাস, তিনটি ব্যাকটেরিয়া ও একটি প্যারাসাইট নিয়ে কাজ করছেন। তারা বোঝার চেষ্টা করেছেন, ঝিনুকদের উপর এই সব জীবাণুর কী প্রভাব পড়ে। তারা বলেন যে, ঝিনুকের মতো নাজুক প্রাণীদের সুরক্ষিত করা আদৌ সহজ কাজ নয়। ঝিনুক প্রকল্পের সমন্বয়কারী ত্রিস্ত রেনো বললেন, ‘শক্ত খোলসওয়ালা কম্বোজীয় প্রাণী বা মেরুদ-বিহীন প্রাণীর ক্ষেত্রে টিকা দেয়া সম্ভব নয়। টিকার মাধ্যমে মানুষ অথবা গৃহপালিত জীবের শরীরে যে ‘এ্যান্টিবডি’-গুলি সঞ্জীবিত হয়, কম্বোজদের দেহে তা অনুপস্থিত।’ কিছু কিছু সম্ভাব্য সমাধান পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। সবচেয়ে আশাজনক সমাধান সম্ভবত বাছাই ও সঙ্কর প্রজাতি সৃষ্টি বলে গবেষকদের ধারণা। রেনো বললেন, ‘ঝিনুকদের মধ্যে কিছু কিছু ঝিনুক বেশি শক্তপোক্ত হতে পারে, ভাইরাল ইনফেকশন থেকে নিজেদের আরও ভালভাবে রক্ষা করতে পারে। কাজেই আমরা হয়ত ভবিষ্যতে এই কড়া ধাতের ঝিনুকগুলোকে মিলিয়ে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা সম্পন্ন ঝিনুকের চাষ করতে পারব। এ ধরণের সঙ্কর প্রজাতির ঝিনুক পরিবেশ দূষণরোধেও ভূমিকা রাখতে পারবে। গরু-মহিষ মাঠে-ঘাটে চরে খায়। এমন একটি মুক্ত পরিবেশে ঝিনুকের চাষ করা হয়, যেখানে সাগরের পানির তাপমাত্রা, লবণাক্ততা বা অম্লতা থেকে শুরু করে দূষণের মতো বিভিন্ন পরিবেশগত উপাদানের খেয়াল রাখতে হয়। ঝিনুকচাষি জঁ-পোল লোপেস বললেন, ‘ভাইরাস লাগতে পারে, আবার পরিবেশ দূষণও রয়েছে। নাইট্রেট, কীটনাশক অথবা জৈব সার, শেষমেষ সবকিছু সাগরে গিয়ে পড়ে। এছাড়া ময়লা পানি পরিশোধনের কারখানাগুলোও সবসময় নির্দিষ্ট মান মেনে চলে না।’ রেনো যোগ করলেন, ‘ঝিনুকরা মুক্ত প্রকৃতিতে বড় হয়। এখানে যেমন আমরা দেখছি, বারোটি কীটনাশক মিলে কীভাবে আরও শক্তিশালী একটি বিষ সৃষ্টি করে, যার আক্রমণ ঝিনুকদের পক্ষে আরও মারাত্মক হয়ে ওঠে।’ ঝিনুকচাষী জেরাল ভিও বললেন, ‘আমাদের মতো ঝিনুকচাষীদের কল্যাণে পরিবেশ, পানি ও পলিমাটির মান নিয়ে আরও বেশি গবেষণা হওয়া উচিত। গোটা পরিবেশ প্রণালীটা কীভাবে আরও ভালভাবে চালানো যায়, আমাদের সেটা জানা দরকার।’ সূত্র : বিবিসি
×