ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এনামুল হক

ডলফিনের কণ্ঠস্বরই নিজের নাম পরিচয়

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ২৯ জুন ২০১৮

ডলফিনের কণ্ঠস্বরই নিজের নাম পরিচয়

ডলফিন সমাজে এমন ঘটনা বিরল নয় যে পুরুষেরা অন্য পুরুষদের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী জোট রচনা করে এবং কখনও কখনও এমন জোট কয়েক দশক ধরে স্থায়ী হয়। এখন অস্ট্রেলিয়ার শার্ক বে’তে বোটল নোজ ডলফিনদের ওপর ত্রিশ বছরেরও বেশি গবেষণা চালিয়ে গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন যে এই পুরুষরা তাদের দলের অপরাপর পুরুষদের সঙ্গে অভিন্ন কণ্ঠস্বর রক্ষা না করে নিজ নিজ আলাদা কণ্ঠস্বর মাত্রা বজায় রাখে। আর এটাই তাদের নাম হিসেবে কাজ করে। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেফানি কিং বলেন, গবেষণায় আমরা লক্ষ্য করেছি যে পুরুষ বোটলনোস ডলফিনদের মধ্যে যারা পরস্পরের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্ব বা জোট গড়ে তোলে তারা নিজ নিজ কণ্ঠস্বরের লেবেল বা ‘নাম’ বজায় রাখে। এটাই তাদেরকে নিজেদের সোশ্যাল নেটওয়ার্ক বিভিন্ন বন্ধু ও প্রতিপক্ষকে চিনতে সাহায্য করে। কিং বলেন, এই ‘নামগুলোই’ তাদেরকে কে তাদের বন্ধু, কে তাদের বন্ধুর বন্ধু এবং কেই-ই বা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী এমনি নানা ধরনের সম্পর্কের হদিস রাখতে সাহায্য করে। এক নতুন গবেষণায় কিং ও তার সহকর্মীরা বোটলনোস ডলফিনদের বেলায় কণ্ঠস্বরের যোগাযোগ সহযোগিতাসহ জটিল সামাজিক আচরণের সমন্বয় সাধনে কি ভূমিকা পালন করে তা নির্ণয়ে উদ্যোগী হন। বহু বছরের গবেষণা থেকে তিনি ইতোমধ্যেই জেনেছিলেন যে বোটলনোস গোত্রের পুরুষ ডলফিনরা পরস্পরের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতামূলক জোট রচনা করে। গবেষকরা অবশ্য এটা জানতেন না যে এই সম্পর্ক গঠন ও বজায় রাখার জন্য পুরুষরা কিভাবে কণ্ঠস্বরের সঙ্কেতকে কাজে লাগায়। কণ্ঠস্বর সঙ্কেতের ভূমিকা পরীক্ষা করতে গিয়ে তারা পানির নিচে মাইক্রোফোন রেখে ডলফিনদের কণ্ঠস্বর রেকর্ড করেন এবং প্রত্যেক পুরুষের ব্যবহৃত কণ্ঠস্বরের মাত্রা নির্ণয় করেন। তারপর তারা জোটের ভেতরকার এবং বিভিন্ন জোটের মধ্যেকার সেইসব শনাক্তকরণ সঙ্কেতগুলোর সাদৃশ্য পরিমাপ করে দেখার চেষ্টা করেন অধিক শক্তিশালী সামাজিক সম্পর্ক থাকা পুরুষরা সেইসব কণ্ঠস্বর মাত্রা ব্যবহার করে কিনা সেগুলো অধিকতর সমদর্শী। এ প্রসঙ্গে কিং বলেন, ‘আমরা বুঝার চেষ্টা করেছি যে জোটবদ্ধ পুরুষ ডলফিনরা তাদের জোটের সদস্যপদ প্রচারের উপায় হিসেবে একই ধরনের ডাকে একত্রিত হয় কিনা, নাকি তারা নিজ নিজ কণ্ঠস্বরের মাত্রা বজায় রাখে।’ তাদের বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায় যে জোটবদ্ধ পুরুষরা কণ্ঠস্বরের নিজ নিজ মাত্রা বজায় রাখে সেগুলো একটি থেকে অন্যটি সম্পূর্ণ আলাদা। তা থেকে বুঝা যায় যে তাদের এই ডাকগুলো ব্যক্তিগত নামের যে কাজ সেই একই কাজ বা উদ্দেশ্য সাধন করে। এটা অন্যান্য অনেক প্রজাতির ওপর পরিচালিত গবেষণার ফলাফলের বিপরীত। অন্যান্য প্রজাতির ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা ডলফিনেরা সেই নির্দিষ্ট গ্রুপের অন্যান্য ডলফিনের কাছে তারা যে এই গ্রুপেরই সদস্য তা জানিয়ে দেয়ার জন্য অভিন্ন কণ্ঠস্বর ব্যবহার করে এবং সেই অভিন্ন কণ্ঠস্বর শুনে তারা একত্রে মিলিত হয়। অথচ বোটলনোস ডলফিনের পুরুষদের বেলায় এর ঠিক বিপরীতটা ঘটতে দেখা গেছে। প্রত্যেক পুরুষ তার অনন্য স্বতন্ত্র ডাক বজায় রাখে। অথচ তারপরও তারা পরস্পরের সঙ্গে অবিশ্বাস্য রকমের শক্তিশালী বন্ধন গড়ে তুলে। তাই এই জাতের পুরুষ ডলফিনের ক্ষেত্রে অভিন্ন ডাকের তুলনায় ব্যক্তিগত নাম বা নিজ নিজ স্বতন্ত্র ডাক বজায় রাখাটা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
×